1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অকৃতজ্ঞ বিএনপি', শোকার্ত গোলাম আযম পুত্র

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩১ অক্টোবর ২০১৪

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় – এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ তার ওপর জামাত নেতাদের বিচার, সাজা ও ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্যই করেনি!

Aktivisten sammeln sich vor dem Sitz der Nationalistischen Partei BNP in Dhaka
ছবি: DW

বাংলাদেশে জাময়াতের রাজনীতির অধিষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘অবদান' সবার জানা৷ ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে যায় জামায়াত৷ ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়েই ক্ষমতায় ফেরে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট৷ এতে লাভবান হয় জামায়াত৷ সংসদে তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৷ শুধু তাই নয়, তখন দুই ‘আলবদর' নেতা মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মন্ত্রিত্বও দেয় বিএনপি৷

এরপর থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে আছে জামায়াত৷ ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত হয়ে ১৮ দলীয় জোট হলেও বিএনপির প্রধান ভরসা জামায়াতই ছিল৷ বিশেষ করে ৫ই জানুযারির নির্বাচনের আগে যেসব আন্দোলন হয়েছে, সেখানে বিএনপির নামে মাত্র অংশগ্রহণ ছিল, জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাই ছিলেন আন্দোলনের সামনের সারিতে৷

বিএনপি-জামাতের ছাড়াছাড়ি?


যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর এই অপরাধে আটক হন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা৷ বিএনপি বার বার যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তোলো৷ এ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং কথাও বলেন৷ কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, জামায়াত নেতাদের বিচার, সাজা এবং ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই কোনো মন্তব্য করেনি৷ জামায়াতের আদর্শিক গুরু এবং সাবেক আমির গোলাম আযম ৯০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার সময় কারাগারেই মারা যান ২৩শে অক্টোবর৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যুতেও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শোক জানায়নি৷ অংশ নেয়নি তাঁর জানাজায়৷ তবে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আযমের শবযাত্রায় অংশ নেন, অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে৷

সর্বশেষ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড দিয়েছে ট্রাইবুন্যাল গত বুধবার৷ এবারও বিএনপি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ জাময়াতের সর্বোচ্চ ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায়ে বিএনপির এই নিরবতা নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে৷

‘শোকার্ত ছেলের প্রতিক্রিয়া'


বৃহস্পতিবার গোলাম আযমের ছোট, অর্থাৎ চতুর্থ ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমের ফেসবুক ‘স্ট্যাটাস' আরো তীব্র করেছে জামায়াত-বিএনপির সম্পর্কের গতিপথ নিয়ে বিতর্কটিকে৷ তিনি তাঁর ফেসবুক বার্তায় বলেন, ‘‘গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির নীরবতায় পুরো জাতি হতাশ৷ আমি জানি না, কেন তারা এমনটি করল৷ এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি কখনোই ক্ষমতায় যেতে পারত না৷ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং আজীবন আধ্যাত্মিক গুরু গোলাম আযমের মৃত্যুতে দলটির নীরবতা অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য৷ বিএনপির মঙ্গল হবে যদি তারা মনে রাখে যে জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তারা কখনোই আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে না৷ এটা আমার উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ৷ কতই না অকৃতজ্ঞ তারা!''

গোলাম আযমের ছেলের এই মন্তব্য নিয়ে জামায়াত বা বিএনপির কোনো নেতাই সরসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি এখনো৷ উভয়পক্ষের নেতারাই বলছেন এটা ‘পিতৃহারা শোকার্ত ছেলের প্রতিক্রিয়া'৷ এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই৷ গোলাম আযম পুত্র নিজেও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে, তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন৷

প্রেমের গল্পটি সহজ নয়!


তাহলে বিষয়টি কী? এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন কয়েকজন বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা হয়৷ তাঁরা মনে করেন, জাময়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে৷ স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধানতা বিরোধী গোলাম আযম ঢাকা আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে৷ তখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়৷ এরপর তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া এবং ১৯৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য ‘আমির' ঘোষণা সবই একসূত্রে গাঁথা৷ শহিদ জননী জাহনারা ইমামসহ যাঁরা গোলাম আযম বা অন্যান্য স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারে গণআদালত গঠন করেছিলেন, তাঁদের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি করা হয় বিএনপির শাসনামলেই৷ তার পরের ইতিহাস তো আরো পরিষ্কার৷ বিএনপির সঙ্গে জোট বেধে নির্বাচন, মন্ত্রীত্ব বাগানো যা আগেই বলা হয়েছে৷

বিএনপির জামায়াত নির্ভরতা এবং জামায়াতের বিএনপি প্রীতি কোনো সহজ প্রেমের গল্প নয়৷ নয় প্রথম দেখায় ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা৷ বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটির প্রধান চরিত্র আওয়ামী লীগ বিরেধীতা৷ স্বাধীনতার পর জামায়াত রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি হিসেবেই৷ জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ‘সঠিক' দিকটিই বেছে নেন৷ আর স্বাধীনতা বিরোধী এবং আওয়ামী লীগ বিরোধীদের এক জায়গায় নিয়ে আসেন৷

জিয়া পরবর্তী নেতৃত্বে বিএনপি দল হিসেবে কোনো নিজস্ব আদর্শিক চরিত্র দাড় করাতে পারেনি৷ ফলে আন্দোলন সংগ্রামে দলটির নেতা-কর্মীরা লাভ-লোকসানের হিসেব করেছেন সব সময়৷ ফলে আন্দোলনের জন্য দলটিকে নির্ভর করতে হয়েছে জামায়াতের ক্যাডার ভিত্তিক সাংগঠনিক শক্তির ওপর৷ জামাতও বিএনপির সঙ্গে থেকে তার সুবিধা নিয়েছে, শক্তি বিস্তার করেছে, যা পরস্পরকে করেছে নির্ভরশীল৷

নতুন কোনো কৌশল?


৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী সব আন্দোলনে রাজপথে ছিল জামায়াতের নেতা-কর্মীরা৷ বিএনপি শুধু জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেই দায়িত্ব পালন করেছে৷ কিন্তু তাতে উল্টো ফলও হয়৷ আন্দোলনের নামে সহিংসতার দায় বিএনপির কাঁধেও পড়ে, যা একতরফা নির্বাচনের মতোই আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে৷ এর পর থেকে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নেয়৷ কিন্তু তাতে যে মূল সম্পর্কে ভাটা পড়েছে, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি৷


এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়ত নেতাদের শাস্তি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করাকেও একটি কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে৷ কারণ বিএনপি ব্যক্তিগতভাবে জামায়াত নেতাদে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে৷ বিএনপি বিবেচনায় নিয়েছে ভোটার, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের, যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে৷ তাই বিএনপি ‘ধরি মাছ, না ছুই পানি'-র কৌশল নিয়েছে৷ এটা আরো স্পষ্ট বোঝা যায় গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে তাদের অবস্থান থেকে৷ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন তারুণ্যের শক্তির প্রশংসা করে বিএনপি৷ পরে আন্দোলন ম্রিয়মান হলে তীব্র ভাষায় তার সমালোচনা করে তারা, পক্ষ নেয় জামায়াত-হেফাজতের৷

টানাপোড়েন থাকলেও, বিচ্ছেদ হবার নয়


তাহলে জামায়াত দলীয়ভাবে বিএনপির এই নিরবতা কেন মেনে নিচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে আরো একটু পিছনে যেতে হবে৷ তাতে জানা যাবে দল হিসেবে জামায়াতও কৌশলী৷ তারা আওয়ামী লীগে আস্থা না রাখলেও, তাদের কাছ থেকেও সুবিধা নিতে চায়৷ ১৯৯৬ সালে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যুগপত্‍ আন্দোলন করেছে৷ তখন বিএনপি ছিল ক্ষমতায়৷ সেই আন্দোলনে জামায়াতের ভোটের হিসেবে লাভ না হলেও রাজনৈতিক লাভ হয়েছে৷ তারা আওয়ামী লীগকে জামায়াত বিরোধীতার ক্ষেত্রে বিতর্কের জায়গায় ঠেলে দিতে পেরেছে৷ আর এবার তারা দলকে বাঁচাতে চাইছে৷ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াত যাতে বিচারের মুখোমুখি না হয়, সেই চেষ্টা করছে তারা৷ তারা মনে করছে, দলকে বাঁচাতে পারলে বাকিটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে৷ তাই তারাও চায় বিএনপির সঙ্গে লোকদেখানো দূরত্ব৷ সেই ফাঁদে সরকার পা দেয় কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না৷ তবে এরই মধ্যে জামায়তের বিচারে সরকারে অনীহা স্পষ্ট হয়েছে৷ আর বিচার নিয়েও সরকারের নানা গাণিতিক হিসেবের অভিযোগ করছেন অনেকই৷

গোলাম আযম পুত্র বিএনপিকে ‘অকৃতজ্ঞ' বললেও জামায়াত নেতারা বলেননি৷ আর বিএনপি নেতারাও পাত্তা দিচ্ছেন গোলাম আযম পুত্রের কথায়৷ তাহলে প্রকাশ্য কথিত দূরত্ব ভেতরের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলছে না বলেই মনে হয়৷ তবে এতে বিএনপি এবং জামায়াত বিরোধীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন, যেমন অতীতে হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ