আজকের বিশ্বে অনেক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সার্বিক সমাধানসূত্রের খোঁজ চলছে৷ মেক্সিকোর কিছু জেলে মাত্রাতিরিক্ত অক্টোপাস শিকার বন্ধ করে প্রজননের মাধ্যমে বিপুল চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
মেক্সিকোর প্রজননকেন্দ্রে ডিম ফেটে শিগগির মায়া প্রজাতির অক্টোপাসের ছানা বেরিয়ে আসবে৷ ভালো করে লক্ষ্য করলে ক্ষুদ্র কালো বিন্দু চোখে পড়বে৷ সেগুলি আসলে শাবকের ক্ষুদ্র চোখ৷ আরও নতুন ডিমও আসতে চলেছে৷ উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কার্লোস রোসাস ভাস্কেস জানালেন, ‘‘আমাদের এখানে ৩২টি ট্যাংক রয়েছে৷ প্রত্যেকটিতে একটি করে সন্তানসম্ভবা মা থাকে৷ ডিম পাড়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি৷’’
গবেষকরা সমুদ্র থেকে সন্তানসম্ভবা মা অক্টোপাস ধরে আনেন৷ সেগুলির বয়স সবে এক৷ ডিম পাড়ার পরেই মাদি অক্টোপাস মরে যায়৷ প্রাকৃতিক পরিবেশে অথবা প্রজনন কেন্দ্রে ক্ষুধার তাড়নায় এমন দশা হয়৷ তবে জীবনের শেষ পর্যায়ে হলেও অক্টোপাস বন্দি রাখার বিষয়টি বেশ বিতর্কিত৷
এই প্রাণী অত্যন্ত বুদ্ধিমান হওয়ায় সমালোচকরা বন্দিদশার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ কার্লোস রোসার মত অবশ্য ভিন্ন৷ তাঁর মতে, ‘‘চলচ্চিত্র ও অন্যান্য কাহিনির সুবাদে আমরা অক্টোপাসকে মানুষের মতো করে দেখি৷ সেটা একটা সমস্যা বটে৷’’
মেক্সিকোর অক্টোপাস শিকারি জেলেদের কথা
04:04
মেক্সিকোর দক্ষিণে অক্টোপাসের বিষয়ে বাস্তবসম্মত মনোভাব দেখা যায়৷ কারণ গ্রামের অনেক মানুষের কাছে এই প্রাণী একই সঙ্গে উপার্জনের উৎস ও খাদ্য হিসেবে মূল্যবান৷ জেলে পরিবারের সদস্য সিলভিয়া কক বলেন, ‘‘এই ইয়ুকাটান অঞ্চলে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় অক্টোপাস পাওয়া যায়৷’’
সিলভিয়া আজ অক্টোপাস ভাজা পরিবেশন করছেন৷ সঙ্গে মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী পদ এস্কাবেচেও রয়েছে৷ অন্যান্য অঞ্চলে সুশির মধ্যেও অক্টোপাস পরিবেশন করা হয়৷ গোটা বিশ্বে বছরে প্রায় চার লাখ বিশ হাজার টন অক্টোপাস মানুষের পেটে যায়৷ এর চাহিদাও দ্রুত বেড়ে চলেছে৷
আন্টোনিও ও সিলভিয়া কক প্রতিদিন উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে আসেন এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অক্টোপাস প্রজননের কাজে সাহায্য করেন৷ গবেষকরা যখন নিজেদের কাজ ও তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত, তখন আন্টোনিও ও তাঁর স্ত্রী একটি সমবায় গঠন করেছেন৷ বাণিজ্যিক স্তরে অক্টোপাসের প্রজননের পরিসর আরও বাড়ানো তাঁদের লক্ষ্য৷ প্রথমদিকে অবশ্য গ্রামের জেলে পরিবারগুলি মোটেই তেমন উৎসাহ দেখান নি৷ সিলভিয়া বলেন, ‘‘তারা এটাকে পাগলামি ভেবেছিল৷ বলেছিল, তোমরা অযথা সময় নষ্ট করছো৷ তাদের মনে বিশ্বাস ছিল না৷’’
ইতোমধ্যে প্রায় দশটি জেলে পরিবার সমবায়ে শামিল হয়েছে৷ আর্থিক অনুদান কাজে লাগিয়ে তাঁরা সম্প্রতি নিজস্ব স্থাপনা গড়ে তুলতে পেরেছেন৷ ট্যাংকও প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ এবার শুধু কমপ্লেক্স চালু করার জন্য অর্থের প্রয়োজন৷ অক্টোপাস শিকারী হিসেবে আন্টোনিও কক বলেন, ‘‘আরও বড় বাজারের নাগাল পেতে আমরা আমাদের প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে চাই৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিক্রিই হলো উদ্দেশ্য৷ পারলে আগামীকালই আমি নিজের এই স্বপ্ন বাস্তব করতে চাই৷’’
এই প্রকল্প অনেক জেলে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে৷ মাত্রাতিরিক্ত শিকারের ধাক্কা সামলানোর দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রকল্পটি অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও আদর্শ হয়ে উঠতে পারে৷
কাটিয়া ড্যোনে/এসবি
স্কুইড সম্পর্কে ৯টি অজানা তথ্য
আট, দশ বা আরও বেশি হাত, সঙ্গে একটি বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক, সেই সাথে আছে পরিবর্তিত রঙের ছটা আর বিশালাকৃতি হওয়ার ক্ষমতা – এ সব গুণই আছে ‘সেফালোপড’ গোত্রীয় সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে৷ তাই ক্লিক করুন আর বিস্মিত হন!
ছবি: AP
অক্টোপাস – স্মার্ট আর কৌতূহলী
অক্টোপাস পলের কথা মনে আছে? ঐ যে, যে ২০০৮ সালের ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপের সব ফলাফল নির্ভুলভাবে বলে দিয়েছিল? আর এর জন্য জার্মান গণমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিল পল৷ অক্টোপাসদের জনপ্রিয় হওয়ার অবশ্য আরো কারণ আছে৷ এই যেমন, এরা শামুক জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং ইঁদুরের মতো ধূর্ত৷ তাছাড়া খুব তাড়াতাড়ি কোনো কিছু শিখে নিতেও উস্তাদ এরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
চোষণ ক্ষমতা এবং আটটি বাহু
আট হাতের স্কুইডই হলো অক্টোপাস৷ প্রতিটি হাতে আছে অসংখ্য চোষক৷ আর আটটি হাতই সমানভাবে কাজ করে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
মানুষের মতো চোখের লেন্স
মানুষের মতোই এদের চোখের গড়ন৷ আসলে সেফালোপড এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীদের চোখের গড়ন একই রকম৷ তবে এদের চোখের বিশেষত্ব হলো, পানির নীচে দেখার ক্ষমতা৷ এছাড়া অক্টোপাসরা বর্ণান্ধ বা ‘কালার ব্লাইন্ড’৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG, Germany
দ্রুত পরিবর্তনশীল শিল্পী
অক্টোপাসের দেহে কোনো কঙ্কাল বা অস্থি নেই৷ তাই সহজেই নিজেদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে পারে৷ এমনকি বিপদ দেখলে নিজের রং-ও বদলাতে পারে৷ ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে এক ধরনের অক্টোপাস দেখতে পাওয়া যায়, যারা অন্য প্রাণীদের আকার নকল করতে পারে৷ নিজেদের পরিবর্তন করে সাপ, স্টিং রে বা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর আকার ধারণ করতে পারে এরা৷
ছবি: picture alliance/Photoshot/M. Webster
আট না দশভূজা
অক্টোপাস অষ্টভূজ, অর্থাৎ তাদের আটটি হাত আছে৷ আর স্কুইডের আছে ১০টা হাত৷ তবে এদের দু’জনেরই প্রজাতি স্কুইড৷ তাই উভয়ই রং পরিবর্তন করতে পারে৷ এছাড়া হুমকির মুখে পড়লে স্কুইড এক ধরনের রঙিন কালি ছুড়ে মারে, যাতে করে পানিতে রং ছড়িয়ে পড়ে৷ এর ফলেই শিকারিরা তাদের দেখতে পায় না এবং তখন তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG/J. Rotman
অনেক গভীরে এবং উপরে
বিশ্বে ২৫০ প্রজাতির স্কুইড রয়েছে৷ এদের বড় বড় চোখ এবং ১০টি বাহু, যাদের মধ্যে আটটি ছোট এবং দু’টি লম্বা৷ লম্বা হাত দিয়ে তারা শিকার ধরে আর ছোট হাত দিয়ে শিকার মুখে দেয়৷ কিছু কিছু প্রজাতির স্কুইড সমুদ্রের অনেক গভীরে থাকে আর কয়েকটি থাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের ঠিক নীচে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Goethel
কোনো কোনো সময় বিশাল আকৃতির
হাত ছাড়াই জায়ান্ট স্কুইড কয়েক ফিট লম্বা হতে পারে৷ আর হাতসহ এদের কোনো কোনোটির আকার ২০ মিটার পর্যন্ত৷ স্কুইডগুলো সাধারণত পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচে৷
ছবি: picture alliance/AP
‘আসল’ স্কুইড
কাটেল ফিস – এটিও এক ধরনের স্কুইড, যাকে আসল স্কুইড বলা হয়৷ ১০টি হাত আছে এই স্কুইডের৷ আর একটি শক্ত খোলস আছে, যা দেহের আকৃতি ঠিক করে৷ এরা মাটির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে, মাটি খুঁড়তে পারে দ্রুত এবং নিজেদের রং-ও পরিবর্তন করতে পারে৷
এই স্কুইডটির ১০০ টিরও বেশি কর্ষিকা আছে, যা মুখ খোলার কাজে ব্যবহার হয়৷ নটিলাস নামের এই স্কুইডটি কালি ছুড়তে না পারলেও রং বদলাতে পারে৷ তবে সে করার তাদের বিশেষ দরকার হয় না, কেননা শক্ত খোলস যে কোনো ধরনের হামলা থেকে রক্ষা করে তাদের৷