অক্টোবরফেস্টে গত বছরের তুলনায় এবার বিয়ার পানের পরিমাণ কমেছে৷ তবে এবারও মেলায় প্রায় ৬৫ লাখ দর্শনার্থী হাজির হয়েছিলেন৷ রবিবার শেষ হওয়া জার্মানির ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গাড়িচালক লাইসেন্স হারিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিশ্বখ্যাত বিয়ার পানের উৎসব অক্টোবরফেস্ট রবিবার শেষ হয়েছে৷ পুলিশ বলছে, এবারের উৎসব শান্তভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে৷ অর্থাৎ, শাস্তিযোগ্য অপরাধ আগের তুলনায় কম ছিল৷
ষোলদিনব্যাপী উৎসবে পুলিশ ডাকার ঘটনা অবশ্য আগের তুলনায় বেড়েছে৷ তবে সেটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে কর্তৃপক্ষ, কেননা, অনেকক্ষত্রে আগেভাবে পুলিশ আসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারেনি৷
তবে চলতি বছর সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন গাড়ি চালকরা৷ জার্মানিতে মাসকয়েক আগে চালু হওয়া দুই চাকার ই-স্কুটার চালাতে গিয়ে অনেকে লাইসেন্স হারিয়েছেন, কারণ, তারা তখন মাতাল ছিলেন৷ জার্মানিতে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ পুলিশ জানিয়েছে, মোট ৪১৪ জনকে মদ্যপ অবস্থায় ই-স্কুটার চালানোর সময় ধরা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ২৫৪ জনের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা হয়েছে৷
মিউনিখ পুলিশ জানিয়েছে যে, অনেকে স্কুটারকে একটি লাইফস্টাইল পণ্য বা খেলনা হিসেবে বিবেচনা করেছেন, এবং সেই অনুযায়ী সেটিকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন৷
‘অক্টোবরফেস্ট’-এ নজর কাড়বেন যেভাবে
অক্টোবরফেস্ট এখন এক বৈশ্বিক উৎসব৷ তবে মূল আয়জনটা হয় জার্মানির মিউনিখে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসবের রয়েছে বিশেষ পোশাক, রীতিনীতি৷ চলুন এই উৎসবে নজর কাড়ার কিছু উপায় জেনে নেই৷
ছবি: dapd
ঐতিহ্যবাহী পোশাক
‘ড্রিন্ডেল’ এবং ‘লেডারহোসে’ জার্মান পোশাক হিসেবে গোটা বিশ্বেই পরিচিত৷ তবে অক্টোবরফেস্টে শুধু জার্মানরাই তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে না৷ ছবির এই দলটিতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স এবং চেক প্রজাতন্ত্রের নাগরিকরা৷ তবে পোশাকে তাঁরা জার্মানই বটে!
ছবি: DW/I. Moog
পুরনো স্টাইলে ফেরা
কয়েক বছর আগে কাউকে ড্রিন্ডেল পরতে দেখলে বাকিরা ভ্রুকুটি করতেন৷ এখন আবার ড্রিন্ডেল গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে অক্টোবরফেস্ট চলাকালে বিভিন্ন রং, সুতার এবং স্টাইলের ড্রিন্ডেল সব জায়গায় কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: cc - Florian Schott
ক্ল্যাসিক সংস্করণ
আপনি ঐতিহ্যবাহী, আধুনিক কিংবা কালো রংয়ের ড্রিন্ডেল কিনতে পারেন৷ তবে এগুলোর সঙ্গে মানানসই রঙিন ‘অ্যাপ্রন’ বেছে নিতে হবে৷ আর তখনই পোশাকটি পূর্ণতা পায়৷
ছবি: Getty Images
খরচ আছে
ড্রিন্ডেল যে শুধু দেখতে সুন্দর তা নয়, দামিও৷ মোটামুটি মানের একটি ড্রিন্ডেল কিনতে খরচ হয় ৮০ থেকে ১০০ ইউরো৷ চাইলে আরো দামি পোশাকও কিনতে পারেন৷ এমনকি সিল্কের এবং আসল ‘সোয়ারভস্কি’ পাথর দিয়ে সাজানো ড্রিন্ডেলও রয়েছে৷ তবে সেগুলোর দাম এক লাখ ইউরোর মতো৷
ছবি: Getty Images
আফ্রিকান ড্রিন্ডেল
এই পোশাক জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হতে পারে৷ তবে ডিজাইনাররা এটির একটি আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ মিউনিখের ‘নো নি’ কোম্পানি ছবির এ সব ড্রিন্ডেলে ব্যবহার করেছেন আফ্রিকার কাপড়৷
ছবি: Dirndl à l´Africaine
দৃষ্টি আকর্ষক
ড্রিন্ডেল বাছাইয়ের পর এর সঙ্গে মানানসই অন্তর্বাস ঠিক করতে হবে আপনার৷ অক্টোবরফেস্টের মৌসুমে বিভিন্ন দোকানে ড্রিন্ডেলের সঙ্গে পরার বিশেষ অন্তর্বাস পাওয়া যায়৷ ড্রিন্ডেল কার্যত যে কারণে বিখ্যাত, সেটা ফুটিয়ে তুলতে এ সব অন্তর্বাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: dapd
এটাও কি দরকার?
শুধু পোশাক নয়, অক্টোবরফেস্টের সাজে সাজতে চাইলে এর সঙ্গে মানানসই অনুসঙ্গও জরুরি৷ যেমন এই কানের দুলটি দেখুন৷ বিখ্যাত হৃদয়াকৃতির ‘জিঞ্জারব্রেড’-এর আদলে তৈরি এই রিং অনেকেই পরেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Leonhardt
মোবাইল জিঞ্জারব্রেড
নিজে এত সুন্দর করে সাজবেন আর সঙ্গের মোবাইলটিকে নগ্ন রাখবেন – তা কি হয়? বরং মোবাইলের জন্য বেছে নিতে পারেন জিঞ্জারব্রেড পোশাক৷ তবে অক্টোবর ফেস্টে মোবাইল ব্যবহার খুব একটা সহজ নয়৷ অনেক মানুষের ভিড়ের কারণে সেখানে সহজে ‘সিগনাল’ পাওয়া যায় না৷
ছবি: Prag Agency
চর্চাটা আগেভাগেই শুরু হোক
এমনকি অক্টোবরফেস্টের সবচেয়ে কম বয়সি দর্শনার্থীও পোশাক সম্পর্কে সচেতন৷ ছবির ছেলেটি ঐতিহ্যবাহী পোশাকের প্যারেডে অংশ নিয়েছে, যা অক্টোবর ফেস্টের একটি অংশ৷ প্রতিবছর গড়ে ৬০ লাখ মানুষ মিউনিখের এই উৎসবে হাজির হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
পোশাক নিয়ে তো অনেক কথাই হলো৷ অক্টোবরফেস্টে যে কারণে যাবেন, সেটার কথা আবার ভুলে যাবেন না যেন৷ সেটা হলো ‘বিয়ার’৷ মিউনিখের অক্টোবরফেস্টে গিয়ে ‘ওয়েট্রেসকে’ সংক্ষেপে ‘কোল্ড লাইট ওয়ান’ বললেই তিনি বুঝে যাবেন যে, আপনি কী চাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
আদতে ই-স্কুটার কোনো খেলনা নয়৷ বরং পুলিশ সেটিকে একটি বাহন হিসেবেই বিবেচনা করছে৷ ফলে মদ্যপ অবস্থায় সেটি চালানোকেও অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে৷
শুধু ই-স্কুটারই নয়, মদ্যপ অবস্থায় সাধারণ গাড়ি চালানোর সময়ও বেশ কয়েকজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ৷ তাদের মধ্যে ২১৫ জনের লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে৷
এবছর অবশ্য গতবারের তুলনায় বিয়ার বিক্রি কম হয়েছে৷ কমেছে পকেটমারের ঘটনাও৷ পুলিশ মনে করছে, উৎসবস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় চুরির মতো অপরাধ আগের চেয়ে কমে গেছে৷ এছাড়া যৌন হয়রানির ঘটনাও বেশি প্রকট আকার ধারণ করতে পারেনি ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকের পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে৷
‘অক্টোবরফেস্ট’-এ দারুণ সব খাবার
জার্মানির দক্ষিণে অবস্থিত মিউনিখ শহরে শুরু হয়েছে ‘অক্টোবরফেস্ট’৷ এ উৎসবের কথা বললে সবাই ধরে নেন, এ শুধু বিয়ার পানের আয়োজ৷ আসলে কিন্তু তা নয়৷ বিয়ারের পাশাপাশি অনেক খাবারও থাকে সেখানে৷ দেখে নিন সেগুলো কী...
ছবি: dpa
মচমচে ‘ব্রেৎসেল’
অক্টোবরফেস্ট বা অক্টোবর উৎসব উদযাপনে মচমচে, নোনতা স্বাদের এক ধরণের রুটি সবসময়ই থাকে৷ এর জার্মান নাম, ‘ব্রেৎসেল’৷ বিয়ার, সসেজ আর সরষের চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করা হয় বাভারিয়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই খাবার৷
ছবি: PhotoSG/Fotolia
‘ভাইসভুর্স্ট’
সাদা রংয়ের এই সসেজগুলোর জার্মান নাম, ‘ভাইসভুর্স্ট’৷ ‘ভাইস’ মানে সাদা আর ‘ভুর্স্ট’-এর অর্থ ‘সসেজ’৷ আসলে মাংসের কিমা সেদ্ধ করার পর এমন সাদা হয়ে যায়৷ এ খাবার যে কোনো সময় খাওয়া যায় না৷ বাভারিয়ানরা ‘ভাইসভুর্স্ট’ খান শুধু সকালে৷
ছবি: Fotolia
নানা রকমের সসেজ
অক্টোবরফেস্টে থাকে হরেক রকমের সসেজ৷ সঙ্গে খাওয়ার জন্য থাকে বিভিন্ন আকার ও স্বাদের রুটি৷ এ সময় জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের শহর মিউনিখে গেলে বকভুর্স্ট, ব্রাটভুর্স্ট, কারিভুর্স্ট, ফ্রাংকফুর্টার ভুর্স্ট বা নকভুর্স্ট-এর মধ্যে একটা অন্তত চেখে দেখার সুযোগ কি কেউ ছাড়ে?
ছবি: Getty Images/K. Angerer
‘অক্টোবরফেস্টের ষাঁড়’
এ উৎসবের আরেক আকর্ষণ আস্ত ষাঁড়ের ‘রোস্ট’৷ তাঁবুর সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয় আগুনে ঝলসানো ষাঁড়ের দেহ৷ ১১৩ বছর ধরে এই খাবার বাভারিয়ানদের ঐতিহ্যের অংশ৷ সবজি, রেড ওয়াইন সস বা আলুর সঙ্গে খুব মজা করে খাওয়া হয় এই মাংস৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একটা শোয়াইনহেক্সে দেবেন, প্লিজ!
অক্টোবরফেস্টে গিয়ে অনেকেই এই অনুরোধটা করেন৷ ধর্মীয় বা অন্য কোনো কারণে যাঁরা শূকরের মাংস খান না, তাঁদের কথা আলাদা৷ তবে যাঁরা এই ‘শোয়াইনহেক্সে’ খান, তাঁদের কাছে কিন্তু লবণ বা ভিনেগার মাখানো এই ঝলসানো শূকরের মাংস খুবই পছন্দের৷
ছবি: Mike-Fotografie - Fotolia.com
সামুদ্রিক খাবার
সসেজ পছন্দ করেন না? কোনো সমস্যা নেই৷ অক্টোবরফেস্টে আপনার জন্য আছে নানা ধরণের সামুদ্রিক খাবার৷ চিংড়িসহ অনেক রকমের মাছ তো আছেই, ছোট-বড় কাঁকড়ার অনেক রকমের রেসিপিও থাকে সেখানে৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
‘ভাইসেন হেন্ড্ল’
মুরগির মাংসের এক ধরনের জার্মান রেসিপি এটি৷ সত্যি কথা বলতে কি, এ মাংস বেশ সুস্বাদুও বটে! আর চেহারার কথা বললে ‘শোয়াইনহেক্সে’-এর তুলনায় ‘ভাইসেন হেন্ড্ল’ কমই বা কিসে?
ছবি: DW/Shant Shahrigian
পনির
পনির, মানে জার্মান ‘চিজ’ ছাড়াও কিন্তু অক্টোবরফেস্ট হয় না৷ এখানে যেসব পনির পাওয়া যায়, তার মধ্যে ‘রাকলেট’ নামের এই ‘ডিশ’-টি খুবই জনপ্রিয়৷ রুটি বা আলুর ওপর গরম পনির, সঙ্গে মরিচ আর মিষ্টি পিঁয়াজ – এমন খাবার ভালো না লেগে পারে!
ছবি: Fotolia
আদার কেক
আদা দিয়ে তৈরি এই কেকগুলো দেখতে এমনই হয়৷ ‘হার্ট’ বা হৃদয়ের আকারের এই কেকে লেখা থাকে, ‘ইশ লিবে ডিশ’, অর্থাৎ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ কথ্য ভাষায়, ‘ই মগ ডি’ (ইশ মাগ ডিশ), অর্থাৎ ‘আমি তোমাকে পছন্দ করি’ – এ বার্তাও লেখা থাকে অনেক কেকে৷
ছবি: Bauer Alex/Fotolia
বড় বড় নুডলস!
বাভারিয়া অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার নুডলস৷ সাধারণ নুডলসের চেয়ে অনেক বড় আকারের এই নুডলস রুটি বা শবজি দিয়ে খেতে হয়৷ অনেক সময় নডুলসের ভেতর পালং শাক, মাংস অথবা নানা রকম মশলা পুর হিসেবে দিয়ে ‘ডাম্পলিং’ বা ‘মোমো’ বানিয়েও খান জার্মানরা৷