এবোলার ফ্রান্সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ৷ মহামারির প্রসার ও বিমান চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷ বিমান চলাচল সীমিত করলে সম্ভাবনা কমে দাঁড়াবে ২৫ ও ১৫ শতাংশে৷
বিজ্ঞাপন
বিমান চলাচল কমা মানে ৮০ শতাংশ কমা – অর্থাৎ আফ্রিকার এবোলা বা ইবোলা পীড়িত দেশগুলি থেকে ইউরোপ অভিমুখে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল হ্রাস করা, যা এখনো পর্যন্ত করা হয়নি, যদিও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটস কিছু কিছু উড়াল বন্ধ রেখেছে৷ সব সত্ত্বেও এবোলা ভাইরাসে যেভাবে আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পেরেছে, ঠিক সেভাবেই ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে এবোলা ইউরোপের মাটি ছোঁবে, বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা৷
বেলজিয়ামেও এবোলা ভাইরাস পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ, স্পেন বা সুইজারল্যান্ডের ক্ষেত্রে যা ১৪ শতাংশের বেশি নয়৷ এ সবই তথ্য এবং বিশ্লেষণ ভিত্তিক পরিসংখ্যান: এবোলা ইউরোপের কোন দেশে পৌঁছাবে, সেটা কোনো ভাগ্যের খেলা নয়; যেমন এবোলা ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এই মহামারী শুধু আফ্রিকার সমস্যা নয়৷ তবে ইউরোপের কোন দেশের ঝুঁকি কতটা, তা নির্ভর করবে আফ্রিকার সংশ্লিষ্ট এলাকার সঙ্গে সেই দেশের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং – এক কথায় – সাবেক ঔপনিবেশিক যোগসূত্রের উপর: ফ্রান্স যে কারণে ব্রিটেনের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে৷ অপরদিকে ব্রিটেনের ঝুঁকি মূলত একটি কারণে: হিথরো হলো ইউরোপ অভিমুখে এবং ইউরোপ থেকে বিমানযাত্রার একটি ‘হাব' অথবা কেন্দ্রবিন্দু৷
ঝুঁকি বদলাচ্ছে প্রতিদিন
গিনি, সিয়েরা লিওনে এবং লাইবেরিয়া – তিনটি দেশেই ফরাসি ভাষাভাষী মানুষ আছেন, যেমন আছে ফ্রান্সের সঙ্গে পর্যাপ্ত বিমান যোগাযোগ৷ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের সংযোগ কম হতে পারে৷ আবার আফ্রিকার দেশগুলিতেও এবোলার প্রকোপ সব দেশে এক নয়৷ এছাড়া সামগ্রিক ঝুঁকিও প্রতিদিন বদলাচ্ছে – যে কারণে ইন্টারনেটে নিয়মিত আপডেটের প্রয়োজন পড়েছে৷ সর্বাধুনিক ভবিষ্যদ্বাণী পয়লা অক্টোবর তারিখে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে৷ এ-ও বলা দরকার যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন বা ডাব্লিউএইচও কিন্তু এবোলা পীড়িত দেশগুলিতে যাত্রা সীমিত করেনি, বরং বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকে সেই সব দেশে উড়াল অব্যাহত রাখার উৎসাহ দিয়েছে৷
সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
8 ছবি1 | 8
ফ্রান্স ও ব্রিটেন, উভয় দেশই এ যাবৎ একজন করে নাগরিককে এবোলা রোগে আক্রান্ত হবার পর বিমানযোগে স্বদেশে নিয়ে এসেছে এবং চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেছে৷ সমীক্ষায় এই ধরনের ইচ্ছাকৃত স্থানান্তরণের কথা বলা হয়নি৷ একদিকে যেমন এবোলা রোগ শেষ পর্যায়েই সবচেয়ে সংক্রামক, তেমন আবার এবোলা রোগের লক্ষণ ধরা পড়তে ২১ দিন অবধি সময় লেগে যেতে পারে৷ অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মানুষেরা জানতেও পারবেন না যে, তাঁরা এবোলা রোগে আক্রান্ত – এবং সেই অনুযায়ী ইউরোপ জুড়ে যথেচ্ছ ভ্রমণ করতে পারবেন৷
তবে ইউরোপ মহাদেশে এবোলার মহামারির আকার ধারণ করার সম্ভাবনা কম৷ সমৃদ্ধ ইউরোপে স্বাস্থ্যজনিত ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি উন্নত এবং ঘিঞ্জি জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলে৷ সময়মতো পদক্ষেপ নিলে যে এবোলার বিস্তার রোধ করা সম্ভব, সেটা নাইজেরিয়াই প্রমাণ করেছে: সেখানে এবোলাকে বিশটি ঘটনা ও দশজন রোগীর মৃত্যুতে সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে – আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নাইজেরিয়াকে নাকি এবোলা-মুক্ত বলেও ঘোষণা করা হতে পারে৷