কোভিশিল্ডের একটি ডোজ নিলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা দুই তৃতীয়াংশ কমে যায়। দাবি যুক্তরাজ্যের গবেষকদের।
বিজ্ঞাপন
নতুন একটি সমীক্ষা বলছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এক ডোজ নিলেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়। শুধু যে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায় তাই নয়, ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। আর প্রথম ডোজ নেয়ার প্রায় ১২ সপ্তাহ পরেও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা বলছে, যাঁরা কোভিশিল্ড নিয়েছেন, তাঁরা করোনার হাত থেকে বাঁচছেন। সাধারণত ভ্যাকসিন নেয়ার পর অনেক সময় তাঁরা অন্যদের কাছে ভাইরাস ছড়ানোর কাজটা করতে পারেন। কিন্তু কোভিশিল্ড নিলে শুধু যে তিনি সুরক্ষিত থাকছেন তাই নয়, তাঁর কাছ থেকে অন্য মানুষের কাছে ভাইরাস যাওয়ার সম্ভাবনাও দুই তৃতীয়াংশ কমে যাচ্ছে। এক ডোজ ভ্যাকসিন নিলে করোনার হাত থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁরা গুরুতর অসুস্থও হবেন না বলে গবেষকদের দাবি।
৭৬ শতাংশ সুরক্ষা
এক ডোজ ভ্যাকসিন নিলে দুই মাসের জন্য ৭৬ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে তাঁদের গবেষণার রিপোর্ট হলো, একবার ভ্যাকসিন নিলে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত তার সুফল পাওয়া যাবে।
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী সেটি নিয়ে এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
সাধারণ প্রতিক্রিয়া
যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে৷ যেমন, শরীরে ইনজেকশন দেয়ার স্থানটি লাল হয় বা ফুলে যায়৷ তিনদিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা হতে পারে৷ তবে এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়৷ শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক৷ অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mark Lenninhan/AFP/Getty Images
গুরুতর প্রতিক্রিয়া
বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ যেমন, যুক্তরাজ্যে টিকা কর্মসূচি চালুর পর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইজনের অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে সতর্ক করেছে৷ তবে সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণেই করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
টিকার উপাদান
সাধারণত টিকায় দুর্বল বা মৃত ভাইরাস থাকে৷ যার মাধ্যমে শরীর সেই ভাইরাসের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ তবে করোনার টিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রথমবারের মতো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এতে কোন ভাইরাস থাকে না৷ তার বদলে কোভিড-১৯ এর জীবাণুর ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিরূপ থাকে৷ তাই দুই ধরনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুই রকম হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
বায়োনটেক-ফাইজার
অনুমোদন পর্যায়ে বায়োনটেক-ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতা সাময়িক অবসাদ আর মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন৷ এমআরএনএ ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে একজন ও ব্রিটিনে দুইজনের ত্বক লাল হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বিট্রিশ মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
মডার্না
বায়োনটেক-ফাইজারের মতোই এমআরএনএ ভিত্তিক মডার্নার টিকাটি৷ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকাগ্রহীতাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি৷ হালকা যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে সেগুলো ছিল সাময়িক৷ তবে ১০ শতাংশ অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক প্যানেল৷ অল্প কয়েকজন রোগী অ্যালার্জি ও মুখের স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগেছেন৷ তবে কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: Dado Ruvic/Reuters
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে একজন মেরুদণ্ডের প্রদাহে ভুগেছেন৷ সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার পর কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ ছিল৷ কিন্তু পরে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরীক্ষার পর জানিয়েছে সেটির কারণ ভ্যাকসিন নয়৷ এছাড়া টিকাটি নেয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ও পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যাথা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলক কম ছিল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Porzycki
স্পুটনিক ফাইভ
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরুর আগে গত আগস্টেই নিজেদের টিকা স্পুটনিক ফাইভ এর অনুমোদন দেয় রাশিয়া৷ দুই ধরনের পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে এতে৷ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জ্বর, মাথাব্যাথার মতো টিকাটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ তবে কোন গুরুতর প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত যত তথ্য জানা গেছে সেগুলোর কোনটিই আসলে পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে না৷ দীর্ঘ মেয়াদে টিকাগুলোর ব্যবহার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা অজানা৷ সেটি হয়ত সামনের মাস বা বছরগুলোতেই পরিস্কার হবে৷
ছবি: Borja Abargues/NurPhoto/Getty Images
8 ছবি1 | 8
অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রথম ডোজ নেয়ার পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হননি। সংস্থার গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মেনে পাঙ্গালোস জানিয়েছেন, তাঁদের তথ্য বলছে, প্রথম ডোজের ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিলেই চলবে।
সমীক্ষার ফলাফল এবার পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তবে যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ দেরি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা আগে যত বেশি সম্ভব মানুষকে প্রথম ডোজ দিতে চাইছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই গবেষণার ফলকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইউরোপের মধ্যে করোনা সব চেয়ে বেশি ছড়িয়েছে যুক্তরাজ্যেই। সেখানে এক লাখ আট হাজার মানুষ মারা গেছেন। সেখানে অক্সফোর্ড ছাড়াও ফাইজার-বায়োনটেক ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। তবে অক্সফোর্ডের এই সমীক্ষায় ফাইজারের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখা হয়নি।