অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই আপাতত পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অসুস্থ একজন। তাই আচমকাই পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিল অ্যামেরিকার ফার্মা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল টেস্ট চালাচ্ছিল তারা।
গোটা বিশ্বেই করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। বেশ কিছু গবেষণাগার প্রাথমিক পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে। হাজার হাজার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন ব্যবহার করে দেখা হচ্ছে, কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বেশ কিছু দিন আগেই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। যুক্তরাজ্য, অ্যামেরিকা, ব্রাজিল এবং ভারতে তার ট্রায়াল বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। ভারতে পরীক্ষা চালাচ্ছে পুনের একটি ফার্মা কোম্পানি। অ্যামেরিকায় সেই কাজটি করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে মঙ্গলবার সাময়িক সময়ের জন্য প্রক্রিয়া স্থগিত করার কথা জানায় সংস্থাটি।
সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি এই ভ্যাকসিনের প্রভাবে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সে কারণেই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তির সবরকম টেস্ট হয়েছে। সেই রিপোর্ট আসতে কিছুদিন সময় লাগবে। একটি নিরপেক্ষ সংস্থ তা দেখবে। তারপর ফের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হবে।
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় এ ধরনের ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। এর আগেও এমন ঘটনা বার বার ঘটেছে। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এই প্রথম শোনা গেল। তবে যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর ঠিক কী কী সমস্যা হয়েছে, তাঁর বয়স কত, নাম-- কিছুই জানানো হয়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তাঁর রিপোর্ট হাতে এলেই ফের সংস্থাটি ট্রায়াল শুরু করতে পারবে। এটাই নিয়ম।
অ্যামেরিকায় এ সমস্যা হলেও ভারতে এখনও পর্যন্ত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে কারও অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর মেলেনি। অ্যামেরিকাতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের উপর এর ট্রায়াল চলছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই কারণেই রাশিয়া ক্লিনিকাল ট্রায়াল না করে ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলায় তা নিয়ে এত আলোচনা হয়েছিল। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটে। তখন ওষুধের ডোজে সামান্য রদবদল করা হয়। চূড়ান্ত ডোজ নির্দিষ্ট করা হয়। সে কারণেই শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা এত গুরুত্বপূর্ণ।