এককালে যা কল্পবিজ্ঞান ছিল, আজ তা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ এমন উদাহরণের অভাব নেই৷ যেমন অগমেন্টেড রিয়ালিটি৷ চারিপাশের বাস্তব জগতের উপর কম্পিউটারে সৃষ্ট একটা স্তর অনেক কাজে লাগতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা এআর আসলে কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত এক অলীক জগত৷ ১৯৬৮ সালে এমআইটি-র বিজ্ঞানী আইভান সাদারল্যান্ড এমন একটি ডিসপ্লে ইউনিট তৈরি করেছিলেন, যেটা মাথায় বসানো যায়৷ তখন চোখের সামনে সহজ কিছু নকশা ফুটে ওঠে৷ সেটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা৷ সে যুগের বিশালাকার কম্পিউটারের পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা ছিল না৷
আজকের স্মার্টফোনের ক্ষমতা সে তুলনায় অনেক বেশি৷ সেটি ব্যবহারকারীর অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারে৷ ‘উইকিটিউড' বা ‘লেয়ার'-এর মতো অ্যাপ তার ভিত্তিতে ইন্টারনেট থেকে বাড়তি তথ্য সংগ্রহ করে সেই ‘ভার্চুয়াল' তথ্য থেকে একটা ইমেজ তৈরি করে ফোনেই সেটা ফুটিয়ে তোলে৷ এআর বিশেষজ্ঞ মার্ক মাউরার বলেন, ‘‘ধরুন আমি কোথাও গেছি৷ আমার মোবাইল ফোন জানে, যে আমি সেখানে আছি এবং আগেও গেছি৷ ক্যামেরা দিয়ে ফোন আমাকে হয়ত আইফেল টাওয়ার এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্য দেখিয়ে দিলো৷''
তবে ‘এনহ্যান্সড রিয়ালিটি' সাধারণ মোবাইল গাইডের তুলনায় আরও অনেক কিছু দেখায়৷ বাস্তব জগতের নানা জায়গার সঙ্গে আরও নানা সংশ্লিষ্ট তথ্য জুড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ইন্টারনেট হয়ে উঠছে ‘আউটারনেট'৷ এআর গবেষক উলরিশ বকহল্ট বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, ডিজিটাল জগত আরও বেশি করে থ্রিডি তথ্যের জায়গা হয়ে উঠছে৷ সেখানে বাস্তব জগতের মতো স্পেস ডিজাইন করা যায়৷''
অর্থাৎ যে কোনো লোকেশন সম্পর্কে তথ্য খোঁজা যায়, পাওয়া যায় এবং এভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়৷ এই প্রযুক্তির লক্ষ্য, সব ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক তথ্য ঠিক জায়গায়, ঠিক সময়ে তুলে ধরা৷ এআর বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার বোনস্ট্রা বলেন, ‘‘অগমেন্টেড রিয়ালিটি বিটলস টুর-এর একটা ভালো উদাহরণ৷ লন্ডনের এক ডেভেলাপার সেই শহরে বিটলস ব্যান্ড সম্পর্কিত ৪২টি জায়গা নিয়ে একটি থ্রিডি প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন, যেমন অ্যাবে রোডে৷ একই নামের বিখ্যাত অ্যালবামের মলাটে বিটলস গ্রুপকে সেই রাস্তার উপর জেব্রা ক্রসিং পেরোতে দেখা যাচ্ছে৷ আপনি অ্যাবে রোডের কাছে গিয়ে ফোন তুলে ধরলে রাস্তায় বিটলস-দের দেখতে পাবেন৷''
অগমেন্টেড রিয়ালিটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বাস্তব অবস্থা৷ স্মার্টফোনের মাধ্যমে চারিপাশের পরিবেশের মধ্যে তা ফুটে ওঠে৷
হাতের মুঠোয় স্বপ্নের মায়াজাল
কল্পবিজ্ঞান নয়, উইন্ডোস চশমা পরে হাত নাড়িয়ে ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করা যাবে কিছুদিন পরেই৷ হাতের ঘড়িই হয়ে উঠছে স্মার্টফোনের সম্প্রসারিত সংস্করণ৷ প্রযুক্তির জগতে এসে চলেছে এমন একের পর এক চমক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Elaine Thompson
মাইক্রোসফট-এর হলো-লেন্স
কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের পর্দা নয়, চারিপাশের বাস্তব জগতের মধ্যেই থ্রিডি ভারচুয়াল কম্পিউটিং এনে দেবে মাইক্রোসফট-এর হলো-লেন্স৷ হলো-লেন্স প্রযুক্তিতে চশমা পরে শুধু আঙুলের ইশারায় আপনার পছন্দমতো ফুটে উঠবে সব কিছু৷ চাইলে এমনকি মঙ্গলগ্রহের বুকেও হেঁটে বেড়াতে পারবেন৷ উপরে ডানদিকে + চিহ্নে ক্লিক করে এখনই তার স্বাদ পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Elaine Thompson
সিস্টেম এক, ডিভাইস অনেক
এতকাল কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন ছিল পরস্পরের থেকে আলাদা৷ কিছু ক্ষেত্রে শুধু ‘সিনক্রোনাইজ’ করা যেত৷ ‘উইন্ডোস টেন’ এই সব ডিভাইসকেই একই সূত্রে বেঁধে ফেলতে চলেছে৷ ফলে স্মার্টফোনে কাজ শুরু করে ট্যাবলেট বা ল্যাপটপে সেটি শেষ করতে আর অসুবিধা হবে না৷
ছবি: Joe Raedle/Getty Images
স্মার্টফোনই হবে কম্পিউটারের প্রতিফলন
‘উইন্ডোস টেন’ এমনকি স্মার্টফোনের মধ্যেও কম্পিউটারের কাজ সেরে ফেলতে পারবে৷ মাইক্রোসফট অফিস তো থাকবেই, এছাড়াও পেশাগত অনেক কাজ সেরে ফেলা যাবে ফোনের মধ্যে৷ তবে স্মার্টফোনের বাজার দখলের ক্ষেত্রে এতকাল অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপেল-এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে মাইক্রোসফট৷ নতুন অপারেটিং সিস্টেম সেই প্রবণতা বদলাতে পারে কিনা, সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছে প্রযুক্তি জগত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অ্যাপল-এর সাফল্য
ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপল কোম্পানি এই মুহূর্তে তার সাফল্যের তুঙ্গে৷ বিশ্বের অন্য কোনো কোম্পানি একটি মাত্র কোয়ার্টারে ১৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করতে পারেনি, যেমনটা অ্যাপল সম্প্রতি করে দেখালো৷ নতুন আইফোন বিক্রির ফলেই এই অভাবনীয় আর্থিক সাফল্য এসেছে৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
আইফোন
হার্ডওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম – দুটোই নিজে তৈরি করে আসছে অ্যাপেল৷ বিশেষ করে আইফোন-এর ক্ষেত্রে ব্যবসার এই মডেল সার্থক প্রমাণিত হয়েছে৷ শুধু অসাধারণ ফিচার্সের কারণে নয়, অনেকের কাছে হালের আইফোন থাকাটা ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’-ও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঘড়ির মধ্যেই জগত
আইফোন-এর সাফল্য আইওয়াচ-এর ক্ষেত্রেও ঘটবে বলে আশা করছে অ্যাপল কোম্পানি৷ একদিকে আইফোন-এর যোগ্য সঙ্গী হবে এই ঘড়ি, অন্যদিকে কবজিতে থাকার ফলে রক্তচাপ সহ শরীরের অন্যান্য অনেক ক্রিয়াও নিয়মিত মাপতে পারবে এই ডিভাইস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Davey
সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড
সংখ্যার বিচারে অ্যাপল-এর তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে গুগল কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম৷ বিশ্বে স্মার্টফোনের বাজারে তাদের আধিপত্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ আইফোনের তুলনায় অনেক সস্তায় বিক্রি হয় একাধিক কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন৷
ছবি: Getty Images
চীন থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ
অ্যাপল, গুগল বা মাইক্রোসফট-এর মতো অ্যামেরিকান কোম্পানির আধিপত্যে ভাগ বসাতে চায় চীনের ‘শিয়াওমি’ কোম্পানি৷ স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে বিশ্বের বাজারে বড় আকারে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা৷ তাদের হালের ‘মি নোট’ স্মার্টফোন নাকি ‘আইফোন সিক্স’-কে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে৷