অগাস্টের পরেও আফগানিস্তানে থাকতে পারে মার্কিন সেনা
১৯ আগস্ট ২০২১
আফগানিস্তান থেকে সমস্ত মার্কিন নাগরিক উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সেনা থাকবে। জানালেন জো বাইডেন।
ছবি: Spanish Defence Ministry/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন সেনা আছে। আরো দেড় হাজার মার্কিন সেনার পৌঁছানোর কথা। তারা মূলত বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার কাজ করছে। মার্কিন নাগরিকদের চিহ্নিত করে দেশের বিমানে তুলে দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যতদিন সমস্ত মার্কিন নাগরিক দেশে ফিরছেন, ততদিন কাবুল বিমানবন্দরে মার্কিন সেনা থাকবে। এর আগে বাইডেন জানিয়েছিলেন ৩১ অগাস্টের মধ্যে সব মার্কিন মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসবে।
গত বিশ বছর ধরে বহু মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তানেবসবাস করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অধিকাংশই কাবুলে চলে এসেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সকলে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। মঙ্গলবার মার্কিন প্রশাসন একটি ইমেল বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, নিজেদের দায়িত্বে ওই নাগরিকদের বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে তাদের বিমানে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব সেনার।
কাবুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ ছবি
রোববারই কাবুল দখল করেছে তালেবান। শহর ঘিরে রেখেছে তারা। বিমানবন্দরে পালাতে চাওয়া মানুষের ভিড়। বিমানের মাথায় মানুষ। ভিড়ের চাপে মৃত সাত।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বিমান না বাস
উপমহাদেশে বাসের মাথায় অনেকসময় মানুষ চড়েন, ট্রেনের মাথাতেও মাঝেমধ্যে দেখা যায় তাদের। কিন্তু তাই বলে বিমানের মাথায় মানুষ! সেই দৃশ্যও দেখা গেল কাবুল বিমানবন্দরে। কাবুল ছাড়ার জন্য কিছু মানুষ এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
প্রবল ভিড়
যেদিকে দেখা যায়, সেদিকেই মানুষের মাথা। পিলপিল করছে মানুষ। বিমানবন্দরের ভিতরের ছবি।
ছবি: AFP
কোথায় যাবেন
কোথায় যাবেন জানা নেই। তাদের কাছে টিকিট নেই, ভিসা নেই, আছে শুধু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় এবং পালানোর মরিয়া প্রয়াস।
ছবি: AP Photo/picture alliance
পাঁচিল ও কাঁটাতারের বেড়া টপকে
বিমানবন্দরে উঁচু পাঁচিল, তার উপরে কাঁটাতারের বেড়া। সে সব টপকে মানুষ ঢুকেছেন বিমানবন্দরে। ছবিতে একটি মেয়েকে পাঁচিলে টেনে তুলছেন এক পুরুষ।
ছবি: REUTERS
যে কোনো ভাবে ঢোকার চেষ্টা
বিমানে যে কোনো ভাবে ঢোকার চেষ্টা করেছেন মানুষ। একমাত্র বিমানেই কাবুল তথা আফগানিস্তানের বাইরে যাওয়া যাবে। তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ।
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাইরে গাড়ি রেখে
মানুষ এতটাই বেপরোয়া, যে বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি রেখে পরিবারের সকলকে নিয়ে তারা ছুটছেন ভিতরে ঢোকার জন্য।
ছবি: REUTERS
নারী ও শিশুরাও
শুধু পুরুষরা নয়। নারী ও শিশুদেরও দেখা গেছে বিমানবন্দরে ঢুকে প্লেন ধরার মরিয়া চেষ্টা করতে।
ছবি: REUTERS
বাইরে তালেবান প্রহরা
বিমানবন্দরের বাইরে সতর্ক পাহারায় তালেবান। বন্দুক হাতে তারা প্রহরারত।
ছবি: REUTERS
ভিড়ের চাপে
প্রবল ভিড় এবং বিশৃঙ্খলার শিকার হলেন অন্ততপক্ষে সাতজন। পালাতে চেয়েছিলেন তারা। পারলেন না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
ছবি: AFP/Getty Images
মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমান
কাবুল বিমানবন্দরের উপরে মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমান। এই বিমানবন্দর এখনো অ্যামেরিকার দখলে।
ছবি: ASVAKA NEWS via REUTERS
বিমান ঘিরে সেনা
পরিস্থিতি দেখে মার্কিন সেনা বিমানগুলি ঘিরে ধরে। আফগান জনতা দূর থেকে দেখছেন। তারা তখনো আশায় যে, বিমানে করে চলে যেতে পারবেন।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
নামতে পারল না
বিমানবন্দরের এমন অবস্থা ছিল যে, সোমবার জার্মান সেনাবাহিনীর বিমান সেখানে নামতে পর্যন্ত পারেনি।
সকলকে বিমানবন্দরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধ রাখা হয় এয়ারপোর্ট। বেশ কয়েকঘণ্টা পরে তা খোলে।
ছবি: Maxar Technologies/REUTERS
13 ছবি1 | 13
সমস্যা ব্যারিকেড
সমস্যা হলো, তালেবান কাবুল জুড়ে কার্ফিউ ঘোষণা করেছে। জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে। বিমানবন্দরের রাস্তায় একাধিক ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে মানুষ বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছেন না। ওই রাস্তায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। হোয়াইট হাউস অবশ্য জানিয়েছে, এ বিষয়ে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। তালেবান জানিয়েছে, বিনা বাধায় মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দরে যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না বলেই বহু মানুষের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, একাধিক ব্যারিকেডে তালেবানের হাতে তাদের হেনস্থা হতে হচ্ছে।
আফগানদেরও আশ্রয়
বাইডেন জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিক নন, যে সমস্ত আফগান নাগরিক গত বিশ বছর ধরে অ্যামেরিকাকে সাহায্য করেছে, তাদেরও অ্যামেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বাইডেন জানিয়েছেন, প্রায় ৬৫ হাজার আফগানকে ভিসা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এত মানুষকে একদিনে অ্যামেরিকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গোটা প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। ততদিন পর্যন্ত মার্কিন সেনা কি আফগানিস্তানে থাকবে? এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দেয়নি হোয়াইট হাউস।
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
6 ছবি1 | 6
মার্কিন প্রশাসনের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই হাজার মার্কিন নাগরিককে দেশের বিমান তোলা গেছে। সব মিলিয়ে এখনো প্রায় দশ হাজার মার্কিনি আফগানিস্তানে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ছয় হাজার ৫০০ জন আফগান নাগরিককে ভিসা দেওয়া হয়েছে বলেও প্রশাসন জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ৩১ অগাস্টের পরে তালেবান মার্কিন সেনার সঙ্গে লড়াই শুরু করবে কি না। কারণ, বাইডেন আগেই জানিয়েছিলেন, ৩১ অগাস্টের মধ্যে সমস্ত সেনা দেশে ফিরে যাবে। গোটা কাবুল নিজেদের দখলে থাকলেও তালেবান কাবুল বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা করেনি। অ্যামেরিকা তা ঘিরে রেখেছে। বস্তুত, কাবুল বিমানবন্দর থেকেই অ্যামেরিকা দূতাবাসের কাজ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে তালেবান এবং অ্যামেরিকার মধ্যে একটি অলিখিত সমঝোতা হয়েছে বলাই যায়। কিন্তু ৩১ অগাস্টের পরেও সেই সমঝোতা থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয প্রকাশ করেছে অনেকেই।