1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌অগ্নিকাণ্ডে শাপে বর?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৮ জানুয়ারি ২০১৯

দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ে সম্প্রতি এক বড় অগ্নিকাণ্ডের পর সতর্ক কলকাতা পুরসভা৷ শহরের ফুটপাথ জুড়ে বসে থাকা হকারদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ৷

Indien Kolkata Bürgerliches Problem,
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

কলকাতা শহরের ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে অতীতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তার মধ্যে বৃহত্তম ১৯৯৬ সালে ‘‌অপারেশন সানশাইন'‌৷ বুলডোজার আর পেলোডার দিয়ে হকারদের স্টল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয়েছিল উত্তরে হাতিবাগান-শ্যামবাজার এবং দক্ষিণে গড়িয়াহাট অঞ্চলের ফুটপাথ৷ আক্ষরিক অর্থেই সানশাইন, অর্থাৎ সূর্যের আলো এসে পড়েছিল ফুটপাথে, বহু বছর পর৷ সেবারও ঠিক হয়েছিল, শহরের কোনো ফুটপাথে আর হকারদের স্থায়ী দোকান করতে দেওয়া হবে না৷ তার বদলে চালু হবে চাকা-লাগানো ঠেলাগাড়ি৷ গ্রীষ্ম-বর্ষায় তার মাথায় থাকবে ছাতা৷ হকাররা প্রতিদিন ব্যবসাপত্রের শেষে সেই গাড়ি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ফুটপাথ ফাঁকা করে দেবেন৷ এবং তাঁদের বসতে হবে রাস্তার মোড়গুলি ছেড়ে, অন্তত ৫০ মিটার দূরত্ব রেখে৷ ফুটপাথের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে বসতে পারবেন তাঁরা, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ছেড়ে রাখতে হবে পথচারীদের জন্য৷

‘ জায়গাটা পরিষ্কার হলো, আগুন লাগার সম্ভাবনা আর থাকছে না’

This browser does not support the audio element.

কিন্তু যে কোনো সরকারি উদ্যোগে যেমন হয়, কিছু মাস পর থেকেই হকাররা আবার ধীরে ধীরে ফুটপাথ দখল করতে শুরু করে দেন৷ বছর ঘোরার আগেই আবার ফুটপাথ বেদখল হয়ে যায় হকারদের হাতে৷ এবং সরকারি সিদ্ধান্ত যা হয়েছিল, বাস্তব পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায় ঠিক তার উলটো৷ অর্থাৎ রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখার বদলে হকাররাই সিংহভাগ দখল করে নেন, মাঝে এক চিলতে সরু পায়ে চলার রাস্তা ছেড়ে রেখে৷ সেই রাস্তারও মাথার ওপর ঝোলে হকারদের পশরা৷ মাথায় ছাতা-লাগানো ঠেলাগাড়ি দূরে থাক, দস্তুরমতো স্থায়ী দোকান বানিয়ে ফেলেছেন সব হকারই৷ এমনকি রাস্তার মোড়গুলিও এতদিন ঢাকা ছিল এই হকারদের দোকানে, যা সাধারণ পথচারীদের বিস্তর অসুবিধের কারণ হয়ে থাকত৷

কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ব্যস্ততম মোড় গড়িয়াহাটে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর টনক নড়েছে পুর প্রশাসনের৷ পুরনো নিয়মগুলিই আবার নতুন করে চালু করার ঘোষণা করা হয়েছে৷ বস্তুত সোমবারই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম গড়িয়াহাটে এসে কয়েকটি মডেল হকার স্টলের উদ্বোধন করেন৷ জানিয়ে দেন, এবার থেকে এইভাবেই বসতে হবে হকারদের৷ কিন্তু সমস্যা হলো, হকাররা, বিশেষত তাঁদের ইউনিয়নের নেতারা এখনো বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত৷ আগুন লাগার ঘটনায় যেহেতু রাস্তার ধারের ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রান্সফর্মারের আগুন হকারদের স্টলের প্লাস্টিকবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল লাগোয়া বহুতল বাড়ি এবং নীচের দোকানগুলিতে, পুর নির্দেশে প্লাস্টিক আপাতত সরিয়ে দিয়েছেন হকাররা৷ কিন্তু তাঁদের স্থায়ী রাজ্যপাট তুলে দেওয়ার প্রশ্নে হকাররা এখন দ্বিধাগ্রস্ত৷ অনেকেই বুঝতে পারছেন না, নতুন নিয়ম কতদূর মেনে চলতে হবে৷

‘‌বৃষ্টি-বাদলের সময় আমাদের সবথেকে বেশি অসুবিধা হবে’

This browser does not support the audio element.

সোমবার গড়িয়াহাট মোড়ের হকার বিমল দাসের গলায় ধরা পড়ল সেই বিভ্রান্তি৷ তাঁর দোকান ছিল রাস্তার মোড়ের একেবারে মুখে৷ ৫০ ফুট ছেড়ে দোকান দেওয়ার নতুন বিধানে তাঁর দোকানটি তুলে দিতে হয়েছে৷ নতুন নিয়মে হকারদের সুবিধে হবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, ‘‌‘সেটা আমাদের প্রতিনিধি বলতে পারবে৷‌ আমাদের কিছু অসুবিধে হবে৷ বৃষ্টি-বাদলের সময় সবথেকে বেশি৷ বড় সমস্যা হবে বৃষ্টির জন্যে৷ আমাদের প্রতিনিধি যে সিদ্ধান্তটা নেবে, সেটাই মেনে নিতে হবে মাথা পেতে৷''‌

হকাররা মোড় ছেড়ে সরে যাওয়ায় বহু বছর পর নিজের দোকানের সামনেটা খোলা দেখতে পাচ্ছেন সঞ্জয় হালদার৷ তাঁর কথাতেও বিভ্রান্তি৷ কারো ব্যবসা নষ্ট করে নিজের ব্যবসার ভালো হোক, সেটা তাঁরও ভালো লাগছে না৷ তিনি বললেন, ‘‌‘‌সুবিধে-অসুবিধে একই রকম থাকবে৷ এর ফলে কিছু বাড়ছে না, কমছে না৷ জায়গাটা যে পরিষ্কার হলো, সেটা একটা সুবিধে হলো৷ আগুন লাগার সম্ভাবনা আর থাকছে না৷ কিন্তু এদের দোকান থাকলে আমরা খদ্দেরও পাই৷ এই হকারদের অনেকেই আমাদের খদ্দের৷''‌

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের মানসিকতার এই দোলাচল থেকেই পরিষ্কার, ঠিক যে সমাধান দু'‌দশক আগে ভাবা হলেও অধরা থেকে গেছে, সেই একই অসাফল্যের পুনরাবৃত্তি খুব একটা অসম্ভব নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ