1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অচল ঢাবি, সমাধান দেবেন প্রধানমন্ত্রী

২৪ জুলাই ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী সমাধান দেবেন কিংবা উপাচার্যের প্রতিশ্রুতি - কিছুতেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷ সাত সরকারি কলেজে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে কার্যত অচল অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে৷

Bangladesh, Dhaka University, Aparajeyo Bangla
ছবি: bdnews24.com

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা৷

আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এ বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান দেবেন।

কাদের আরো জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দুয়েকদিনের মধ্যে বৈঠক করবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি৷ তিনি বলেন, "তার আগে তারা যেন রাস্তা অবরোধ করে জনগণকে কষ্ট না দেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার ক্ষতি না করে। তাদেরকে অনুরোধ করছি, তারা যেন ধর্মঘটের পথ থেকে বিরত থাকে।”

চীন থেকে দেশে ফিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান৷ এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷

উপাচার্য জানান, ‘‘শুরুতে একটু অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় এই অধিভুক্তিটা হয়েছিল৷ ফলশ্রুতিতে অনেকগুলো বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে৷ একটু বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে৷ কারণ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী৷'' 

ঢাবি উপাচার্যের বক্তব্য

01:20

This browser does not support the video element.

ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ''বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বে কলেজের অধ্যক্ষ, ছাত্র প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন-সাবইকে একত্রিত করে একটি কমিটি গঠন করবো৷ সেই কমিটি মূলত একটি সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধানের জন্য কী কী করণীয়, সেগুলো তারা চিহ্নিত করবে৷''

তিনি জানান, ‘‘যেহেতু সরকারি কলেজ, সরকারের একটি অংশ আছে৷ তখন সরকারের সঙ্গে বসে এগুলো নিয়ে (কমিটির প্রতিবেদন) একেবারে বাস্তবায়ন করে ফেলবো৷''

সেই কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে জানিয়ে, আন্দোলন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ জানান উপাচার্য৷

তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷

এদিকে, আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু৷ প্রশাসনের আশ্বাসেও শিক্ষার্থী আন্দোলন প্রত্যাহার না করা প্রসঙ্গে কথা হয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভ্রান্তিকর কিছু কাজ করার কারণে শিক্ষার্থীরা আস্থা হারিয়েছে৷''

তবে শেষপর্যন্ত প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে হয় বলেও মনে করেন নুর৷ ডাকসুর ভিপির আশা, একটা সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷

এখানেও নুর বনাম ছাত্রলীগ

ডাকসুর সহ-সভাপতি বলছেন, অধিভুক্তির বিষয়টি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত৷ তিনি জানান, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, অ্যাকাডেমিক পারপাসের কাজগুলো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন করে নিতে হয়৷ এই সাত কলেজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়, তখন সরকার বলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করে নিয়েছিল৷ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হয়নি৷''

এদিকে, আন্দোলনে সমর্থন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ চায় ছাত্রলীগ৷ ছাত্র সংগঠনটি বলছে, প্রশাসন যেহেতু আশ্বস্ত করেছে, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরা উচিত৷

অ্যাকাডেমিক ভবনের তালা খুলতে হলে প্রশাসন বা ছাত্র সংসদ খুলবে: নূরুল হক নূর

This browser does not support the audio element.

কিন্তু নুরের দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া ভালোভাবে না শুনে কিংবা সেটার গভীরে না গিয়ে, তাঁরা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে পেশিশক্তি দিয়ে আন্দোলনটাকে মোকাবিলা করছে৷  তাই সমস্যাটা সমাধানে না গিয়ে আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে৷‘‘

তাঁর অভিযোগ, স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে ছাত্রলীগ৷ মারধর করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের৷

নুরুর  দাবি, অ্যাকাডেমিক ভবনের তালা খুলতে হলে প্রশাসন বা ছাত্র সংসদ খুলবে৷ কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নুর৷ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের বদলে বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করে৷ ফলে শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে৷

সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখান করেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেইন৷ তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশাকে আমরা সমর্থন জানাই৷ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ পাওয়ার পলিটিক্স নয়, আমরা পলিসি পলিটিক্সে বিশ্বাস করি৷''

সাদ্দাম জানান, ‘‘এটি ডাকসুর ভিপির পুরানো প্রবণতা৷ আমরা তাঁকে দেখতে পাই ডাকসুর ভিপি হিসেবে জিএস-এর সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাশে ফিরে যায়৷ আবার পর মুহূর্তে দেখতে পাই তিনি বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ এটির মাধ্যমে তিনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না৷'' 

ক্লাস বর্জন করার ডাক গণতান্ত্রিক অধিকার, ক্লাস করতে না দেয়া অগণতান্ত্রিক : সাদ্দাম হোসেইন

This browser does not support the audio element.

সাদ্দামের মতে ‘‘ডাকসুতে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আছে৷ তারাই প্রশাসনের সঙ্গে দর কষাকষি করে একটা সুরাহা করতে পারে৷ কিন্তু তারপরেও আমরা দেখতে পাই, তিনি (নুর) একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে মদদ দিচ্ছেন, যাতে করে তাঁরা এক ধরনের পলিটিক্যাল ক্যরিয়ার গড়ে তুলতে পারেন এবং ভিপির সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয় এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷''

সাদ্দামের দাবি, ক্লাস বর্জন করার ডাক দেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার৷ কিন্তু জোর করে ক্লাস করতে না দেয়া এবং তালা ঝুলিয়ে দেয়া কিন্তু অগণতান্ত্রিক চর্চা৷

এই সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ছাত্রলীগ যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছেন সাদ্দাম৷ ‘‘সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি৷ সাত কলেজ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান আমরা চাই,'' জানান ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম৷ এই সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হচ্ছে, সাত কলেজেও শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছে না বলে মত দেন তিনি৷

পেছনের গল্প

২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ওই সাত কলেজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ধীর গতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা৷ ফলে ক্লাস পরীক্ষা-বন্ধ থাকে।

এর আগে ১৬ জুলাই নিউ মার্কেট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, প্রত্যেক মাসে প্রতি কলেজে দুই দিন করে মোট ১৪ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ