1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অজিত ডোভালের রাশিয়া সফর কোন বার্তা দিচ্ছে?

গৌতম হোড় দিল্লি
৬ আগস্ট ২০২৫

ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল রাশিয়া সফরে গেলেন। এ মাসের শেষে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।
ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পর অজিত ডোভালের রাশিয়া সফরের মধ্যে একটা স্পষ্ট বার্তা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।ছবি: Tauseef Mustafa/AFP/Getty Images

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনে, তাহলে ২৫ শতাংশ শুল্কের অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে। রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পের এই চাপের পরেও অজিত ডোভাল তার পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল না করে মস্কো গেছেন। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি সেখানে অস্ত্র ও তেল কেনা নিয়ে কথা বলবেন।

সোমবারই ট্রাম্প বলেছেন, ''বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে ভারত ভালো নয়। তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর বাণিজ্য করে, কিন্তু আমরা ওদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারি না। তাই আমরা ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছি। আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই শুল্কের পরিমাণ আরো অনেকটাই বাড়িয়ে দেব। কারণ, ওরা রাশিয়ার তেল কিনছে। তারা রাশিয়ার ওয়ার মেশিনকে জ্বালানি যোগাচ্ছে। ওরা যদি এটা করে, আমি খুশি হব না।''

ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে লাভ করছে, আর ইউক্রেনের রাশিয়ার ওয়ার মেশিন মানুষকে হত্যা করছে।''

ঠিক এই পরিস্থিতিতে অজিত ডোভালের রাশিয়া যাওয়া এবং তেল ও অস্ত্র কেনা নিয়ে কথা বলার মধ্যে একটা বিশেষ বার্তা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা জানাচ্ছেন, ভারতও একটা বার্তা পাঠাতে চাইছে

বিশ্লেষকরা যা মনে করেন

ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘অবশ্যই এর মধ্যে একটা বার্তা আছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে। রাশিয়া থেকে আমরা এস ৪৪ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়েছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় এস ৪০০-র কার্যকারিতা দেখেছি। এই এস ৪০০-র পুরো কনসাইনমেন্ট পাঠানো নিয়ে কথা হবে।'' 

তবে উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ''এফ ৩৫ কেনা বা না কেনার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আগে এফ ৩৫ নেবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু সেটা নেওয়া হয়নি।''

এফ ৩৫-এর বিকল্প হলো রাশিয়ার এসইউ-৫৭

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, ভারত এফ ৩৫ কিনছে না। এই অবস্থায়  তাদের সবচেয়ে ভালো বিকল্প রাশিয়ার এসইউ-৫৭। রাশিয়াও ভারতের বিমান বাহিনীকে 'গোল্ডেন ডিল' অফার করেছে। সেটা হলো, এসইউ-৫৭ই-র উৎপাদন ভারতেও হতে পারবে। এসইউ-৩০ এমকেআই তৈরির যে পরিকাঠামো আছে, তাকে কাজে লাগিয়েই এসইউ-৫৭ বি-র উৎপাদন করা যেতে পারে।

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার অঙ্গ হিসাবে এসইউ-৫৭এস কেনা ও প্রযুক্তি সহায়তা নিয়েও কথা হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন চাপে তা স্থগিত ছিল। এখন যদি ভারত এসইউ-৫৭ কেনে তাহলে আরো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে বা রপ্তানি নিয়ে আরো কড়াকড়ির মুখে পড়তে হতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া ইউরেশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, ''ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে একটা বার্তা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানকে সুবিধা দিচ্ছে, এই অবস্থায় ভারতের অ্যামেরিকার কাছ থেকে কোনো সাজসরঞ্জাম কেনা উচিত নয়। আমরা এটা আগেও দেখেছি। অ্যামেরিকা বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার নয়। কে জানে, তারা ভবিষ্যতে কোন পথ নেবে এবং আমাদের উপর আরো শুল্ক বসাবে না?''

তিনি বলেছেন, ''ওরা ১৮ মাস দেরিতে জিই ৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহ করছে, ফলে আমাদের তেজস যুদ্ধবিমানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।''

উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, ''ভারত তো জানিয়েছে, অ্যামেরিকাও রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু কিনছে। এখন দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের সিলেকটিভ অ্যামনেশিয়া হয়েছে।''

'ভারত-রাশিয়া সংকটের সময় একে অপরকে সাহায্য করে'

কূটনীতি বিশেষজ্ঞ এবং দ্য টেলিগ্রাফ ও আউটলুকের কূটনৈতিক সম্পাদক প্রণয় শর্মা ডিডাব্লিউকে বলেছেন,  ''ট্রাম্প যা করছেন, তা ঠিক নয়। তিনি পণ্য বিক্রি করবেন কিনা, শুল্ক বসাবেন কিনা, সেটা তার বিষয়। সাধারণত, কোনো দেশ আলোচনার সময় জানিয়ে দেয়, তারা কী করবে। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎ হঠাৎ নতুন জিনিস করে যাচ্ছেন। যার ফলে অসুবিধা হচ্ছে। অ্যামেরিকা ও ইউরোপ আজও রাশিয়া থেকে বহু জিনিস কেনে। তাই তাদের অন্যের দিকে আঙুল তোলার কোনো অধিকার নেই।''

প্রণয় বলেছেন, ''ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক বহুদিনের ও খুব কাছের। রাশিয়া সবসময় ভারতের পাশে থেকেছে। ভারত যখনই সমর্থন চেয়েছে, তখনই পেয়েছে। ভারতও একই কাজ করেছে। ২০১৪তে সংকটের সময় ভারত ক্রাইমিয়া নিয়েও রাশি্য়াকে সমর্থন করেছে। চীন এখনো ক্রাইমিয়া নিয়ে রাশিয়াকে সমর্থন করে না। ভারত সমর্থন করার পর ক্রেমলিন তাদের ওয়েবসাইটে তা দেয়।'' 

প্রণয় মনে করেন, ''এখন ভারত আবার বার্তা দিয়েছে যে, রাশিয়া তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামেরিকা চাপ দিলেও তারা রাশিয়ার কাছ থেকে সরবে না। ডোভালের সফর পূর্বনির্ধারিত হলেও তার মধ্যে এই রাজনৈতিক বার্তা আছে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ