মানুষের মুখের দিকে তাকালেই তার আবেগ বোঝা যায়৷ তাই কথাবার্তার পাশাপাশি আমরা অভিব্যক্তিও বিশ্লেষণ করে থাকি৷ কিন্তু অটিস্টিক মানুষের জন্য এই কাজ অত্যন্ত কঠিন৷ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
মানুষের মুখের অভিব্যক্তি তাদের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলে৷ সেই ভাষা সবাই বোঝে৷ কিন্তু কিছু মানুষ অন্যের মুখ দেখে তাদের অনুভুতি বুঝতে পারে না৷ কারণ তাদের অটিজম আছে৷ আশেপাশের মানুষের মুখ দেখে কিছুই বোঝে না তারা৷ ফলে আবেগের প্রতিক্রিয়াও দেখাতে তাদের সমস্যা হয়৷ নিজেদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ বোধ করে তারা৷
বার্লিনের হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষকে সঠিকভাবে অনুভূতি শেখানোর বিষয়ে গবেষণা চলছে৷ আবেগ বিজ্ঞানী ইসাবেল সিওবেক ও তাঁর টিম এমন পদ্ধতি তৈরি করছে, যার সাহায্যে অটিস্টিক মানুষ অন্যের অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করা শিখতে পারবে৷ প্রো. সিওবেক বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হলো সব বয়সের অটিস্টিক মানুষকে সাহায্য করা, যাতে তারা আরও সহজে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে৷ অন্যের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করা অত্যন্ত জরুরি৷ শুধু সামাজিক ক্ষেত্রেই নয়, পেশাগত জীবনেও এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ আমার মতে, অন্য মানুষের অভব্যক্তি বোঝা জীবনের সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি৷''
যাঁরা অনেক বেশি প্রশংসার যোগ্য
আলব্যার্ট আইনস্টাইনকে পদার্থবিদ এবং অঙ্ক বিশারদ হিসেবে তো চেনেন, কিন্তু অটিজম-এর মতো অক্ষমতাকে জয় করার কারণেও যে তিনি অনন্যসাধারণ, তা কি জানেন? ছবিঘরে থাকছে তাঁর এবং এমন আরো কয়েকজন অসাধারণ মানুষের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Warner Bros/Entertainment Inc.
আইনস্টাইনের ‘অক্ষমতা’
অ্যাসপারজার্স সিনড্রোম নামের এক ধরণের অটিজম, অর্থাৎ মানসিক সমস্যায় ভুগতেন আলব্যার্ট আইনস্টাইন৷ এই সমস্যা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ খুব জটিল বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে এবং সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনেও সমস্যা হয় তাদের৷ আইনস্টাইনেরও এ সব সমস্যা ছিল৷ বিবিসি-র এক অনুসন্ধান বলছে, অ্যাসপারজার্স সিন্ড্রোমে আক্রান্তদের মতো তাঁরও একই কথা বারবার বলার অভ্যেস ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মোৎসার্ট খুব বেশি হাত-পা নাড়তেন!
সংগীতজ্ঞ মোৎসার্টের মধ্যেও নাকি চোখে পড়ার মতো কিছু অস্বাভাবিকতা ছিল৷ খুব কম বয়সেই তাঁর মধ্যে নানা ধরণের বাদ্যযন্ত্রের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়৷ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে খুব দ্রুত সুর রচনাও শুরু করেন৷ কিন্তু লিখতে সমস্যা হতো৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যাটার কারণ অটিজম৷ মোৎসার্টের শ্রুতিতেও সংবেদনশীলতা ছিল৷ আরেকটা অস্বাভাবিকতা ছিল অস্ট্রীয় এই সংগীতজ্ঞের – সবসময় খুব বেশি হাত-পা নাড়াতেন!
ছবি: picture-alliance/akg-images/Erich Lessing
ভয় থেকে সুপারস্টার!
‘ঘোস্টবাস্টার্স’ মুভির জন্য সুপরিচিত ড্যান অ্যাক্রয়েডের নাকি ‘দ্য ব্লু ব্রাদার্স’-এ কাজ করার সময় অ্যাসপারজার্স সিনড্রোম ধরা পড়েছিল৷ ঘোস্টবাস্টার্স-এ চমৎকার অভিনয়ের কৃতিত্ব অ্যাসপারজার্স সিনড্রোমকেই দিয়েছেন তিনি৷ ক্যানাডিয়ান এই অভিনেতা ডেইলি মেল-কে বলেছেন, অ্যাসপারজার্স সিনড্রোমের যেসব বৈশষ্ট্য ছিল তার মধ্যে একটি হলো, ভূত এবং পুলিশে ভয়৷ ছবিতে অভিনয়ের সময় তা নাকি খুব কাজে লেগেছে৷
ছবি: Getty Images for AFI/F. Harrison
১২ হাজার বই মুখস্থ ছিল যাঁর
কিম পিক নামের কাউকে হয়ত আপনি চেনেন না৷ তাঁকে নিয়ে একটি ছবি হয়েছে, ছবির নাম ‘রেন ম্যান’৷ আশির দশকের এই ক্লাসিক মুভির কাহিনি চার্লি ব্যাবিট এবং তাঁর অটিস্টিক ভাই রেমন্ডকে ঘিরে৷ সেখানে রেমন্ড, অর্থাৎ বাস্তব জীবনের কিম পিকের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন ডাস্টিন হফম্যান৷ ২০০৯ সালে মারা যান পিক৷ ১২ হাজার বই একদম মুখস্থ ছিল বলে কিম পিক-কে এক বাক্যে পণ্ডিত মানতেন সবাই৷
ছবি: cc-by-Dmadeo
যিনি এক জায়গায় বসতে ভালোবাসতেন
চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশিষ্ট নাম ড. শেল্ডন কুপার৷ ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’ – ছবি দেখে থাকলে নামটা নিশ্চয়ই শুনেছেন৷ ছবিতে কুপার হয়েছিলেন জিম পারসন্স৷ পারসন্সের ধারণা, কুপারেরও অ্যাসপারজার্স সিনড্রেম ছিল৷ বলা হয়ে থাকে, কুপার শ্লেষাত্মক কথা একেবারেই বুঝতেন না, সপ্তাহে এক দিন খুব ঘটা করে খেতে বসতেন এবং সব সময় এক জায়গাতেই বসতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Warner Bros/Entertainment Inc.
5 ছবি1 | 5
সিওবেক-এর টিম এক বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যার সাহায্যে অটিস্টিক মানুষ আবেগ শনাক্ত করার অনুশীলন করতে পারে৷ অভিনেতাদের দিয়ে ৪০টি বিভিন্ন আবেগ রেকর্ড করা হয়েছে৷ যেমন মুগ্ধ, হতাশ বা শুধু খুশি হলে আমাদের কেমন দেখতে লাগে, তা তুলে ধরা হয়েছে৷
অটিস্টিক মানুষদের কঠিন পরিশ্রম করে অভিব্যক্তির এই সামান্য হেরফের শিখতে হয়৷ একটি পরীক্ষায় চোখ ও মুখের অভিব্যক্তিগুলিকে সঠিকভাবে সাজাতে হয়৷ এর মাধ্যমে অটিস্টিক মানুষরা মুখের বিভিন্ন অংশের সামান্য নড়াচড়ার সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক বুঝতে পারে৷ প্রো. ইসাবেল সিওবেক বলেন, ‘‘এর আগের গবেষণায় জানতে পেরেছিলাম, যে কেউ আবেগ প্রকাশ করলে অটিস্টিক মানুষরা তাদের চোখের দিকে কম তাকায়৷ কিন্তু আবেগ বুঝতে গেলে চোখের দিকে তাকানো জরুরি, কারণ চোখই সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত পাঠায়৷''
অটিস্টিক মানুষদের সাফল্যের কথা শুনুন
02:41
সে কারণে বিজ্ঞানীরা অটিস্টিক মানুষদের শেখাচ্ছেন, ঠিক কোনদিকে তাকাতে হবে৷ অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করার জন্য সপ্তাহে মাত্র তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট৷ ইসাবেল সিওবেক মনে করেন, এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কাজ পরিমাপ করা সম্ভব৷ মস্তিষ্কের কোন অংশে সেই কাজ চলছে, তাও জানা সম্ভব৷