এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মানুষের গুণাবলী সম্পন্ন রোবট তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন৷ তবে এবার তাঁরা জোর দিচ্ছেন ভিন্ন ধরনের এক রোবট নির্মাণে৷ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, এমন পরিস্থিতিতে যারা অনায়াসে কাজ করবে৷
বিজ্ঞাপন
কেমন হবে ভবিষ্যতের রোবট? ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আন্তর্জাতিক প্রকল্প কিন্তু এটাই৷ অর্থাৎ, নতুন ধরনের রোবট তৈরি৷ আগুনের মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে পারবে এরা, হয়ত পারবে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে৷ এমনকি কোথায় কোথায় ‘ল্যান্ডমাইন' পোঁতা রয়েছে, তাও ধরে ফেলতে পারবে এই উন্নত অতিমানবীয় রোবট৷
কোরোইবোট নামের এই রোবটগুলোর নাম রাখা হচ্ছে প্রাচীন গ্রিসে আয়োজিত বিশ্বের প্রথম অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কোরোইবোস অফ এলিসের নামে৷ এখানে বলে রাখা ভালো, কোরোইবোস আদতে একজন রাধুনি হয়েও অলিম্পিকের সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন৷ বলা বাহুল্য, অনেকটাই যেন অতিমানবীয় ছিল তাঁর গতি, তাঁর চলার ধরণ৷ আর তাই তো এই নামকরণ৷
সে যাই হোক, তিন বছরের এই প্রকল্পে প্রধানত জোর দেয়া হয়েছে রোবটের পায়ের গঠনের ওপর৷ অর্থাৎ, বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য মানুষের মতো চলাফেরা করবে এমন পা নির্মাণ করা৷ ৪০ জন ইউরোপীয়, ইসরায়েলি এবং জাপানি বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে কাজ করছেন৷ এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ইউরো৷ আর পুরো দলের নেতৃত্বে আছেন জার্মান গণিতবিদ হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাটিয়া মোমবোর৷
সর্বাধুনিক ‘মা’ এবং অন্যান্য
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে প্রতিবছর ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো’ অনুষ্ঠিত হয়৷ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-পণ্যের দেখা মেলে সেখানে৷ ছবিঘরে দেখুন ২০১৪ সালের মেলার আকর্ষণ৷
ছবি: Reuters
‘মা’-এর দাম ১৯৯ ডলার!
ফ্রান্সের সেনস কোম্পানির ‘মাদার’ নামের এই ডিভাইসটি অনেকটা মায়ের মতোই ঘরের সবকিছুর খোঁজখবর রাখে৷ কফি শেষ হয়ে গেলো কিনা, সন্তান দাঁত ব্রাশ করেছে কিনা – এমন সব খবর রাখে মাদার৷ দাম ১৯৯ ডলার৷ এই লিংকে http://www.youtube.com/watch?v=Sw4yb0dNSbY গেলে এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মার্ট টুথব্রাশ
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট-কানেক্টেড টুথব্রাশ ‘কোলিব্রি’৷ আপনার ব্রাশ করা কেমন হলো, ঠিকভাবে হলো কিনা, দাঁত কতখানি পরিষ্কার হলো – এ সবই জানিয়ে দেবে এই স্মার্ট টুথব্রাশ৷ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো একসময় অনলাইনে এই টুথব্রাশের জন্য অর্ডার দেয়া যাবে৷ দাম সংস্করণভেদে ৯৯ থেকে ১৯৯ ডলার৷ কোলিব্রি সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন http://www.youtube.com/watch?v=oEDMzFYqW9k৷
ছবি: Robyn Beck/AFP/Getty Images
সাইকেলের নেভিগেশন সিস্টেম
এই ডিভাইসটি সাইকেলে লাগিয়ে নিলে সেটাই আপনাকে বলে দেবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে আপনাকে কোন দিক দিয়ে যেতে হবে৷ সেখানে পৌঁছতে আপনার কত সময় লাগবে৷ আর তাতে আপনার ক্যালরি কতখানি খরচ হবে৷ শোইন কোম্পানির এই ডিভাইসটির (http://www.youtube.com/watch?v=zwlFGoI_pRI) নাম ‘সাইকেলনা৷’
ছবি: Reuters
শরীরচর্চার তথ্য
‘তাও ওয়েলশেল’ (http://www.youtube.com/watch?v=E_kTVvpVpYg) ডিভাইসটি আপনি কতখানি দৌঁড়ালেন, আপনার হৃদস্পন্দন কত, সব আপনার স্মার্টফোনে জানিয়ে দেবে৷ এছাড়া ছোট্ট এই ডিভাইসটি দিয়ে আপিন যেকোনো সময়, যে কোনো অবস্থায় ‘আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ’ করতে পারবেন৷ চলতি বছরের শেষ ভাগে পণ্যটি কিনতে পাওয়া যাবে৷ দাম পড়বে ৩০০ ডলারের মতো৷
ছবি: Reuters
ম্যাজিক পার্কিং
শহর এলাকায় অল্প জায়গায় গাড়ি পার্কিং-এর কাজটি অনেকের জন্য জটিল৷ বিএমডাব্লিউ-র আইথ্রি মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িতে রয়েছে ‘পার্কিং অ্যাসিস্টেন্ট’, যেটা চালু করার পর চালক শুধু ব্রেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, আর গাড়ি নিজে থেকেই পার্কিং-এর জায়গায় চলে যাবে৷ এই লিংকের (http://www.youtube.com/watch?v=8Vj4xLCxwhw) ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হওয়া যাবে৷
ছবি: Reuters
আইফোন দিয়ে রান্না নিয়ন্ত্রণ
‘স্লো কুকার’৷ যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে যারা থাকেন তারা হয়ত এই ধরনের কুকারের (http://en.wikipedia.org/wiki/Slow_cooker) সঙ্গে পরিচিত৷ মার্কিন একটি কোম্পানি ‘ক্রোক-পট উইমো স্মার্ট স্লো কুকার’ (http://www.youtube.com/watch?v=T43NcPYMVZE) বের করেছে, যেটা আইফোনের জন্য তৈরি একটি অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷
ছবি: Reuters
বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভয়?
অন্তত শৈলেন্দ্র সুমনের সেটা নেই৷ কারণ তিনি এমন একটি এলইডি-বাল্ব উদ্ভাবন করেছেন যার মধ্যে ব্যাটারি রয়েছে৷ এর ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ব্যাটারি থাকার কারণে বাতিটি চার ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলতে পারবে৷
ছবি: Reuters
হাই-রেজুলিউশন ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি
এই টিভিগুলোর রেজুলিউশন এইচডি টিভির চেয়ে প্রায় চারগুন বেশি৷ তবে দুঃখের ব্যাপার, এ ধরণের সর্বাধুনিক টিভিতে দেখার মতো কোনো সিনেমা নেই৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
অধ্যাপক মোমবোর জানালেন, এখন পর্যন্ত যেসব রোবট তৈরি হয়েছে তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল সোজা বা বিপরীত দিকে হাঁটতে পারে৷ কিন্তু এবার তারা প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের মতো রোবট নির্মাণ করতে চান, যারা প্রয়োজনে নিজের গতি পাল্টাতেও সক্ষম হবে৷
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প সুনামি, দাবানল এমনকি দুর্ঘটনা – এগুলোর সময় মানুষকে উদ্ধারে সাহায্য করবে এসব রোবট৷ আর সেটা সম্ভব হলে সেটা যে একরকম অসাধ্য সাধন হবে, তা বলাই বাহুল্য৷ কারণ, তাহলে এই কোরোইবোট আগুনের মধ্যে হেঁটে মানুষকে উদ্ধার করতে পারবে, যা মানুষের পক্ষে সাধারণত সম্ভব নয়৷
বার্লিনের ‘ইনস্টিটিউট ফর ফিউচার স্টাডিজ অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাসেসমেন্ট'-এর সিনিয়র গবেষক রবার্ট গাসনার অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা৷ তাঁর মতে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এই ধরনের রোবট তৈরি একেবারেই সম্ভব নয়৷