1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অতিরিক্ত ভাড়া আরো বাড়াতে যাত্রীদের জিম্মি!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে পরিবহণ শ্রমিক-মালিকদের ধর্মঘটে আরেকটি দুর্ভোগের দিন পার করছেন যাত্রীরা৷ শ্রমিকদের এক অংশ ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, আগে থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার পরও তা আরো বাড়াতে জিম্মি করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে৷

ধর্মঘটে শনিবার বাসসহ বিভিন্ন যান চলাচল না করায় হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের মানুষছবি: Mohammed Shajahan/AA/picture alliance

পরিবহণ ধর্মঘটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের দুই দিন পার করলেন বাংলাদেশের মানুষ৷ এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও জনগণকে স্বস্তি দেয়ার মতো কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার৷ নিজেদের অবস্থান থেকে টলেনি মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোও৷ বরং শনিবার নতুন করে লঞ্চ মালিকরাও ধর্মঘটের ডাক দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেন৷ এখন শুধু সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেন চলাচল করলেও তা মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য যথেষ্ট নয়৷

শুক্রবার ছিলো ১৭টি নিয়োগ পরীক্ষা৷ এতে অংশ নেয়া সবাই চরম বিপাকে পড়েন৷ রোববার কর্মস্থলে যোগ দিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে রওনা হওয়া মানুষও গন্তব্য পৌঁছাতে নাকাল হচ্ছেন৷ পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় কাঁচাবাজারে এরইমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷

‘হঠাৎ করেই ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না’

This browser does not support the audio element.

ট্রাক মালিকরা ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট শুরু করলেও বাস মালিকরা তা করেননি৷ শ্রমিক ও মালিক সমিতি বলছে, তারা যার যার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন৷ কেউ ইচ্ছা হলে চালাবে, না ইচ্ছা হলে চালাবে না৷ বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কার্যকরী সভাপতি রুস্তুম আলী খান বলেন, ‘‘সরকার বুধবার রাত ১২টার পর থেকেই হঠাৎ করে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিলো৷ আমাদের কোনো সময় দিলো না৷ পথে আমাদের যেসব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ছিলো তাৎক্ষণিকভাবে খরচ বেড়ে গেল৷ তাই আমাদের হঠাৎ করেই ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাস মালিকরা ঘোষণা না দিলেও তারা ধর্মঘট করছেন৷ তাদের এই ধর্মঘটও যৌক্তিক৷’’

সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান দাবি করেন, ‘‘কোনো বাস মালিক বা শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট ডাকেনি৷ কিন্তু কেউ যদি মনে করেন তার ব্যবসায় লোকসান হবে তাহলে কি ব্যবসা চালাবেন? এখানেও তাই হয়েছে৷ তেলের দাম শতকরা ২৩ ভাগ বেড়েছে৷ ব্রিজের টোল ১৭ ভাগ বেড়েছে৷ এতে মালিকরা মনে করছেন বাস চালানো লোকসান, তাই চালাচ্ছেন না৷’’

এর সমাধান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘রোববার বিআরটিএ বৈঠক ডেকেছে৷ সেখানে আমরা তেলের দাম কমানোর দাবি করব৷ না কমালে ভাড়া বাড়াতে হবে৷’’

তেলের দাম না কমালে ভাড়া বাড়াতে হবে: শাজাহান খান

This browser does not support the audio element.

এদিকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের সাথে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠক করেছেন৷ সেখানেও কোনো সমাধান হয়নি৷ নেতারা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তাদের দাবী নিয়ে আবারো কথা হবে৷ তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন৷

আগে থেকেই ভাড়া বেশি

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে সরকারের ডিজেল-কোরোসিনের দাম বাড়ানো যেমন ঠিক হয়নি, তেমনি যাত্রীদের জিম্মি করে বাস-ট্রাক ও লঞ্চ ধর্মঘট করাও ঠিক হচ্ছে না৷ সংগঠনটির মহাসচিব মোাজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার যেহেতু রোববার আলোচনার জন্য বলেছে তাই তাদের রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিলো৷''

তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে যখন তেলের দাম বাড়ে তখন ভাড়া বাড়ানো হয়৷ ২০১৬ সালে যখন তেলের দাম কমানো হয় তখন কিন্তু ভাড়া কমানো হয়নি৷’’

তার মতে, মালিকদের বিনিয়োগ শুধু বাসে৷ তারা সড়ক উন্নয়ন বা সেতুর উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখেন না, সেটা হয় জনগণের ট্যাক্সের পয়সায়৷ ‘‘সেই জনগণের কাছ থেকেই গলাকাটা ভাড়া নেয়ার জন্য এখন তারা তাদের জিম্মি করছে৷ এটা অন্যায়৷ আমরা মনে করি সরকারের সাথে আলোচনা করে ভাড়া যাতে না বাড়ে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে,’’ বলেন মোাজাম্মেল হক৷

নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ডিজেল-কোরোসিনের দাম বাড়লেও পরিবহণ মালিকরা কৌশলে আগে থেকেই বেশি ভাড়া নিচ্ছেন৷ বাংলাদেশ শ্রমিক পরিবহণ লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন উদারহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘উত্তর বাড্ডা থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব হলো সাত  দশমিক আট কিলোমিটার৷ পুরো আট কিলোমিটার ধরলেও কিলোমিটার প্রতি এক টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে ভাড়া আসে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা৷ কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে আগে থেকেই ২০ টাকা৷ আবার ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ দূরত্ব হলো ২০০ কিলোমিটার৷ দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৪০ পয়সা হিসেবে ভাড়া হয় ২৮৪ টাকা৷ ফেরি এবং ব্রিজ মিলিয়ে ধরেন আরো ৪০ টাকা৷ তাহলে ভাড়া হয় ৩২৪ টাকা৷ কিন্তু আগে থেকেই ভাড়া নিচ্ছে ৪৫০ টাকা৷’’

তিনি বলেন, আগেই সিদ্ধান্ত আছে ডিসেম্বর থেকে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৫০ পয়সা বাড়বে৷ ফলে এমনিতেই ভাড়া বেশি নিচ্ছে৷ এখন আবার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ভাড়া বাড়াতে চায়৷ তারপর তারা ডিসেম্বরে আবার ৫০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানোর পায়তারা করবে৷ তার মতে, ‘‘এটা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সরকারের এটা দেখা উচিত৷’’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ঢাকা শহরের ভিতরে বাস সিএনজিতে চলে৷ সেক্ষেত্রে সিএনজির দাম না বাড়লেও ঢাকায় কেন বাস বন্ধ? ‘‘এখানে যারা মালিক তারাই আবার শ্রমিক৷ তাই স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা এটা করছে,’’ বলেন হানিফ খোকন৷

যখন তেলের দাম কমানো হয় তখন কিন্তু ভাড়া কমানো হয়নি

This browser does not support the audio element.

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান দেশের বাইরে থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘‘পরিবহন মালিকরা তেলের দাম বাড়ার যে হিসাব দিচ্ছেন তা ঠিক নয়৷ তাদের প্রকৃত ভাড়া কত হবে তাও হিসাব করতে হবে৷’’ তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন৷ এর আগে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারে শুক্রবার আহ্বান জানান সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও৷ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পরিবহণ মালিকদের দাবিতে ভাড়া বাড়লেও তা যেন জনগণের জন্য ‘সহনীয়’ হয়, সরকার সেদিকে দৃষ্টি রাখবে৷

উল্লেখ্য, বুধবার রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল ও কোরোসিনের দাম এক লাফে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা করা হয়৷

২০১৯ সালের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ