অতিরিক্ত সামরিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে হিমশিম জার্মানি
৫ মার্চ ২০২৩
ইউক্রেন যুদ্ধ জার্মানির মতো দেশের জন্যেও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ জোগাড় করার পাশাপাশি সরকারকে ভাবতে হচ্ছে অর্থ সমাজ কল্যাণে নাকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
অর্থই সবকিছু না, তবে অর্থ ব্যাতীত কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ খরচ মেটাতে জার্মান কোয়ালিশন সরকার যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সেটা বেশ হতাশার।
মধ্য মার্চে অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার ২০২৪ সালের ফেডারেল বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপস্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে তিনি তার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চান, তা হলো সংবিধানে উল্লিখিত তথাকথিত ঋণ বিরতি পুনর্বহাল করা, যা রাষ্ট্রের অর্জিত অর্থের ব্যয়কে সীমিত করে। করোনভাইরাস মহামারী শুরুর পর এই ঋণ বিরতি বেশ কয়েকবার স্থগিত করা হয়।
গত কয়েক মাস ধরে লিন্ডনার তার সহকর্মীদের সাথে বাজেট নিয়ে আলোচনা করছেন। আলোচনার অন্যতম ইস্যু হচ্ছে ঋণ বিরতি, যা কেবল তখনই করা যেতে পারে যখন সরকার প্রচুর সঞ্চয় করে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর জলবায়ু সুরক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ বিলিয়ন ইউরো বিশেষ ঋণের উপরে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয়েছিল। এরপর জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতির জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ নিতে হয়। এছাড়াও উচ্চ জ্বালানি খরচ মেটাতে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনগণের জন্য ২০০ বিলিয়ন ইউরো আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়েছিলো।
এই সব ঋণ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে নেয়া রেকর্ড পরিমান ঋণ এবং তারও আগে নেয়া ঋণের বাইরে নেয়া হয়। সব মিলে সরকারের উপরে এখন ২.৫ ট্রিলিয়ন ইউরো ঋণের পাহাড়। মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ঋণের সুদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে খুঁজতে হচ্ছে।
এদিকে, ২০২৪ সালের কর রাজস্বের পূর্বাভাস বলছে অর্জিত রাজস্ব সরকার বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট হবে না।
এরই মধ্যে ১০ লক্ষ শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করেছে এবং আরও আসছে। এতো বড় সংখ্যক মানুষের বাসস্থান ও দেখভাল করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকারগুলো পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে সমালোচনা করছে।
এসবের সমালোচনা করে তার দলের একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, আন্তর্জাতিক নীতি বাস্তবায়নের বেলায় মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন অবহেলা করা উচিত নয়।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নাকি সামাজিক কল্যাণ?
২০২২ সালের ছবিঘর
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বেশিরভাগ দেশে খাবার এবং ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে৷ বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে অনেক দেশে৷ একটা হামলা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Dong Jianghui/dpa/XinHua/picture alliance
জিনিসপত্রের দাম মারাত্মক বেশি
রুশ হামলার ফলে জার্মানির মানুষরা খুব ভুগছেন৷ জিনিসপত্রের দাম আচমকা অনেকটা বেড়ে গেছে৷ ১৯৮১ সালের পর চলতি বছরের মার্চে এত বেশি পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী রইলো জার্মানি৷ দেশটি এখনো রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture alliance
প্রভাব পড়েছে সুদূর কেনিয়ায়
নাইরোবির একটি পেট্রল পাম্পের ছবি৷ সারি বেঁধে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে৷ খাবারের দাম বেড়েছে, খাবারের জোগানও কমেছে৷ কেনিয়ায় জাতিসংঘের দূত মার্টিন কিমানি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: SIMON MAINA/AFP via Getty Images
তুরস্কে কে সরবরাহ করবে?
বিশ্বে বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া৷ রাশিয়া থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করায় অনেক দেশে রুটির দাম বেড়ে গেছে৷ তুরস্কে সরবরাহে ঘাটতি দেখা গিয়েছে৷ ইউক্রেন সারা বিশ্বে প্রথম পাঁচটি গম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগর সংলগ্ন বন্দর দিয়ে শস্য আমদানি করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Burak Kara/Getty Images
ইরাকে বাড়ছে দাম
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাগদাদের জামিলা মার্কেটে এক কর্মী বস্তা বস্তা আটা সাজিয়ে রাখছেন৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ইরাকের বাজারে গমের দাম আকাশছোঁয়া৷ সারা পৃথিবীর গম ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দখলে৷ ইরাক এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে৷ তবে পুটিনের সমর্থনে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দামেও প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে৷
ছবি: Ameer Al Mohammedaw/dpa/picture alliance
লিমায় প্রতিবাদ
সম্প্রতি পেরুর রাজধানী লিমায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ হয়েছে৷ খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ দেখান তারা৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই খাবারের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷
ছবি: ERNESTO BENAVIDES/AFP via Getty Images
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা
চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা৷ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় দেশটিতে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি, হাসপাতালে অপ্রতুল ওষুধ– সবমিলিয়ে রাজধানী কলম্বোয় রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সামনে প্রতিবাদে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ৷ জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট৷ এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা৷
ছবি: Pradeep Dambarage/Zumapress/picture alliance
প্রভাব পড়েছে স্কটল্যান্ডেও
যুদ্ধের ফলে খাবার এবং তেলের দাম বেড়েছে স্কটল্যান্ডেও৷ ব্রিটেনজুড়েও শ্রমিক সংগঠনগুলি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছে৷ ব্রেক্সিটের ফলে এমনিতেই ব্রিটেনে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
মাছের দাম কেমন?
নিজেদের জাতীয় খাবার নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে যুক্তরাজ্য৷ পরিসংখ্যান বলছে, বছরে প্রায় ৩৮ কোটি ‘ফিস অ্যান্ড চিপস’ খায় ব্রিটিশরা৷ কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই টালমাটাল পরিস্থিতির ফলে জোগানে টান পড়েছে৷ কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া থেকে মাছ, ভোজ্য তেল, জ্বালানি ইত্যাদি আসছে না, ফলে সবকিছুর দামই বাড়ছে৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ৷এখন তা আরো বেড়েছে৷
ছবি: ADRIAN DENNIS/AFP via Getty Images
নাইজেরিয়ার পরিস্থিতি
নাইজেরিয়ার ইফাবো এলাকার একজন বিক্রেতা বস্তায় আটা ভরছেন৷ দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা খাদ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে আফ্রিকার দেশটি৷ অন্য ক্ষেত্রেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ ইউক্রেন রুশ যুদ্ধের ফলে কি নাইজেরিয়ার সুবিধা হবে? নাইজেরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা খুলেছেন৷ তিনি প্রচুর ক্রেতা পাবেন বলেই মনে করছেন৷