অতীত থেকে শিক্ষা না নেয়ার অর্থ বর্তমান ও ভবিষ্যতকে হারানো
৬ জানুয়ারি ২০১৫![Kombobild Khaleda Zia und Sheikh Hasina](https://static.dw.com/image/17045158_800.webp)
বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য কারো যদি কোনো কারণের দরকার হয়, এই ঘটনাই তার জন্য যথেষ্ট৷ ইটিভি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের গ্রেপ্তার পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে তাঁর নিজের ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠায় অনেক কিছুই করতে প্রস্তুত৷ তবে এর ফলে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা সেটা দেখার বিষয়৷
জার্মান পাসপোর্টধারী আবদুস সালামকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ দাবি করেছে, গত নভেম্বরে ইটিভির একটি অনুষ্ঠানে ‘পর্নোগ্রাফিক ইমেজ' প্রদর্শন করা হয়েছিল৷ সেই বিষয়ে এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তবে ইটিভি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে৷ যে অনুষ্ঠানটি নিয়ে অভিযোগ, সেসম্পর্কে ইটিভির মুখপাত্র বলেছেন, অনুষ্ঠানটিতে ঘোলা করা ফুটেজ দেখানো হয়েছিল এবং সেটা সাংবাদিকতার নিয়ম মেনেই করা হয়েছে৷কারাবন্দি আবদুস সালাম ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, তাঁর নিউজ টিম সম্পাদকীয় স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ অন্যদিকে কেবেল অপারেটররা বলছেন, তাদেরকে ইটিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে, যদিও সরকার এ কথা এখন অস্বীকার করছে৷
প্রসঙ্গত, বিগত কিছুদিন থেকেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি হাসিনা সরকারের আচরণের সমালোচনা করে আসছে৷ তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি৷ তারা আরও অভিযোগ করেছে ২০১০ সালে ঢাকায় স্থাপিত তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল' ব্যবহার করে সরকার কার্যত তার প্রতিপক্ষকে ভীতসন্ত্রস্ত এবং দমন করে রাখছে৷
বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারির ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলেই সালামের গ্রেপ্তারের কারণ বোঝা যায়৷ ঠিক এক বছর আগে এই দিনে বিরোধী দলগুলোর বর্জন করা একটি নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন শেখ হাসিনা৷ সেই নির্বাচনের বছরপূর্তিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ায় শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয়ে আটক করে রেখেছে পুলিশ৷ এই সংবাদভাষ্য লেখার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ চলতি রাজনৈতিক সংকটের মাঝেই লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের একটি বক্তব্য প্রচার করে ইটিভি৷ তাহলে এ কারণেই কি গ্রেপ্তার কার হয়োছো ইটিভির চেয়ারম্যানকে? এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, একাত্তরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের আনুষ্ঠানিক ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করায় ডিসেম্বরে রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ শেখ হাসিনা মুজিবুর রহমানের কন্যা৷
রহমানের বক্তব্য প্রচারের মতো সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করা যেতেই পারে৷ কেননা গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিবিদের ‘রোল মডেল' তিনি নন৷ বরং দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবেই পরিচিত তিনি৷ তবে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সময় এরকম একটি বক্তব্য প্রচারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না৷ গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্ত গণমাধ্যম তথ্য প্রচারে এবং গণবিতর্ক আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ সংলাপ পারস্পরিক বোঝাপড়ার সুযোগ করে দেয়৷ আপোশ গণতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ তবে দৃশ্যত মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা জর্জ অরওয়েল-এর দর্শনই বেছে নিয়েছেন, ‘‘যে অতীতকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে ভবিষ্যতকেও নিয়ন্ত্রণ করে৷ আর যে বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে অতীতকেও নিয়ন্ত্রণ করে৷'' তবে হাসিনার এটা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, অতীত থেকে শিক্ষা না নেয়ার অর্থ হচ্ছে বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে হারানো৷