এখনই করোনা থেকে মুক্তির আশা দেখাতে পাচ্ছে না ডাব্লিউএইচও। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
বিজ্ঞাপন
ঠিক মতো ব্যবস্থা না নিলে করোনা ভাইরাস আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে। ক্ষতি হতে পারে আরও বেশি। যে দেশগুলি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঠিক মতো নিয়ম মানছে না, তাদের প্রতি ফের সতর্কবার্তা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনায় চাপ বেড়েছে অক্সিজেনের ওপর
করোনায় সরবরাহকারীরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন অক্সিজেন চাহিদার যোগান দিতে৷ এর সাথে পাল্লা দিয়ে অক্সিজেনের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে৷ বাসাবাড়িতে অপ্রয়োজনীয় সংরক্ষণ এবং মনিটরিংয়ের অভাবে এ সংকট তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rahsed
চলছে অক্সিজেন গ্রহণ
সরকারি একটি হাসপাতালের করোনা ‘আইসোলেশন কর্নারে’ এক রোগী অক্সিজেন মাস্ক পরে আছেন৷
ছবি: Mortuza Rahsed
হোম সার্ভিস
ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত কিন্তু করোনা রোগী নন এমন একজন রোগীর বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rahsed
সরবরাহ হচ্ছে হাসপাতালে
করোনা ডেডিকেটেড একটি হাসপাতালের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rahsed
জোড়াতালি
বেশ পুরাতন একটি সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসানো হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের মান থোরাই আমলে নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rahsed
ডিসপ্লে
অক্সিজেন বিক্রির একটি খুচরা দোকানে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নমুনা৷
ছবি: Mortuza Rahsed
শ্বাসকষ্ট
করোনা সন্দেহে এক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হয়েছে৷ অক্সিজেনের অভাবে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Mortuza Rahsed
মুমূর্ষু রোগীদের জন্য
দেশের শীর্ষস্থানীয় অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ লিঃ থেকে অক্সিজেন নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যাচ্ছে একটি পিকআপ৷
ছবি: Mortuza Rahsed
সরবরাহ
অক্সিজেন রিফিল করা শেষ, তাই সেগুলো ডেলিভারির জন্য একত্রিত করছেন একজন কর্মী৷
ছবি: Mortuza Rahsed
চাহিদা এতই বেশি যে...
চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় একটি অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় পুরোটাই হয়ে গেছে অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রিক৷
ছবি: Mortuza Rahsed
কর্মব্যস্ততা
নেই দম ফেলবার ফুরসত৷ স্থানীয় একটি অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে তাই উৎপাদনের কাজ চলছে ২৪ ঘন্টাই৷
ছবি: Mortuza Rahsed
আমদানি নির্ভরতা
কোম্পানিগুলো বলছে ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোর সবই আমদানি করতে হয়৷ যার কারণেই তৈরি হচ্ছে সংকট৷ বাড়ছে দাম৷
ছবি: Mortuza Rahsed
জরুরি ব্যবস্থাপনা
এই আপদকালীন সময়ে কোন ধরনের গোলযোগ যেন সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সেজন্য রাখা হয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা৷
ছবি: Mortuza Rahsed
12 ছবি1 | 12
সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, বেশ কিছু দেশ করোনা সতর্কতা মেনে চলছে না। ফলে সেখানে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনও নিয়ম পালন না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। নাম না করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের ইঙ্গিত যে অ্যামেরিকার দিকে, তা স্পষ্ট।
বস্তুত, এখনও করোনা ভাইরাসের ভরকেন্দ্র হয়ে রয়েছে অ্যামেরিকা। প্রায় ৩৫ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষের। নিউ ইয়র্কের পরে এ বার ফ্লোরিডায় সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। হিউস্টনের অবস্থাও বেশ খারাপ। তারই মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে লাগাতার বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কাউকে কাউকে পদ থেকেও সরিয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ, করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য কোনও পদক্ষেপই সময়ে নেননি ট্রাম্প। তারই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
শুধু উত্তর অ্যামেরিকা নয়, দক্ষিণ অ্যামেরিকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। এখনও পর্যন্ত সেখানে এক লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার অর্ধেকই ব্রাজিলে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও সেই একই অভিযোগ। সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যার ফল এখন ভুগছে দেশ। আক্রান্ত স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বলসোনারো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, লকডাউন ছাড়া কোনও উপায় নেই। অ্যামেরিকায় যেখানে যেখানে লকডাউন খোলা হয়েছে, সেখানে সেখানেই ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। ভারতেও একই ঘটনা ঘটেছে। ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, গোটা দেশকে দীর্ঘ দিন লকডাউনের মধ্যে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু এলাকা বেছে বেছে লকডাউন চালিয়ে যেতেই হবে। নইলে এই ভাইরাসকে ঠেকানো অসম্ভব।
করোনার কবলে প্রবাসীরা
বিদেশে প্রায় ১৬৮ টি দেশে ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশিরা৷ সেসব দেশের প্রায় সবই এখন করোনায় কম-বেশি আক্রান্ত৷ আক্রান্ত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও৷ অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন৷
ছবি: Reuters/E. Su
হাজার পেরিয়ে
ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে বিদেশের মাটিতে মোট ১৯টি দেশে অন্তত ১ হাজার ৩৭৭ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন৷ বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ হাজার৷ ৫ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পরিসংখ্যান দিয়েছে ব্র্যাক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Scrobogna
সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রাচ্যে
বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবাসী রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে৷ সেখানকার ছয়টি দেশেই এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Stringer
সৌদি আরবে মোট মৃতের ২৫ ভাগই বাংলাদেশি
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে মোট সোয়া দুই লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ ৫ জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন দুই হাজার ১০০৷ এর মধ্যে ৫২১ জনই বাংলাদেশি। অর্থাৎ, সৌদি আরবে করোনায় মৃতদের এক চতুর্থাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি। ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী সৌদিতে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি সংক্রমিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বড় অংশই অবশ্য সুস্থ হয়ে গেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ghani Bashir
আমিরাতে মোট মৃতের এক তৃতীয়াংশ
সৌদি আরবের পর করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ উপসাগরীয় দেশটিতে করোনায় মৃত্যুবরণকারী ৩২৮ জনের ১২২ জনই বাংলাদেশি৷ দেশটিতে মোট আক্রান্ত সাড়ে চার হাজার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
কুয়েতে আক্রান্ত চার হাজার
কুয়েতে চার হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত৷ এর মধ্যে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ গোটা দেশটিতে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৩৮২ জন৷
ছবি: picture-alliance/AA/J. Abdulkhaleg
ওমানে কুড়ি
ওমানে করোনায় এ পর্যন্ত ২০ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন৷ দেশটিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৩৬, পজিটিভ হয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. alHasani
কাতারেও অনেক আক্রান্ত
কাতারে ১২ হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত৷ এরমধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন৷ ৯ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে সর্বমোট এক লাখের উপরে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৪২ জন৷
ছবি: Imago Images/M. Gattoni
বাহরাইনে যেমন
বাহরাইনে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার বাংলাদেশি৷ এরমধ্যে মারা গেছেন নয় জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ১৫ হাজার, মৃত্যুও বাড়ছে
যুক্তরাজ্যে ৩০৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Cliff
সিঙ্গাপুরে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, মৃত্যু শূন্য
এখন পর্যন্ত প্রবাসে সবচেয়ে বেশি ২৩ হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে৷ তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক৷ তবে সেখানে তারা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন৷ দেশটিতে বাংলাদেশের কারো প্রাণহানির তথ্যও মিলেনি৷ একইভাবে প্রায় এক হাজার জন্য আক্রান্ত হলেও মালদ্বীপেও কোনো বাংলাদেশি মারা যাননি৷
ছবি: Reuters/E. Su
যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশিরা বিপাকে
সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ২৭২ জন৷ এই দেশটিতেও আক্রান্ত ১৫ হাজারের উপরে৷
ছবি: AFP/J. Eisele
ইটালিতে যথেষ্ট কম
ইউরোপে করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুগেছে ইটালি৷ দেশটিতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/M. Scrobogna
অন্যান্য
৫ জুলাই পর্যন্ত ক্যানাডায় নয় জন, সুইডেনে আট জন, ফ্রান্সে সাত জন, স্পেনে পাঁচ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন৷ ভারত, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় একজন করে বাংলাদেশির করোনায় মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
13 ছবি1 | 13
মুক্তি কবে
করোনার হাত থেকে মুক্তি কবে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি ডাব্লিউএইচও। তাদের বক্তব্য, অতীতে মানুষ যে ভাবে বেঁচেছে, অদূর ভবিষ্যতে তেমন দিন ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না ডাব্লিউএইচও। সামাজিক দূরত্বের নীতি বহু দিন পালন করে যেতে হবে বলেই তাদের বক্তব্য। শুধু তাই নয়, সামাজিক অনুষ্ঠানও আপাতত অসম্ভব বলেই তাদের অভিমত। ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, করোনার টিকা দ্রুত আবিষ্কার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন দেশে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। তবে আগামী বছরের আগে বাজারে টিকা আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর ভাইরাসও প্রকৃতি থেকে এমনি এমনি মিলিয়ে যাবে, এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই। ফলে ধরেই নিতে হবে, আরও বেশ কিছু দিন ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে সকলকে। এবং তার জন্য সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে।
ইমিউনিটি সম্ভব?
একবার করোনা হলে কি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়? দ্বিতীয়বার আর করোনা হয় না? এ প্রশ্ন এখন গোটা বিশ্ব জুড়ে। ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, এ বিষয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। সব তথ্য এখনও সামনে আসেনি। তবে একবার করোনা হলে আর হবে না, এমনটা ভাবার কারণ নেই। বস্তুত, ইংল্যান্ডের কিংস কলেজ একটি গবেষণা করছে এ বিষয়ে। তাতে বলা হয়েছে, তিনমাস পর্যন্ত অ্যান্টিবডি কাজ করতে পারে শরীরে। তারপর ফের করোনা হতে পারে। যদিও কিংস কলেজের গবেষণা এখনও শেষ হয়নি।
সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে করোনা থেকে মুক্তির কোনও আলো দেখাতে পারছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বরং আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শই তারা দিচ্ছে।