ওয়াশিংটনে বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্প, তুলোধুনো করেছেন মিডিয়াকে৷ অন্যদিকে জার্মানির ট্রাম্পসমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণে আনন্দ পেয়েছেন৷ বিশ্ব কি তবে অন্যদিকে হাঁটছে? প্রশ্ন ফল্কার ভাগনারের৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমাদের পরিচিত বিংশ শতাব্দীর সেই জগতটা আর নেই'' – কথাগুলো জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের, যিনি খুব শিগগিরই জার্মানির প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন৷ তাই কথাগুলো যে তিনি কোনোরকম চিন্তা না করে মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন, সে কথা বোধ হয় বলা যায় না৷ তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, স্টাইনমায়ারের সঙ্গে একেবারে একমত ফ্রান্সের চরম দক্ষিণপন্থি নেত্রী, ন্যাশনাল ফ্রন্টের মারিন ল্য পেন৷
ভুলে গেলে চলবে না, তিনি কিন্তু সেই বিশ্বনেতাদের একজন, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বপ্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷ ল্য পেনের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা একটা চেনা পৃথিবীকে শেষ হয়ে যেতে দেখছি আর প্রত্যক্ষ করছি নতুন একটি বিশ্বের জন্মকে৷''
প্রেসিডেন্ট হয়েই যা যা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে জনতার প্রশংসা করেন ট্রাম্প৷ বলেন, ‘‘আজ ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে আপনাদের হাতে৷’’
ছবি: Reuters/C. Barria
জনগণের হাতেই ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে জনগণের জয় হিসেবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ভিড়
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র শান্ত ছিল না৷ এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে৷ তারপরও তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষ৷ ট্রাম্প তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সবার জন্য শিক্ষা, সুরক্ষা, চাকরি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
প্রেসিডেন্টের কাছে জনতাই সব
‘‘আপনার-আমার সবারই এক দেশ, আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য, আপনাদের হৃদয়ই আমার হৃদয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
শুধু দেশের জন্য কাজ
ধনকুবের থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমার লক্ষ্য শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়া৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার’
ট্রাম্প ভাষণ শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে৷ এ সময় ওবামা দম্পতির প্রশংসা করেছেন৷ ওবামা ও মিশেলের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার৷’’
ছবি: Reuters/B. Snyder
অ্যামেরিকায় উগ্রবাদীদের জায়গা নেই
‘‘অ্যামেরিকার মানুষের আর ভয়ের কারণ নেই৷’’ এ কথা বলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, উগ্রবাদী ইসলামপন্থিদের সমূলে উৎপাটন করা হবে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
দেখুন বড় স্বপ্ন
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের এখন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে৷ বড় কাজের জন্য দেখতে হবে বড় স্বপ্ন৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ – এই তারিখটিকে অ্যামেরিকা চিরকাল স্মরণ করবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/C. Barria
‘অ্যামেরিকা উইল বি গ্রেট এগেইন’
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আজ থেকে এ দেশ চলবে নতুন দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আর তা হবে ‘অ্যামেরিকা প্রথম’৷’’ পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় থেকে বলে আসা ‘আমরা আবার একসঙ্গে অ্যামেরিকাকে মহান জাতির উচ্চতায় নিয়ে যাবো’ অঙ্গিকারেরও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Carr
10 ছবি1 | 10
স্টাইনমায়ার এবং ল্য পেনের এই কথাগুলোয় কি আপনি চমকে গেলেন? কিন্তু আপনার পর্যবেক্ষণ কি ঠিক সেই কথাই বলছে না? ব্রেক্সিট আজ এক চরম সত্য৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একের পর এক দেশের চরমপন্থি সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, ইইউ-র মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে যা খাপ খায় না৷ ইউরোপের রাজনীতি যেন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে – ব্রিটেন, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডে আজ ‘পপুলিজম'-এর জয়জয়কার৷ ফ্রান্সের পাশাপাশি আগামীতে জার্মানিতেও নির্বাচন৷ তাই অন্যান্য দেশের মতো এখানেও যে উগ্রপন্থা উঁকি দেবে না, তার কি কোনো ‘গ্যারান্টি' আছে? কারণ ইতিমধ্যেই যে রাজ্য সংসদে ঢুকেছে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দল এএফডি৷
‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা'
তাও যদি শুধু ব্রেক্সিট বা ইইউব্যাপী চরমপন্থার বিকাশ হতো, তা হলেও হয়ত হতো৷ কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির মোড়টাই ঘুড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প উঠে আসায়৷ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এতদিন সচেষ্ট ছিল অ্যামেরিকা৷ অন্তত কথার কথা হিসেবে সেটা মেনে নেওয়া যাক৷ কিন্তু এবার? ভবিষ্যতে মার্কিনিদের ভূমিকা কী হতে চলেছে, সে কথা ভাবলে চিন্তা হয় বৈকি! যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়াকে পুটিনের রাশিয়ার হাতে এক রকম ছেড়েই দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ বরং এখন তাদের দৃষ্টি ইসরায়েলের দিকে৷ আর তাই তো তেল আভিভ থেকে মার্কিন দূতাবাসটি উঠে গিয়ে বসতে চলেছে জেরুজালেমে৷
তার ওপর ইউরোপে ট্রাম্পের বন্ধুর অভাব নেই – ল্য পেন, এএফডি-র ফ্রাউকে পেট্রি অথবা নেদারল্যান্ডসে উগ্র-ডানপন্থি চিন্তার নায়ক গেয়ার্ট ভিল্ডার্স – সকলেই ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' পলিসিকে সমর্থন করেছে৷ আর সেটা তারা করেছে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থানের ইচ্ছা থেকেই৷
অথচ এই ইউরোপকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছিল৷ জোট বাঁধার গুরুত্ব, গণতন্ত্রের বিকাশ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা – এসব কি তাহলে আর এই নতুন পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য নয়? তা নাহলে কীভাবে সম্ভব হলো ব্রেক্সিট অথবা ট্রাম্পের বিজয়?
প্রতিবাদই একমাত্র পথ
তাহলে কি আর আশা নেই? বেঁচে নেই কোনো স্বপ্ন? আছে৷ ওয়াশিংটনকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী ‘ওমেন'স মার্চ'-ই তার উদাহরণ৷ অন্যায়-অবিচার-আঘাতের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ ও মুক্তির পথ এগিয়ে যাওয়াই যে এখন একমাত্র পথ৷ সেখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের অস্তিত্ত্বের প্রশ্ন৷ গণতন্ত্রের মন্ত্রে, সমানাধিকারে এখনও যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের যে এছাড়া কোনো পথ নেই৷
ফল্কার ভাগনার/ডিজি
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
২০১৬ সালের চমক সৃষ্টিকারী কিছু খবর
২০১৬ সালে বিশ্বে অনেকগুলো বড় ঘটনা ঘটেছে৷ কিছু ঘটনা চমকে দিয়েছে বিশ্বকে৷ এমন কিছু ঘটনার খবর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Victoria
উত্তর কোরিয়ার আস্ফালন
বছরের শুরুতেই উত্তর কোরিয়া বিশ্বকে চমকে দেয়৷ ৫ জানুয়ারি হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালায় দেশটি৷
মানুষের পরাজয়
এ বছরের ১২ মার্চ কৃত্রিম বা যন্ত্রের বুদ্ধির প্রভাবের কাছে মানুষের বুদ্ধির পরাজয়ের দৃশ্য দেখেছে বিশ্ব৷ বিশ্বের সেরা ‘গো খেলোয়াড়’-কে হারিয়ে জিতে যায় কৃত্রিম বুদ্ধির যন্ত্র ‘আল্ফা’৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Je
সাদিক খান যখন মেয়র
এ বছরের মে মাসে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন৷ ৪৬ বছরের সাদিক বড় ব্যবধানে নির্বাচনে জেতেন৷ যুক্তরাজ্যে একজন মুসলমানের এমন বড় পদে আসিন হওয়ার ঘটনা অনেককেই বিস্মিত করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Wigglesworth
পোকেমন-গো তে পাগল বিশ্ব
জুলাই এর ৬ তারিখে ভিডিও গেমস ‘পোকেমন গো’ বিশ্ব বাজারে আসে৷ দেখতে দেখতে ভিডিও গেমস প্রেমীরা ‘পোকেমন গো’-এ মশগুল হয়ে যায়৷ ভিডিও গেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এখন এই গেম৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Harris
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষ
জুলাই-আগস্টে মার্কিনী পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়৷ একের পর এক এ ধরনের ঘটনার খবর সংবাদপত্রে প্রচার হয়৷ ফলে বেশ কয়েকটি জায়গায় সংঘাত শুরু হয় কৃষ্ণাঙ্গ ও পুলিশের মধ্যে৷ দেখা দেয় বিক্ষোভ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Maury
ব্রেক্সিট
এ বছরের ২৪ জুন৷ ইউরোপের জন্য এক বিষাদের দিন৷ কেননা ব্রিটিশরা তাদের মতামতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় তারা আর ইউরোপের সঙ্গে থাকতে চায় না৷ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ডেভিড ক্যামেরন৷ আগামী বছর ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ব্রিটেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান
এ বছরের জুলাই মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনীর এক অংশ৷ কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ সংঘর্ষে তিনশ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ এর জেরে এখনও এর্দোয়ান বিরোধীদের উপর ধরপাকড় ও নির্যাতন অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/T. Adanali
রিও অলিম্পিক
দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পরও আগস্টে ব্রাজিলে সফল ভাবেই অনুষ্ঠিত হয় রিও অলিম্পিক৷ ৪৬ টি স্বর্ণ জিতে পদক তালিকার শীর্ষে ছিলো যুক্তরাষ্ট্র৷ চীনকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা করে নেয় ব্রিটেন৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
চিবক মেয়েদের ফিরে আসা
দু’বছরেরও বেশি আগে উত্তর নাইজেরিয়ার চিবক থেকে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছিল জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম৷ অবশেষে এ বছর অপহৃত বেশ কয়েকজন ছাত্রী ফেরত আসে৷ তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা ছিল৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/EPA/STR
নোট নিয়ে হাহাকার
৮ নভেম্বর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হঠাৎ করেই ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা দেন৷ সরকারের এই নির্দেশে হাহাকার পড়ে যায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে৷ অনেকের মৃত্যুও হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
ডোনাল্ড ট্রাম্প
সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এ বছরের নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনে জয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর বিরুদ্ধে নানা সমালোচনার পরও ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিন্টনকে বড় ব্যবধানে হারান তিনি৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে বিশ্ব রাজনীতিতে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে৷
ছবি: Time Magazine
ভুয়া খবর
ডোনাল্ড ট্রাম্প জেতার পর বছরের শেষের দিকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ভুয়া খবরের প্রসঙ্গ৷ ফেসবুক এবং গুগলে প্রকাশিত অনেক ভুয়া সংবাদ মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে – এরকম এক অভিযোগ ওঠার পর বিজ্ঞাপনের নীতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো৷