1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অধিকাংশ ধর্ষণের মামলায় ‘শাস্তি হয় না’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে অধিকাংশ ধর্ষণের মামলায় কোনো শাস্তি হয় না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় জটিলতা আরো বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা৷

ধর্ষণের শাস্তির দাবিতে ঢাকার রাস্তায় মাঝেমাঝেই প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখা যায় (ফাইল ফটো)ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনার অনুপাতে মামলার সংখ্যা কম৷ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত তিনবছরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই চিত্র৷

সংস্থাটির হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ১৭৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জন নারীকে৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন আট জন৷ কিন্তু মামলা হয়েছে মাত্র ৮১৩টি৷ 

‘তার রায় নিয়ে আমার কোনো কথা নেই’

This browser does not support the audio element.

২০২০ সালে এক হাজার ৬২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৩ জনকে৷ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৪ জন৷ আর মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪৪টি৷

আর ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৪১৩ জন৷ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে৷ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন৷ মামলা হয়েছে ৯৯৩টি৷

আসক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করে৷ তবে অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে না৷ আর যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে সেসব ঘটনায় ২০-৩০ ভাগ মামলা হয় না৷ কারণ সেগুলো স্থানীয়ভাবে মিটমাট করে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে আসক৷

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যত মামলা হয় তার সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ ভাগ মামলায় আসামিরা শাস্তি পান৷ আর শুধু ধর্ষণের হিসাব করলে এই হার আরো অনেক কম হবে৷'' 

মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ দুই ভাগের বেশি শাস্তি হয় না৷''

তিনি বলেন, ‘‘শাস্তির হার এত কম দেখে কেউ কেউ বলেন অধিকাংশ ধর্ষণ মামলাই মিথ্যা৷ কিন্তু তারা ঠিক বলছেন না৷ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হলে ধর্ষণের ঘটনা মিথ্যা হয়ে যায় না৷ মামলা দায়ের থেকে শুরু করে মামলার তদন্তসহ নানা কারণে আসামিরা বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগে ছাড়া পেয়ে যান৷''

আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় মেডিকেল প্রতিবেদনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় আদালত৷ কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারী ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য বা ঘটনা পরম্পরাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না৷ ফলে অনেক আসামিই ছাড়া পেয়ে যান৷

এলিনা খান বলেন, ‘‘ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করায় বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে৷ বিচারকরা এখন আরো বেশি সতর্ক হয়ে গেছেন৷ যেহেতু মৃত্যুদণ্ডের বিষয় তাই তারা কোনো ধরনের বেনিফিট অব ডাউট পেলেই খালাস দিয়ে দিচ্ছেন৷'' 

‘‘শাস্তির চেয়ে যেটা আগে বেশি প্রয়োজন তা হলো মামলা, মামলার তদন্ত - এই বিষয়গুলো ঠিকভাবে করা৷ আমাদের এখানে সব কিছুই যেন ধর্ষকের পক্ষে,'' বলেন তিনি৷

‘বিচারকের পর্যবেক্ষণ অসাংবিধানিক'

প্রসঙ্গত, বহুল আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ‘ধর্ষণ' মামলার রায়ে বৃহস্পতিবার পাঁচ আসামিকেই খালাস দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছাম্মৎ কামরুন্নাহার৷ রায়ের পর্যক্ষেণে তিনি বলেন, ‘‘৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়না৷ পুলিশ যেন ৭২ ঘণ্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়৷'' 

এখানে সব কিছুই যেন ধর্ষকের পক্ষে

This browser does not support the audio element.

বিচারকের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা নেয়া যাবে না, এমন পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷ বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে৷''

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তার রায় নিয়ে আমার কোনো কথা নেই৷ তবে তিনি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা সংবিধান বিরোধী৷''

‘‘ফৌজদারি মামলা কখনো তামাদি হয়না৷ তাই আমি আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেব৷ তিনি যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবেন,'' যোগ করেন তিনি৷

আলোচিত বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিচ্ছি৷ কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির৷'' 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ