যতক্ষণ তাদের অধিকারের কথা শোনা হবে না, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। এটাই ছিল কাবুলের রাস্তায় নারীদের স্লোগান।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার তাদের উপর চরম অত্যাচার চালিয়েছে তালেবান। কাবুলের রাস্তায় তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করতে গুলিও চালানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাড়িতে বসে থাকেননি কাবুলের নারীরা। বুধবার ফের তারা রাস্তায় নামেন। হাতে পোস্টার। যাতে লেখা, প্রাণ চলে গেলে চলে যাক, কিন্তু অধিকার আদায় করেই ছাড়ব। এদিনও নারী বিক্ষোভকারীদের উপর অত্যাচার চালায় তালেবান যোদ্ধারা।
মঙ্গলবারই অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি করেছে তালেবান। সেখানে একজনও নারী সদস্য নেই। এতদিন আফগান সরকারে যে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিল, তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। কাবুলের রাস্তায় যে নারীরা আন্দোলনে নেমেছেন, তাদের দাবি, সরকার এবং প্রশাসনে নারীদের জায়গা দিতে হবে। নারীদের কাজের অধিকার দিতে হবে। তারা আর বাড়িতে বসে থাকবেন না।
বুকে বন্দুক তাক করেও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না তালেবান
তালেবান সরকার গঠন করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ মূলত তালেবান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ বন্দুক তাক করে, ফাঁকা গুলি ছুঁড়েও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ তালেবান৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
মঙ্গলবার কাবুলে বড় একটি বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে৷ তালেবান ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করছে- এমন অভিযোগ তুলে হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷ গত রবিবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-র প্রধান ফায়েজ হামিদ দু’ দিনের সফরে কাবুলে যান৷ এ সফরে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি৷
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভ থামাতে ছুটে আসে বন্দুক
পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ থামাতে এক বিক্ষোভকারীর বুকে এভাবেই বন্দুক তাক করেন এক তালেবান যোদ্ধা৷ তারপরও বিক্ষোভ থামেনি৷
ছবি: REUTERS
‘আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তানে কী কাজ?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ স্থানীয় টেলিভিশনেও দেখানো হয় বিক্ষোভের খবর৷ সেখানে এক নারী বলেন, ‘‘আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশ রক্ষা করতে৷ আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান৷ আমরা জানতে চাই, তাদের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এখানে কেন? এখানে তার কী কাজ?’’
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভে বাধা
রাজধানী কাবুলে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল৷ মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র তালেবান যো্দ্ধারা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘তারা মুসলমান না’
কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া এক নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ তারা (তালেবান) অন্যায়কারী এবং তারা মোটেই মানুষ না৷ তারা আমাদের বিক্ষোভ করতে দিচ্ছে না৷ তারা মুসলমান না, তারা কাফের৷’’
ছবি: WANA/REUTERS
চারপাশে তালেবান
বিক্ষোভ মিছিলটি তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে তালেবান৷
ছবি: REUTERS
নারীদের ক্ষোভ
তালেবানবিরোধী এক বিক্ষোভ মিছিলের পাশ দিয়ে যাবার সময় গাড়ি থেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন এক নারী৷
ছবি: WANA/REUTERS
গনি সরকারের সমর্থন
মঙ্গলবারের বিক্ষোভের ছবি৷ এক বিক্ষোভকারী উঁচিয়ে ধরেন আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের পতাকা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
তালেবান ফেরায় আফগানিস্তানের নারীদের একটা অংশ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে তাই নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি৷ গত ৪ সেপ্টেম্বরও কাবুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন নারীরা৷
ছবি: Bilal Guler/AA/picture alliance
হেরাতেও নারীদের বিক্ষোভ
মঙ্গলবার হেরাত শহরেও নারীদের তালেবানবিরোদী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়৷ রয়টার্সকে এক নারী বলেন, ‘‘আমাদের চাকরি এবং সমাজে অর্জিত মর্যাদা রক্ষার জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে৷হয় এখন হবে, নয়তো কোনোদিনই নয়৷ হ্যাঁ, এমনই পরিস্থিতি এখন৷ আমরা সাহসী নই, আমরা আসলে নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য বেপরোয়া৷’’ ওপরের ছবিটি গত ২ সেপ্টেম্বরের৷
ছবি: Mir Ahmad Firooz Mashoof/Anadolu Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
আন্দোলন ও অত্যাচার
বুধবারের আন্দোলন থামাতে প্রায় নয়-দশ গাড়ি তালেবান চলে আসে বলে জানিয়েছেন ওই নারীরা। তাদের বেত দিয়ে মারা হয়। ব্যাটারি লাগানো ব্যাটন দিয়ে মারা হয়। যে লাঠি দিয়ে মারলে ইলেকট্রিক শক লাগে। সঙ্গে অকথ্য গালাগাল করা হয় বলেও দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের বাড়িতে যেতে বলা হয়েছে, কারণ, সেটাই তাদের জায়গা।
এতকিছুর পরেও আন্দোলনকারীরা পথ ছাড়েননি। আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। আগামী দিনেও তারা আন্দোলন জারি রাখবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তালেবানের অবস্থান
১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করার পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করেছিল তালেবান। সেখানে তারা আগের চেয়ে নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। নারী অধিকার রক্ষিত হবে বলেও জানানো হয়েছিল। আফগান নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে না, তারা শিক্ষার সুযোগ পাবে, কাজের সুযোগ পাবে, এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। যদিও বলা হয়েছিল, এই সবকিছুই হবে শরিয়তের নিয়ম মেনে।
বাস্তবে এখনো পর্যন্ত নারী অধিকার নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তালেবান। মন্ত্রিসভায় নারী নেই। নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও তুলে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র স্বাস্থ্যের কাজের সঙ্গে যুক্ত নারীদের বাড়ি থেকে বেরতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের ঘরে থাকার বিধান দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, নিরাপত্তা যতক্ষণ না সুনিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ নারীদের ঘরেই থাকতে হবে।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ
প্রতিবাদীদের অভিযোগ, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও একই কথা বলেছিল তালেবান। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখিয়ে তারা নারী অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তাই এবার তারা সেই ফাঁদে পা দেবেন না। তাতে যদি প্রাণ যায়, তাতেও তাদের আপত্তি নেই।