অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে আবার নতুন বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিল ইসরায়েল। ফলে বৃহত্তর আরব-ইসরায়েল শান্তি চুক্তির আশাও ধাক্কা খেলো।
বিজ্ঞাপন
আট মাস পর আবার অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসতি স্থাপনে উদ্যোগী হলো ইসরায়েল। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অসামরিক প্রশাসনের পরিকল্পনা কমিটি সেখানে নতুন বাড়ি তৈরিতে অনুমোদন দিয়েছে। এই বসতিতে এক হাজার ১৩১টি বাড়ি থাকবে। আরো ৮৫৩টি বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়াও চলছে। তার চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি আছে।
মাস খানেক আগে আমিরাত ও বাহরিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়েছে ইসরায়েলের। তখন তারা জানিয়েছিল, নতুন করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কোনো এলাকা নেয়া হবে না। কিন্তু এখন তারা অধিকৃত অংশে নিজেদের বসতি বিস্তার করছে।
ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিন
অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় ইসরায়েল আবার বসতি স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ায় ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিন। কারণ, পুরো ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা ও পূর্ব জেরুসালেম নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা চলছে। ইসরায়েলের নতুন বসতি তৈরির সিদ্ধান্ত শুধু যে সেই প্রয়াসকে বিঘ্নিত করছে তাই নয়, বৃহত্তর আরব-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি সম্ভাবনাও কমে গিয়েছে। এই চুক্তি তখনই সম্ভব, যখন ইসরায়েল এই অধিকৃত অংশ ফিলিস্তিনকে দিয়ে দেবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।
ছবি: Reuters/T. Brenner
8 ছবি1 | 8
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, ''আমরা সব দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে এই নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ করে। কারণ, এই উদ্যোগের ফলে প্রকৃত শান্তি চুক্তির প্রয়াস ধাক্কা খাবে।''
ইসরায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ভূখণ্ড অধিকার করেছিল ১৯৬৭ সালে। অ্যামেরিকা ছাড়া অধিকাংশ দেশই মনে করে, ইসরায়েল বেআইনিভাবে এই ভূখণ্ড অধিকার করে রেখেছে। ইসরায়েলের দাবি, ঐতিহাসিকভাবে গাজা ভূখণ্ডের উপর তাদের দাবি আছে। সেখানে ২৭ লাখ ফিলিস্তিনির পাশাপাশি সাড়ে চার লাখ ইসরায়েলি বসবাস করেন।
গত আট মাস ইসরায়েল চুপচাপ ছিল। ইসরায়েলের এনজিও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক পিস নাউ জানিয়েছে, এখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পুরোদমে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসতি স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অধিকৃত অংশের উপর ইসরায়েলের দাবি তিনি ছাড়বেন না।
করোনাকালে ইসরায়েলে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জয়প্রিয়তা কমেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু এখন অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসতি স্থাপনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেন।