1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অধ্যাপকদের সুনীতি শেখাবে কে?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৭ জুলাই ২০২০

চাকরি না কেড়ে নিলে, আর্থিক এবং সামাজিকভাবে গুরুত্বহীন না করতে পারলে অধ্যাপকদের দুর্নীতি রোখা সম্ভব নয়। প্রমাণ করে দিচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা।

প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

কলকাতার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মহলে হুলুস্থুল। আবারও এক যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। এবারে অভিযুক্ত বাংলার অন্যতম প্রমুখ কবি, যিনি একাধিক রাজসভা আলো করে আছেন। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর অধিষ্ঠান। এবং সেই পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে, নিজের পেশাগত পদটিরও নাকি চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছেন। একের পর এক ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্কহীন যৌন সংসর্গ করে এসেছেন বলে অভিযোগ ওই কবি–অধ্যাপকের পরিবারেরও। যে ছাত্রীরা সাহস করে সরাসরি এই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, তাঁরা বলছেন, পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার মতো ছ্যাঁচড়ামিও ক্রিয়াশীল থেকেছে তাঁদের থেকে যৌন–সুবিধা আদায় করার সময়। যদিও শেষ খবর হল, যে ছাত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত কবিপ্রবরের ফোন–আলাপ ভাইরাল হয়ে হইচই ফেলেছিল, সেই ছাত্রীটিকে নাকি এখন উল্টো সুরে গাইতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে যেখানে সবথেকে বেশি তর্ক–বিতর্ক, সেই সোশাল মিডিয়ায় তাঁকে বিবৃতি দিতে হয়েছে। আবারও একবার ওই কবি–অধ্যাপকের স্ত্রীকে ফোন করে নিজের ‘‌ভুল স্বীকার'‌ করতে হয়েছে। 

"অনৈতিক সুযোগ পাওয়ার ইচ্ছে আমাদের মধ্যে তৈরি হয়"

This browser does not support the audio element.

এই ক্ষেত্রে অপরাধের অকুস্থল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে এই অনাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বিভাগের ক্ষমতাবান অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, পক্ষপাতিত্ব থেকে শুরু করে নানারকম বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানাচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, নিজের সময়ে ছাত্র রাজনীতির সক্রিয় কর্মী এবং এখন এক গণ মাধ্যমের সাংবাদিক ঋষিগোপাল মন্ডল। তিনি খোলাখুলিই বললেন, ‘‌‘‌প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া দরকার, ভাল, উচিতও হবে, যে এটা, আমি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানি না, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ব্যক্তিগতভাবে জানি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক যে বিতর্কটা উঠেছে, সেটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আনাচে কানাচেই আছে। আমি যখন ছাত্রাবস্থায় ছিলাম, বা সাংবাদিকতার সূত্রে, আমিও কমবেশি এটার শিকার বলা যেতে পারে। যেটাকে নেপোটিজম বলা হচ্ছে আজকাল-এটা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এটা বাম আমলেও ছিল, আর এই বর্তমান আমলেও আছে।'‌'‌

চলতি বিতর্ক নিয়ে ঋষিগোপালের বক্তব্য খুব সোজাসাপ্টা, যে ব্যক্তিগত স্তরে কার সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, সেটা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা থাকা উচিত নয়, তাঁরও নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা আদৌ ব্যক্তিগত স্তরে নেই। যেহেতু অভিযুক্ত তাঁর ক্ষমতা এবং পদের অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো সামনে আসেনি। সব জায়গাতেই যে শরীর ছিল, তা নয়। কিন্তু পাইয়ে দেওয়ার যে রাজনীতি, সেটা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগেই আছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিসেবে, একজন বর্ধমানবাসী এবং একজন নাগরিক হিসেবে ঋষিগোপাল বলছেন, ‘‌‘‌এটা কোথাও না কোথাও থামা দরকার। হয়ত আমরা চাইলেই থামবে না, কিন্তু থামা দরকার এটা। যেটা সামনে এসেছে, তাতে অনেকটাই খোলসা হয়ে গেছে, যে আসলে কতটা কদর্য ছিল খেলাটা।'‌'‌ 

"যাদের কথা লোকে শুনবেন, তারা আশ্চর্য রকমের চুপ"

This browser does not support the audio element.

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধীনস্থ কাটোয়া কলেজে একসময় পড়াতেন, এখন কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের সঙ্গে যুক্ত শ্রীপর্ণা দত্ত বলছেন, ‘‌‘‌অধ্যাপককূলের সুযোগ নেওয়া, বা কাউকে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়া, কি ইন্টারনাল মার্কস্‌, কী এম ফিল, বা পিএইচডি, সেসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আগে যে পদ্ধতিতে এই ধরনের সুযোগ পাওয়া যেত, এখন সেই পদ্ধতির সম্পূর্ণ বদল ঘটেছে। এখন স্যার বা ম্যাডামের সঙ্গে যদি আমার পরিচিতি নাও বা থাকে, আমি যদি ‘‌নেট'‌, ‘‌স্লেট'‌ কোয়ালিফায়েড হই, হয়ে আমি যদি স্কলারশিপ পাই, সেক্ষেত্রে অধ্যাপক বা অধ্যাপিকা, যিনিই থাকুন না কেন, তিনি আমাকে তাঁর স্কলার হিসেবে নিয়োগ করতে বাধ্য। আইন অনুযায়ী। আমি নিজেও সেই সূত্রে গবেষণা করছি। এবার, একটা অনৈতিক সুযোগ পাওয়ার ইচ্ছে আমাদের মধ্যেও তৈরি হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের দিক থেকে। হয়ত যতটা নম্বর পাওয়ার যোগ্য আমি নই, বা যে সুযোগ, বা যে চাকরির ক্ষেত্রে, ধরা যাক যে ইন্টার্নশিপের (‌পরীক্ষা)‌ আমি পাস করার উপযুক্ত নই, সেই ক্ষেত্রগুলো উতরানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার একটা প্রথা চালু হল। সেটা কিছু ক্ষেত্রে টাকা হতে পারে, শারীরিক সম্পর্ক হতে পারে, বা আরও অনৈতিক অনেক কিছু হতে পারে।'‌'‌

তা হলে এই কুপ্রথা বন্ধের উপায় কী?‌ শ্রীপর্ণা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান। যে পদ, যে ক্ষমতার জেরে এই অন্যায় বছরের পর বছর চলে আসে, তা কেড়ে নেওয়া। ওই অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং সামাজিক মর্যাদা কেড়ে নিয়েই তাঁদের গুরুত্বহীন করে দেওয়াই একমাত্র উপায়। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ করা খুব জরুরি।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিযোগ পাওয়ার পর তা ধামাচাপা দিয়ে মুখরক্ষা করতেই বেশি ব্যস্ত থাকে। ঠিক যেমন অভিযোগকারীকে লাগাতার চাপ দেওয়া হয় ‘‌ভুল স্বীকার'‌ করতে। এই প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছেন ঋষিগোপাল মন্ডল। যে ‘‌‘‌যাঁদের আরও সামনে এগিয়ে আসা উচিত ছিল, যাঁরা ওপিনিয়ন মেকার, যাঁদের কথা লোকে শুনবেন, তাঁরা আশ্চর্য রকমের চুপ, গোটা ঘটনাতে। যাঁরা তাঁর (‌অভিযুক্তের)‌ পেট্রন ছিলেন। এটা হতাশাজনক।'‌'‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ