ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ‘বিশ্বকাপ’ হিসেইে স্বীকার করতে চাইতেন না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়৷ প্রয়াত এই সাহিত্যিক বলতেন, ১২-১৪ দলের একটা খেলা কী করে বিশ্বকাপ হয়!
বিজ্ঞাপন
ভাগ্যিস সুনীল বেঁচে নেই! এবার সেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছোট হয়ে ১০ দলের খেলা হয়ে গেছে৷ এই ঘটনা শুনলে তো ক্রিকেট বিশ্বকাপকে টুর্নামেন্ট বলেই মানতে চাইতেন না সুনীল৷ তবে এই ১০ দলের খেলা বলেই এবার অনন্য এক বিশ্বকাপ দেখতে চলেছি আমরা৷ গত কয়েক আসর ধরে বিশ্বকাপের যে অনিশ্চয়তা দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম, সেটা শেষ হতে চলল৷ লিগভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট এবার সত্যিই খুজে বের করবে ‘সেরা' দলকে৷ আর এ জন্যই মানতে হবে যে, এই ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে হতে চলেছে স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ক্রিকেট বিশ্বকাপ৷
সাবেক অধিনায়কদের চোখে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ
এবারের বিশ্বকাপ কেন আলাদা? কার ব্যাটে উঠবে ঝড়? কোন বোলার ত্রাস ছড়াবেন? সেরা অধিনায়কই বা কে হবেন? কতদূর যাবে বাংলাদেশ? কে নিতে পারে ট্রফি? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়করা৷
ছবি: Getty Images/Graham Chadwick/ALLSPORT
হাবিবুল বাশার
ফরম্যাটের কারণে এবারের বিশ্বকাপ জমজমাট হবে৷ কারণ, প্রথমত, কোনো দুর্বল দল এই আসরে খেলার সুযোগ পায়নি৷ দ্বিতীয়ত, সব দলকে সবার সাথে খেলতে হবে৷ ফেভারিট হিসেবে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখবো৷ বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে, তবে আমার বিশ্বাস পঞ্চম হতে পারে৷ আলোচনায় না থাকলেও, চমক দেখাতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ তবে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো, কারণ, তার ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
সাম্প্রতিক ফর্ম এবং হোম কন্ডিশন বিবেচনায় আমি ইংল্যান্ডকেই ফেভারিট মনে করি৷ অস্ট্রেলিয়ারও ভালো সম্ভাবনা আছে৷ তবে বড় আসরে পাকিস্তান সব সময়ই চমক দেখিয়ে থাকে৷ এবারের আসরে বাংলাদেশ দল নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী৷ আমার বিশ্বাস, নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে টাইগাররা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা রাখে৷ মুশফিকের ব্যাটিং সবার নজর কাড়তে পারে৷ মাশরাফির অধিনায়কত্ব বাংলাদেশ দলের সাথে বাকি দল গুলোর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে৷
ছবি: Ratan Gomes
মোহাম্মদ আশরাফুল
সেরা ১০ দল খেলবে এবারের বিশ্বকাপে, এই কারণে লড়াইটা বেশি হবে৷ আগের আসরগুলোতে গ্রুপে এক বা দুটি তুলনামুলক দুর্বল দল সুযোগ পেতো৷ এবার সেটা হচ্ছে না৷ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ রেকর্ড সন্তোষজনক না হলেও, এবারের দলটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে৷ ইংলিশদের শিরোপা জয়ের অপেক্ষার অবসান হতে পারে বলে আমি মনে করি৷ আফগানিস্তান বাকি দলগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: privat
আমিনুল ইসলাম বুলবুল
টি টোয়েন্টির কারণে ক্রিকেটে অনেক গতি এসেছে৷ তাই ব্যাটসম্যানরাই শাসন করবে এবারের আসর৷ সম্ভাবনা অনেকের থাকলেও ইংল্যান্ডের জস বাটলারকেই এগিয়ে রাখবো৷ এই ইংলিশ রয়েছেন দারুণ ছন্দে৷ বাটলার ছন্দে থাকলে এবারের আসরে তাঁর দল ইংল্যান্ড অনেক দূর যাবে৷ আর বল হাতে রশিদ খানের চমক দেখার অপেক্ষায় আছি৷ বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মঞ্চে এই লেগ স্পিনার ব্যাটসম্যানদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন৷
ছবি: Ratan Gomes
খালেদ মাহমুদ সুজন
আমি পুরো আসরে বাংলাদেশের চমক দেখার অপেক্ষায়৷ আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাবে৷ সাকিবের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ঘূর্ণি বোলিংয়ের সাথে তার অভিজ্ঞতা যে কোনো দলের বিপক্ষেই ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷ নিজের সেরাটা খেলতে পারলে শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আশা করি তামিমকে৷ আর অধিনায়ক মাশরাফি যে ছন্দে আছে তা আমাকে আরো আশাবাদী করে তুলছে বাংলাদেশকে নিয়ে৷
ছবি: privat
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
ইংল্যান্ডের পরই ভারত শিরোপার অন্যতম দাবীদার৷ এই দলে আছে কোহলি, ধোনির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বুমরার মতো বোলার৷ সব মিলে ভারত শিরোপা জিতলে মোটেও অবাক হবো না৷ ইংল্যান্ড হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আবেগের জায়গা৷ কারণ এখানে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের৷ বাংলাদেশকে বলতে চাই, আসরের ডার্ক হর্স, যে দলটা তিন বা চারটা জয় পেতে পারে৷ তবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার অধিনায়কত্বে পাল্টে যেতে পারে অনেক কিছুই৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
খালেদ মাসুদ পাইলট
ফেভারিটের তালিকায় সবার আগে ইংল্যান্ডকে রাখলেও আমার নজর থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর৷ এই দলটা বিশ্বকাপে এসে চোকার হয়ে যায়৷ আমার বিশ্বাস, এবার তারা কাউকে সুযোগ দেবে না৷ কঠিন হলেও বাংলাদেশের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা দেখছি৷ কন্ডিশন পেসারদের অনুকুলে হলেও বল হাতে নজর কাড়বে যে কোনো লেগ স্পিনার৷ আর ব্যাট হাতে ওয়ার্নার ও কোহলি শাসন করবে বলে আমার বিশ্বাস৷ অধিনায়কদের তালিকায় মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
আকরাম খান
ফরম্যাটের কারণেে এবার দল গুলোর ব্যবধান খুবই কম৷ সবার সমান সুযোগ থাকবে৷ তাই বাংলাদেশকেই আমি এগিয়ে রাখবো৷ অন্য দলগুলোর তুলনায় অভিজ্ঞতায় আমরা অনেক এগিয়ে৷ আর দলের তরুণ ক্রিকেটাররাও রয়েছে দারুণ ছন্দে৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া তিন জাতির সিরিজের ট্রফি জয় আমাকে আরো বেশি আশাবাদী করে তুলছে৷ জাসপ্রিত বুমরা যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ আর ব্যাটসম্যানদের তালিকায় কোহলিকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
8 ছবি1 | 8
১৯৭৫ সালে ৮টি দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ৬টি ছিল আইসিসির পূর্ন সদস্য এবং বাকি দুটি সহযোগী সদস্য দেশ৷ তখন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ এত কম ছিল যে, এটাই বেশ বড় আকারের টুর্নামেন্ট বলে বিবেচিত হয়েছিল৷ তা-ও কিন্তু সব দল সবার সাথে খেলেনি৷ ৮ দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করে হয়েছিল আয়োজন৷ ১৯৭৯ সালে ঠিক একই ফরম্যাটে আয়োজিত হয় দ্বিতীয় আসর৷ সবার সাথে সবার দেখা হলো না৷ ১৯৮৩ সালের তৃতীয় আসরেও ৮টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলল৷ ১৯৮৭ সালের চতুর্থ আসরেও দেখা গেল একই ঘটনা৷ ১৯৯২ সালে এসে প্রথম বিশ্বকাপের ফরম্যাট বদলায়৷
১৯৯২ বিশ্বকাপকে বলা যায় এবারের বিশ্বকাপের প্রকৃত পূর্বসুরী৷ সেবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ৯টি দল৷ সবার সাথে সবার খেলা হলো৷ এরপর সেরা চারটি দল সরাসরি খেলল সেমিফাইনাল৷ সেই সময়ই একটা প্রস্তাবনা ছিল যে, ক্রিকেট যেহেতু কম দেশের খেলা, এই ফরম্যাটটাই ধরে রাখা হোক৷ কিন্তু ১৯৯৬ সালে আবার ফরম্যাটে পরিবর্তন এলো৷
ততদিনে জগমোহন ডালমিয়াদের কল্যাণে ক্রিকেটের গায়ে বিশ্বায়নের বাতাস লেগেছে৷ ফলে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা মন্ত্র নিয়ে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপের আসর বসলো দক্ষিণ এশিয়ার তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশে৷ অংশগ্রহনকারী দেশের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হলো ১২৷ দুই গ্রুপে ৬টি করে দল খেললো৷ ফলে সবার সাথে সবার খেলার যে ধারা ১৯৯২ সালে দেখা গিয়েছিল, সেখান থেকে আবার সরে এলো বিশ্বকাপ৷ ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে ১২ দলকে নিয়ে দুই গ্রুপের খেলা হলো৷ এরপর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দল বাড়লো আরো দুটো৷ ১৪ দল এবার দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেললো৷
২০০৭ সালে একেবারে আনকোরা, মোড়কভাঙা এক পদ্ধতির বিশ্বকাপ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব৷ ১৬ দলের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে৷ এবার ৪টি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হলো খেলা৷ প্রত্যেক গ্রুপের সেরা দুই দল গেল পরের রাউন্ডে; নাম দেওয়া হলো-সুপার এইট৷ এই ‘সুপার এইট'-এর সব দল সবার সাথে খেললো৷ এখান থেকে সেরা ৪ দল গেল সেমিফাইনালে৷ সেটা ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ৷ বিশ্বায়নের পর্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বললেন, এটাই বিশ্বকাপের সেরা মডেল৷ কিন্তু এই মডেল থেকে সরে এলো আইসিসি৷
শতকের বিশ্বকাপ
ক্রিকেট ম্যাচে কোনো ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করছেন, সেটা দেখতে দর্শক হিসেবে ভালোই লাগে৷ আর যিনি করছেন, সেটি তাঁর এক অসাধারণ নৈপুণ্য হিসেবে থেকে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Kemp
১৬৫টি শতক
১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়৷ এখন পর্যন্ত হওয়া ১১ বিশ্বকাপে মোট ১৬৫টি সেঞ্চুরি হয়েছে৷ করেছেন ১০৩ জন৷ এর মধ্যে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সর্বোচ্চ ছয়টি শতক হাঁকিয়েছেন৷ এরপর আছেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং ও শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা৷ পাঁচটি করে সেঞ্চুরির মালিক তাঁরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির বিশ্বকাপ
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দর্শক সর্বোচ্চ ৩৮টি শতকের দেখা পেয়েছেন৷ এর আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১১ সালে৷ ঐ বছর সেঞ্চুরি হয়েছিল ২৪টি৷ এছাড়া ১৯৭৫ সালে ছয়টি, ১৯৭৯ সালে মাত্র দুটি, ১৯৮৩ সালে আটটি, ১৯৮৭ সালে ১১টি, ১৯৯২ সালে আটটি, ১৯৯৬ সালে ১৬টি, ১৯৯৯ সালে ১১টি, ২০০৩ সালে ২১টি এবং ২০০৭ সালে সেঞ্চুরি হয়েছিল ২০টি৷ ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতকের পর মাহমুদুল্লাহ৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Goodall
প্রথম সেঞ্চুরি
১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম দিনেই দুজন সেঞ্চুরির দেখা পান৷ এঁদের একজন ইংল্যান্ডের ডেনিস আমিস (ছবি) লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে ১৩৭ রান করেছিলেন৷ একই দিনে অন্য খেলায় নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে করেছিলেন অপরাজিত ১৭১ রান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Kemp
দ্রুততম শতক
আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়ান ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫০ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন৷ ব্রায়ানের ব্যাটিংয়ে ভর করে ইংলিশদের ৩২৭ রান টপকে গিয়েছিল আইরিশরা৷ ব্রায়ান শেষ পর্যন্ত ৬৩ বলে ১১৩ রান করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/T. Shaw
সবচেয়ে তরুণ সেঞ্চুরিয়ান
আরেক আইরিশ ক্রিকেটার পল স্টার্লিং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যখন সেঞ্চুরি করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর ১৯৬ দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Chowdhury
সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি
শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান ২০১৫ সালে ৩৮ বছর ১৩৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেছিলেন৷ এর মাত্র ১৩ দিন পর তিনিই আবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি সেঞ্চুরি করে বসেন৷ ফলে সেটিই এখন রেকর্ডের খাতায় উঠে গেছে৷
ছবি: Getty Images/Quinn Rooney
সবচেয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
১১ বিশ্বকাপের মধ্যে পাঁচটিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া৷ তাঁদের ব্যাটসম্যানরাই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিরও মালিক৷ দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া মোট ২৬টি শতকের মালিক৷ এর পরেই আছে ভারত (২৫) ও শ্রীলঙ্কা (২৩)৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
ফাইনালে ছয়জন
বিশ্বকাপ ফাইনালে এখন পর্যন্ত ছয়জন সেঞ্চুরি করেছেন৷ শুরুটা প্রথম বিশ্বকাপে৷ সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন৷ এরপর ১৯৭৯ সালে স্যার ভিভ রিচার্ডস, ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং, ২০০৭ সালে একই দলের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (ছবি) এবং ২০১১ সালে মাহেলা জয়াবর্ধনে সেঞ্চুরি করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
মেলবোর্নে সাতটি
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে মোট সাতটি সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া গেছে৷ ভেন্যু হিসেবে এই তালিকায় এর পরে আছে করাচি (ছয়টি)৷
ছবি: Reuters/Gray
9 ছবি1 | 9
২০১১ সালে আবারও সেই ২০০৩ সালের ফরম্যাটে ফিরে গেল উপমহাদেশের বিশ্বকাপ৷ ১৪ দল দুই গ্রুপে অংশ নিলো৷ তবে এবার বাড়তি হিসেবে যোগ হলো কোয়ার্টার ফাইনাল৷ ২০১৫ সালে, মানে সর্বশেষ আসরটিতেও হলো এই একই ধরনের বিশ্বকাপ৷ কিন্তু ২০১৯ সালের জন্য আইসিসি হঠাত্ করে দলসংখ্যা কমিয়ে একেবারে নব্বই দশকের শুরুতে চলে গেল৷ আর ফরম্যাটও করা হলো রবিন লিগ পদ্ধতির৷
এখন ক্রিকেট বিশ্ব এই বিশ্বকাপ নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত৷ এক দল মনে করেন, ক্রিকেটের মতো স্বল্প বিস্তৃত খেলার জন্য এটাই আদর্শ ফরম্যাট৷ কারণ, এখানে সবার সাথে সবার খেলা বলে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা কম৷ ফলে সত্যিকারের সেরা চারটি দলই সেমিফাইনালে যাবে৷
আবার ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা বলেন, ক্রিকেটের সৌন্দর্যটাই এই ফরম্যাটের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে৷ অঘটন ঘটার সম্ভাবনা শেষ করে দেওয়াতে একটা আয়ারল্যান্ড বা জিম্বাবোয়ের উত্থান দেখা কঠিন হয়ে গেছে বিশ্বকাপে৷ ২০০৭ বা ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড যেভাবে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল পাকিস্তান বা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে, সেটা এবার আর দেখা যাবে না৷ শুধু আয়ারল্যান্ড কেন, জিম্বাবোয়ের মতো ক্রিকেটের পুরোনো দলও এবার রয়ে গেল বিশ্বকাপের বাইরে৷
শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার তাই এই ফরম্যাটের সমালোচনা করেছেন৷
তবে সমালোচনা থাক আর প্রশংসা থাক; এটা মানতেই হবে যে, এই বিশ্বকাপ অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে আলাদা হতে চলেছে৷ সেটা শুধু ফরম্যাটের জন্য, তা নয়৷ আরো কিছু বিচারের জায়গা আছে৷ এবার বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে অন্যরকম রান উত্সবের একটা বিশ্বকাপ হওয়ার কথা৷
ইংল্যান্ডে এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ হচ্ছে৷ প্রথম তিন বার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ইংলিশরা৷ তখন ইংল্যান্ড থেকে বিশ্বকাপকে বের করার জন্য এশিয়াভিত্তিক একটা রাজনৈতিক সক্রিয়তাও হয়েছিল, যার অংশ হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল৷ এরপর আবর্তন নীতিতে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে থাকে৷ সেই নীতিতে ১৯৯৯ সালে আবারও বিশ্বকাপ হয়েছিল যুক্তরাজ্যে৷ কিন্তু এই ক্রিকেটের ‘মাতৃভূমিতে' কখনোই বিশ্বকাপ ঠিক রান উত্সবের আসর হয়ে ওঠেনি৷ এবার সেটা হওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে৷
ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাজ্যে যেসব ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশ রান উত্সব করছে৷ ফলে বিশ্বকাপেও যে সেটা হবে, তাতে খুব একটা সন্দেহ নেই৷
ইংল্যান্ড বলতে এক সময় মনে করা হতো বোলারদের খেলা৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের এই সময়ে সেখানে বল নড়াচড়া করবে, দারুণ সুইং থাকবে; এগুলোই সত্যি ছিল৷ কিন্তু ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি আসার পর থেকে সেখানে উইকেটের সেই মজাটা চলে গেছে৷ এখন ইংল্যান্ডে টেস্টেও ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়৷ ফলে ওয়ানডে এখন সেখানে রীতিমতো বোলারদের বধ্যভূমি৷
বিশ্বকাপে তিন শ রানটাই বিরাট ব্যাপার৷ কিন্তু এবার বিশ্বকাপে সাড়ে তিন শ' নিয়মিত স্কোর হয়ে উঠলেও তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷
তবে মজাটা হলো, সবটাই তো আর কিউরেটরের হাতে নেই৷ কিছুটা প্রকৃতির হাতেও আছে৷ এই সময়ে মাঝে মাঝেই ইংল্যান্ডের আকাশ ভারী হয়ে উঠবে৷ মেঘে ঢাকা আকাশে যতই বোলারদের বিরোধী উইকেট হোক, কিছুটা সুইং তো দেখা যাবেই৷ তাই ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষার জন্যই অপেক্ষা করা যাক৷
অপেক্ষা করা যাক সত্যিই অনন্য এক বিশ্বকাপের জন্য৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷