ফ্রান্সের ৪০ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এতদিন পর্যন্ত নিজেকে অনমনীয় ও দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী একজন অর্থনৈতিক সংস্কারক হিসেবে পরিচিত করে তুলেছিলেন৷ তবে এবার তাঁকে থামতে বাধ্য করা হলো৷
কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি দেশটির কম আয়ের মানুষ৷ তাই অক্টোবরে সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছিল৷ তাতে সাড়া দেন অনেক নাগরিক৷ ফলে গত কয়েক সপ্তাহান্তে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা হলুদ রংয়ের জ্যাকেট পরে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় এটি ‘ইয়েলো ভেস্ট' আন্দোলন নামে পরিচিত হয়ে ওঠে৷
এরপর মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডুয়া ফিলিপের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আলোচনায় বসতে রাজি হননি৷
এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ প্রশমন করতে মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে জ্বালানি করের প্রস্তাব ছয় মাস পিছিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ৷ সোমবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ এই সিদ্ধান্ত নেন বলে ফ্রান্সের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে৷
এছাড়া পুরনো গাড়ি ব্যবহারে যে জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটিও তিন মাসের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
তবে বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলের নেতারা সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারছেন না৷ আন্দোলনকারীদের নেতা বেঞ্জামিন কাউচি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সমস্যা সমাধানের ‘প্রথম পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি কর বাড়ানোর প্রস্তাব পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন৷
এদিকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যিনি মাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, সেই চরম ডানপন্থি নেত্রী মারিন ল্য পেন সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বিক্ষোভকারীরা কর বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন, স্থগিত নয়৷
উল্লেখ্য, ‘ইয়েলো ভেস্ট'দের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অতীতে উচ্চবিত্তদের উপর যে ‘সম্পদ কর' ধার্য ছিল সেটি আবারও ফিরিয়ে আনা৷ মাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই কর বাতিল করে দিয়েছিলেন৷ এর পক্ষে তাঁর যুক্তি ছিল, ধনী ব্যক্তিরা এতে উৎসাহী হয়ে বিনিয়োগ বাড়াবে, যা নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
আকর্ষণীয় কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান
শুধু সৌন্দর্য্য নয়, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বও মানুষের চেহারায় ফুটিয়ে তোলে আকর্ষণের ছাপ৷ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান জায়গা করে নিচ্ছেন বিশ্ববাসীর মনে৷ এমন কয়েকজনকে নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ
বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্যালারিতে সবার নজর কেড়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷ ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তবে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কাজ করেছেন ইউরোপ বিষয়কমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে৷ ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে ক্রোয়েশিয়ার দূত ছিলেন কোলিন্ডা৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ভ্লাদিমির পুটিন
১৯ বছর ধরে কখনও সরকারপ্রধান, কখনও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই রুশ গোয়েন্দা৷ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, ২০০০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি, ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আবার প্রধানমন্ত্রী, এবং এরপর থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুটিন৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া যে অবস্থান খুইয়েছিল, তার অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছেন পুটিন৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
এমানুয়েল মাক্রোঁ
ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷ ২০১৭ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ তরুণ রাজনীতিবিদ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে বিশ্বনেতাদের কাছে৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের খেলা চলাকালীন সময়ে ভিআইপি গ্যালারিতে মাক্রোঁ’র উত্তেজনা নজর কেড়েছে অনেকের৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
জাস্টিন ট্রুডো
৪৪ বছর বয়সে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন ট্রুডো৷ সুদর্শন এই তরুণের মন্ত্রিসভাকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় মন্ত্রিসভা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়৷ তাঁর মন্ত্রিসভায় আদিবাসী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের ক্যানাডিয়ান পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ এছাড়াও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাও তাঁকে তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/A. Wyld
বরুট পাহো
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট পাহো৷ অনেকটা আনুষ্ঠানিক পদ হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাহো বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে চলেছেন৷ ইউক্রেন সংকট নিরসন এবং ট্রাম্প-পুটিন বৈঠকে তাঁর আন্তরিক চেষ্টা ইউরোপের রাজনীতিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷
ছবি: Reuters/S. Zivulovic
এনরিকে পেনিয়া নিয়েটো
২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সুদর্শন এই মেক্সিকান৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙা, জ্বালানি খাত আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অর্থায়নসহ নানা উদ্যোগে মেক্সিকোর তরুণদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন৷