টেলিমেডিসিন, মানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোগী দেখা৷ ডাক্তার থাকেন তাঁর চেম্বারে, রোগী নিজের বাড়িতে৷ কিন্তু পাল্স থেকে শুরু করে ব্লাড প্রেশার, সব কিছু ভিডিও মারফত জানানো হয় চিকিৎসককে৷
বিজ্ঞাপন
হার্টের ক্রিয়া, রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের অনুপাত, ওজন: প্রতিদিন সকালে হান্স শিবান তাঁর স্ত্রীর সহায়তায় এই সব ভাইটাল ডাটা মাপেন; সেজন্য এই ৮০ বছর বয়সি হার্টের রোগীকে শহরে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয় না৷ ইন্টারনেটেই তাঁর সব ডাটা ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যায়৷ ডাক্তার বসেন ব্রান্ডেনবুর্গের টেলিমেডিসিন কেন্দ্রে৷ হাসপাতালের ডাক্তারের টিম হান্স শিবান ও তাঁর হার্টের ওপর নজর রাখছেন ঠিকই৷
ট্রং-গিয়া গুইয়েন-ডোবিনস্কি মেডিকাল ইনফরম্যাটিক্স-এর বিশেষজ্ঞ৷ তিনি একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক টেলি-ডায়াগনোসিস প্রণালী উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে ‘‘ডাক্তার দূর থেকে ভাইটাল ডাটা দেখতে পান, সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো দেখতে পান৷ তিনি ভিডিও দেখতে পান, রোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন৷'' শীঘ্রই এই এস্কুলিংক বা টেলিমেডিসিন পদ্ধতি জার্মান সি রেস্কিউ-তেও ব্যবহার করা হবে৷ অবশ্য টেলি-ডায়াগনোসিস সব রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা চলে না৷ টেলিমেডিসিন বিশেষজ্ঞ ট্রং-গিয়া গুইয়েন-ডোবিনস্কি বলেন, ‘‘প্রণালীটা কার্ডিওভাস্কুলার রোগ কিংবা স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপযোগী৷ ইন্টারনাল মেডিসিন সংক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রে প্রণালীটা অতো ভালো নয়, কারণ বাইরে থেকে বিশেষ কিছু দেখতে পাওয়া যায় না৷''
স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা প্রশ্নের উত্তর, সমাধান
জিহ্বায় সাদা আবরণ হয় কেন, পায়ে কড়া পড়ার কারণ কী অথবা হাতের নখ ভাঙে কেন? নাকের রক্ত বন্ধ করার উপায়ই বা কী? বিশেষজ্ঞের দেয়া এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Colourbox
নাক দিয়ে রক্ত পরা বন্ধ করবেন কীভাবে?
নাক দিয়ে রক্ত বের হলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভয় পায়৷ যা খুব সহজেই এটা বন্ধ করা সম্ভব৷ ছবির মতো করে দুই থেকে পাঁচ মিনিট নাক চেপে ধরে রাখলেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবার কথা৷ যদি না হয় একইভাবে আবার করতে হবে৷ এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে ‘আইসব্যাগ’ নাক এবং তার পাশে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে রক্তের ধমনী সংকুচিত হয়ে রক্ত পরা বন্ধ হবে৷ তবে সাবধান, কোনোভাবেই শুয়ে নয়, এতে ফল খারাপ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/O. Schulz
জিহ্বায় সাদা আবরণ কেন হয়?
অনেক সময় জিবে সাদা আবরণ দেখা যায়৷ ডাক্তারের কাছেও আমরা লক্ষ্য করি যে, অসুখ নির্ণয়ের জন্য তিনি জিহ্বা পরীক্ষা করেন৷ কিন্তু এমনটা হয় কেন? পেটের সমস্যা, কোনো সংক্রমণ বা রোগের লক্ষণ, মুখের ভেতরের জীবাণু বেড়ে যাওয়া বা ডায়বেটিস – নানা কারণ থাকতে পারে৷ এমনকি অতিরিক্ত জীবাণুনাশক ‘মাউথওয়াশ’ ব্যবহার করা থেকেও জিহ্বায় সাদা আবরণ দেখা দিতে পারে৷ তবে বেশি দিন যদি এই সমস্যা থাকে তবে ডাক্তার দেখানো উতিৎ৷
ছবি: BilderBox
পায়ের আঙুলে কড়া পড়লে কী করণীয়?
জুতোর মাপ ঠিক না হলে, অর্থাৎ জুতো পরে হাঁটার সময় পায়ের যেখানে চাপ পড়ে সেখানকার ত্বক শক্ত হয়ে যায় এবং তা বেশ বেদনাদায়কও হতে পারে৷ এক্ষেত্রে ‘স্যালিসিলিক অ্যাসিড প্লাস্টার’ ব্যবহার এবং পেশাদার ‘পেডিকিউর’-এর মাধ্যমে ‘ফুটবাথ’ করানো উচিত৷ টিপস: একটি বড় কিসমিস পায়ের কড়ার ওপর বসিয়ে, ভালো করে প্লাসটার দিয়ে আটকে দিন৷ এতে কড়ার চামড়া নরম হবে এবং কিসমিস থাকায় বালিশের মতো মনে হবে এবং ব্যাথাও কম লাগবে৷
ছবি: Fotolia/toscana
হাতের আঙুলের ভঙ্গুর নখ
শরীরে পুষ্টি এবং ভিটামিন ‘ডি’ এবং ‘বি’-এর অভাব হলে অনেকের হাতের নখ বারবার ভেঙে যেতে পারে৷ এছাড়া গৃহাস্থালীর কাজ বা অতিরিক্ত ‘নেলপলিশ রিমুভার’ ব্যবহারেও এমনটা হতে পারে৷ তাই এমন হলে ভালো করে বাদাম তেল বা অ্যাপ্রিকট তেল হাতে মাখলে উপকার পাওয়া যায়৷ তবে বেশ কয়েক সপ্তাহ পরও যদি এই সমস্য দূর না হয়, তবে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Maximilian Schönherr
রাতে হাত-পায়ের ব্যাথায় কী করবেন?
হাত বা পায়ের পেশিতে ব্যাথা যার হয়েছে, শুধুমাত্র সেই মানুষটিই এই কষ্টের কথা জানে৷ এটা অবশ্য তেমন ক্ষতিকর কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে৷ অথবা হতে পারে ‘হাইহিল’ বা উঁচু জুতো পরার কারণেও৷ সাধারণত, এই ব্যাথা কিছুক্ষণ হাত ও পায়ের ব্যায়াম করলেই চলে যাবার কথা৷ তবে মাঝে মাঝেই যদি এমন ব্যাথা হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই বাঞ্চনীয়৷ কারণ ব্যাথা মেরুদণ্ডের কারণেও হতে পারে৷
ছবি: Frédéric Cirou/AltoPress/Maxppp
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয় কেন?
সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে অনেকেরই খুব কষ্ট হয়৷ কিন্তু কেন? শারীরিকভাবে পুরোপুরি ‘ফিট’ না থাকা বা হার্টের অসুবিধা থাকলে এমনটা হতে পারে৷ তাই হার্ট বা হৃদপিণ্ডকে শক্ত রাখতে প্রতিদিনই সিঁড়ি ভাঙুন৷ ৪০০টি সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে ওঠা কিন্তু ১৫ মিনিট পার্কে জগিং করার সমান৷
ছবি: Colourbox
6 ছবি1 | 6
টেলিমেডিসিনে নিত্যনতুন সরঞ্জাম সৃষ্টি হচ্ছে৷ এই পন্থায় বুনিয়াদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু কিছু ঘাটতিও পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে৷ আশা করা হচ্ছে যে, এই পন্থায় ডাক্তারের চেম্বারে কিংবা হাসপাতালে রোগীদের ভিড় কমবে৷ তবে টেলিমেডিসিন কোনোদিন ডাক্তার আর রোগীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না৷ জার্মানির একটি নামকরা স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানির প্রতিনিধি মাইক গ্রিগার-এর তাই মত, ‘‘ডাক্তার ব্যথার জায়গাটা ছুঁয়ে দেখতে পারেন, স্পেশাল মাইক্রোস্কোপ দিয়ে লিভার স্পটটা পরখ করে দেখতে পারেন৷ টেলিমেডিসিনে এ সব করা সম্ভব নয়৷ অন্যান্য বহু রোগ ও পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও এ কথা বলা চলে৷''
ভবিষ্যতেও ডাক্তারখানাই রোগীদের প্রথম গন্তব্য থাকবে৷ কেননা জার্মানিতে যে কোনো চিকিৎসার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা দরকার৷ কিন্তু টেলিমেডিসিন হার্টের রোগীদের সত্যিই কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে৷ লেওনা শিবান ও তাঁর স্বামী হান্স শিবান খুশি যে, তারা এই বয়সেও একসঙ্গে থাকতে পারছেন৷ লেওনা শিবান বলেন, ‘‘প্রতিবারেই আমার ওটা খুব ভালো লাগে, প্রত্যেকদিনই যদি এ ভাবে ওকে চেক করা হয়৷ আমি বলব, এটা ওর জীবন বাঁচিয়েছে৷''
অনলাইন চেকআপের ফলে ৮০ বছর বয়সি হান্স শিবান আজও বাড়িতেই থাকতে পারছেন৷
রুটিন চেকআপ করুন, দীর্ঘজীবী হোন
প্রায়ই শোনা যায় রোগী ডাক্তারের কাছে যেতে দেরি করে ফেলায় আর কিছু করার নেই৷ তাই অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা বা নিয়মিত প্রয়োজনীয় ডাক্তারি ‘চেকআপ’ করালে সুস্থভাবে দীর্ঘজীবী হওয়া সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/E. Kharichkinan
জার্মানদের গড় আয়ু বেড়েছে
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে জার্মান পুরুষদের আনুমানিক গড় আয়ু ৭২ আর নারীদের গড় আয়ু ৭৮ বছর ছিল৷ ২০১২ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পুরুষদের ৭৮ বছর আর মহিলাদের ৮৩ বছর৷ এই গড় আয়ু বাড়ার কারণের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাবার, ডাক্তারি চেকআপ, সচেতনতা এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা৷
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
সচেতনতা না শনাক্তকরণ?
আগে থেকে সচেতন হলে কঠিন অসুখ হওয়ার প্রবণতা কমে৷ অন্যদিকে রোগ দ্রুত শনাক্ত করা গেলে, অর্থাৎ সময় থাকতে ডাক্তারের কাছে গেলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷ অনেক অসুখের ক্ষেত্রেই আগে থেকে চেকআপের ব্যবস্থা রয়েছে, যা সত্যিই উপকারে আসে৷
ছবি: MSF
জার্মানির স্বাস্থ্যবীমা
জার্মানিতে যাঁদের স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে, তাঁদের, অর্থাৎ নারী-পুরুষ সকলেরই ‘‘চেকআপ ৩৫’’ বা পুরো শরীর চেকআপ করানোর অধিকার আছে৷ এর জন্য বছরে অন্তত একবার পারিবারিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন৷ রক্ত, ব্লাড প্রেশার, ইসিজি, কিডনি, ডায়বেটিস, ক্যানসার ইত্যাদির পরীক্ষা তিনিই করিয়ে দেন৷
ছবি: Max Tactic - Fotolia.com
অন্ত্র বা পাকস্থলীর সতর্কতামূলক চেকআপ
৫৫ বছর বয়স থেকে প্রতিটি মহিলা এবং পুরুষদের পুরো অন্ত্রের পরীক্ষা করানো প্রয়োজন৷ ‘কোলোনোস্কোপি’ নামক এই পরীক্ষাটি একমাত্র পরীক্ষা, যা গোটা অন্ত্রের, অর্থাৎ বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের কোনো সমস্যা থাকলে তা ধরতে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Kaulitzki
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ফ্রাংকফুর্ট আম মাইনের ইয়োহান ভল্ফগাং গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার ডাক্তার ফ্যারদিনান্দ এম গ্যারলাখ বলেন, ‘‘অন্ত্রের ক্যানসার হওয়ার আগে ছোট্ট ‘পলিপ’ দিয়ে শুরু হয়, যা আগে ধরা পড়লে তা কেটে ফেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়া যায়৷ অবশ্য পাশাপাশি প্রতি দুই বছর অন্তর মলও পরীক্ষা করা উচিত৷’’
ছবি: picture alliance/dpa
স্তন ক্যানসার
মেয়েদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে৷ এর নিদিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা না গেলেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট, হরমন সেবন বা পরিবারের কারো ব্রেস্ট ক্যানসার থাকলে – স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ তবে যে মা শিশুকে বুকের দুধ পান করান, তাঁর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কম৷
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মেমোগ্রাফি চেকআপ
জার্মানিতে ৩০ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের জন্য স্তন ক্যানসারের চেকআপ রুটিন চেকআপের মধ্যে পড়ে৷ স্ত্রী বিশেষজ্ঞের কাছে প্রতি ছ’মাস অন্তর বিনা খরচে এই পরীক্ষা করা যায়৷ এছাড়া ৫০ থেকে ৬৯ বছর বয়সি নারীদের মেমোগ্রাফির পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে চিঠি লিখে মনে করিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
অনেক নারীরই অজানা
অনেক মহিলাই জানেন না যে মেমোগ্রাফি সচেতনতা নয়, স্তন ক্যানসার শনাক্ত করার অন্যতম উপায়৷ সময়মতো মেমোগ্রাফি করানো হলে এবং তাতে ক্যানসারে আক্রান্ত টিউমার সময়মতো ধরা পড়লে, মৃত্যুর ঝুঁকি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব৷ তাই নিয়মিত চেকআপ করাকে হাল্কাভাবে না নেওয়ারই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুরুষদের প্রস্টেট চেকআপ
পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের বেশি বয়েস হলে অবশ্যই ইউরোলজিস্টের কাছে প্রস্টেট ক্যানসারের পরীক্ষা করা উচিত৷ তবে যাঁদের পরিবারে প্রস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই আরো আগে থাকতে চেকআপ করানো উচিত৷
ছবি: picture alliance / dpa
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
আজকের এই যান্ত্রিক জীবনযাত্রায় মানুষের রয়েছে নানা রকম স্ট্রেস বা মানসিক চাপ৷ তাই শরীরে কোনো অসুবিধা বোধ না করলেও, বছরে একবার পুরো শরীরের ‘রুটিন চেকআপ’ করানো আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে৷