সাইবার বা অনলাইন হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে গত দেড় বছরে বাংলাদেশের সাইবার হেল্প ডেস্কে অন্তত ১২ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে, যার ৭৫ ভাগই ফেসবুকে হয়ারানির৷ সরকারের ধারণা, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি৷ তাই সরকার এবার তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ এই নিয়ন্ত্রণের তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ আরো বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং অনলাইন অ্যাপস, বিশেষ করে কথা বলার অ্যাপস৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানায়, বাংলাদেশ এর আগে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ঢাকায় অ্যাডমিন প্যানেল বসানোর অনুরোধ করলেও, তারা তা করেনি৷ আবার আপত্তিকর ‘পোস্ট' এবং ‘অ্যাকাউন্ট' বন্ধ করার আবেদনেও সাড়া দেয়নি তারা৷
তাই এবার বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সরকার টু সরকার' বা ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট' (জি টু জি) র্পযায়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই চুক্তি করবে৷ চুক্তি হলে ফেসবুক, টুইটার ও ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি বাংলাদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি৷
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দু'দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ করছে৷ তবে এর বাইরে হয়রানির পরিমাণও কম নয়৷ বাংলাদেশের জাতীয় দলের দু'জন ক্রিক্রেটারকে ফেসবুকে চরম হেনস্তা করা হয়েছে৷ এছাড়া নারীদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অহরহ৷
অবশ্য এই নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের৷ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু দিন ধরেই অনলাইনের ওপর নানা ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলছে৷ এটা তারা বলছে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের কথা বলে৷ কিন্তু বাস্তবে, এর বাইরে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে পুলিশ বা প্রশাসনের দক্ষতা কতটুকু – তা প্রশ্ন সাপেক্ষ৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের নানা গোয়েন্দা ‘ডিভাইস' আছে অনলাইন নজরদারির জন্য৷ এমনকি তারা ভাইবার কথোপকথন রেকর্ডেও সক্ষম হয়েছে এর আগে৷ আমরা দেখেছি রাজনৈতিক নেতাদের টেলিফোন সংলাপ রেবর্ড করা হয়েছে, হচ্ছে৷ কিন্তু অপরাধীদের টেলিফোন কলের রেকর্ড আমরা পাচ্ছি না৷ নিহত প্রকাশক দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর কল রেকর্ড পায়নি পুলিশ৷''
জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার জানান, ‘‘আমি এত কথা বললাম এ জন্য যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কন্ঠরোধ বা বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ অপরাধ শুধু অনলাইন কেন, নানা মাধ্যমেই হয়৷ তাই বলে সেই মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তার কোনো মানে নেই৷ পুলিশ বা গোয়েন্দারা তাদের তৎপরতার মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে, এটাই আমরা চাই৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তির চরিত্রহনন, যৌন হয়রানি বা নানা ধরণের উসকানির দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু এ সব ঘটনায় জড়িতদের আটক হতে আমরা না দেখলেও, মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে কোনো কথিত আপত্তিকর ‘স্ট্যাটাস' দিলে আমরা সেই স্ট্যাটাস-দাতাদের আটক হতে দেখি৷''
ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্লগাররা
04:07
তাঁর মতে, ‘‘নিয়ন্ত্রণের চেয়ে আইন এ সব সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকর হতে পারে৷ কিন্তু সাইবার অপরাধ দমনে যেসব আইন আছে, তা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা যায়, অপরাধীদের ধরা যায় না৷''
প্রসঙ্গ, সরকার অনলাইন সংবাদ-পত্র বা নিউজ পোর্টালকেও নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসছে৷ আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে৷ এরপর তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে নিবন্ধন দেবে৷
ডার্কনেটের ব্যবহার বাড়ছে
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে, তাতে সব সময় তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় পাওয়া নাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
ইন্টারনেটে তথ্য
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে৷
ছবি: imago/Schöning
মেটাডাটা
গুপ্তচর বিভাগ বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা’ সম্পর্কে৷ নেট ব্যবহারকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় মেটাডাটা৷
ছবি: Reuters
মেটাডাটার তথ্য
কে কাকে ই-মেল করছেন, সেই ব্যক্তির পরিচয়, সময় সম্পর্কে তথ্য থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগ পেতে চায়৷ প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
ডার্কনেটের ব্যবহার
ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রযুক্তিগত কারণে এখনো সরকার বা নিরাপত্তা কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারেন না৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
ফ্রিনেট
সবচেয়ে আলোচিত ডার্কনেটের নাম ফ্রিনেট৷ তাদের ওয়েবসাইটে গেলে বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়৷
ছবি: Reuters
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য
ফেসবুক এবং টুইটারে একজন ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানান না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানান৷ ব্লগে সমাজ সচেতনতা, মানবাধিকার, সরকার বিরোধী লেখাও লেখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে ডার্কনেট
বাংলাদেশে ডার্কনেটের ব্যবহার আগে না হয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যে সেটা শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷