অনলাইনে পাঠদান
১৭ জুলাই ২০১২এটা একটা অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে গেলে পাওয়া যাবে ঐ দুই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের লেকচার৷
অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ৷ বিষয়টা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে৷ এবার তাতে যোগ দিল অ্যামেরিকার দুই শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় - ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, এমআইটি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে এডএক্স নামের একটি অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা৷
‘এডএক্স'
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এডএক্স এর মাধ্যমে লেখাপড়া শুরু করতে পারবেন বিশ্বের যে কেউ৷ এজন্য প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ সহ একটি কম্পিউটার৷ এডএক্স'এ সাইন-আপ করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না বলে জানানো হয়েছে৷ তবে যে সফলভাবে কোর্স শেষ করতে পারবে তাকে ‘ক্রেডিট' দেয়া হবে এবং সেসময় একট নির্দিষ্ট ফি নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান এই প্রকল্পের প্রধান অনন্ত আগারওয়াল৷ এমআইটি'র কম্পিউটার সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ল্যাবেরও প্রধান তিনি৷
এডএক্স এর সাইটে অধ্যাপকদের ভিডিও লেকচার পাওয়া যাবে৷ প্রতিটি লেকচারের সঙ্গে থাকবে কুইজ৷ এছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রশ্নও করতে পারবেন৷ সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে৷ থাকবে অনলাইনে আলোচনার সুযোগ৷ ই-টেক্সটবুক আর অনলাইনে ল্যাবরেটরি ব্যবহারেরও সুযোগ থাকবে এডএক্স'এ৷
এ বছরের শুরুতে এমআইটি একটি অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল৷ যার নাম ‘এমআইটিএক্স'৷ এর আওতায় ‘ইনট্রোডাকশন টু সার্কিটস অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স' কোর্সে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷ আগারওয়াল বলেন, সারা বিশ্ব থেকে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্স করার জন্য নাম নিবন্ধন করেছিল৷ যার মধ্যে এখনো প্রায় বিশ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে কোর্সটা পড়ে যাচ্ছে৷
তিনি বলেন, শুরুতে এডএক্স এর মাধ্যমে চার বা পাঁচটি কোর্স অফার করা হবে৷ পরবর্তীতে সামাজিক বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিভিন্ন কোর্সেও পাঠদানের ইচ্ছা তাদের রয়েছে বলে জানান আগারওয়াল৷ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও যেন এডএক্স ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি৷
‘কোর্সএরা'
শুধু এমআইটি আর হার্ভার্ডই নয়, অ্যামেরিকার আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসেছে৷ এর মধ্যে বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড আর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে৷ আর বাকিগুলো হচ্ছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ বার্কলে অ্যাট ক্যালিফোর্নিয়া', ‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া' এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান'৷ এদের শিক্ষাব্যবস্থাটির নাম ‘কোর্সএরা'৷ এর মাধ্যমে তিন ডজনেরও বেশি কোর্স অফারের চিন্তা করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে গ্রিক মিথলজি থেকে শুরু করে নিউরোলজি, ক্যালকুলাস, অ্যামেরিকান পোয়েট্রি'র মত কোর্স রয়েছে৷
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দুই অধ্যাপক ডাফনে কোলার আর অ্যান্ড্রু নাগ কোর্সএরা'র উদ্ভাবক৷ সিলিকন ভ্যালির দুই কোম্পানি এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিয়েছে৷
অ্যান্ড্রু নাগ বলেন, প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অনলাইনে তাঁর পরিচালিত ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স' কোর্সের বেশিরভাগই শেষ করেছে৷ এর মধ্যে ১৩ হাজার শিক্ষার্থীই ‘সফলভাবে কোর্স শেষ করেছে' এবং তারা এই সার্টিফিকেট পেতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৯০টি দেশের শিক্ষার্থী কোর্সএরা'র কোর্সগুলোতে অংশ নিচ্ছে৷ এর মধ্যে অ্যামেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেন, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ভারতের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে৷
কিছু প্রশ্ন
অনলাইনে এভাবে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠদান শুরু করায় সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন সেটা নিশ্চিত৷ কিন্তু এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে৷ যেমন কোর্সএরা'র অন্যতম উদ্ভাবক অধ্যাপক কোলার মনে করছেন, এর ফলে মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ কেননা সেখানকার শিক্ষার্থীরা যদি অনলাইনে বিনামূল্যে বিশ্বের নামকরা অধ্যাপকদের লেকচার পেয়ে থাকে তাহলে কেন তারা টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবে?
আবার অনলাইনে কোর্স শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নয়, পাওয়া যাবে কোর্স শেষ করার একটা সার্টিফিকেট৷ কিন্তু সেটা কি জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করার মতো কিছু হবে, এই প্রশ্ন করেন অধ্যাপক কোলার৷
তবে আলোচনা যাই হোক, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই কোনো না কোনো ভাবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবে বলেই মনে করেন হল্যান্ডের ডেলফট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আঙ্কা ম্যুল্ডার৷
জেডএইচ / এএইচ (এএফপি, রয়টার্স)