1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ: সচেতনতাই রক্ষাকবচ

২ নভেম্বর ২০২৪

অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ আর ‘ডিজিটাল গ্রেপ্তারি' বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, জনসচেতনতা তৈরির মধ্য দিয়ে এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷

প্রতীকী ছবি৷
অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ আর ‘ডিজিটাল গ্রেপ্তারি' বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ ছবি: Silas Stein/IMAGO

গত রোববার আকাশবাণীর ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘ডিজিটাল গ্রেপ্তারি' নিয়ে জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ কীভাবে প্রতারকেরা সাধারণ মানুষকে জালিয়াতির ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করে, তার নমুনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷ কী কী বিষয় সতর্ক থাকতে হবে, তা নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দেন৷

জালিয়াতির কৌশল

জনতাকে বোকা বানানোর জন্য নিখুঁত ছক কষে প্রতারকেরা৷ বিভিন্ন সূত্র থেকে অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করে তারা৷ এর মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নিয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ অধিকাংশ সময় টেলিফোনে বা সামাজিক যোগাযোমমাধ্যমে কারো সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করে দুষ্কৃতিকারীরা৷

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সরকারি সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারেকরা৷ ইডি সিবিআই বা পুলিশের ভান ধরে কোনো একটি ভুয়া অভিযোগের কথা বলে৷ সাধারণভাবে কোনো গুরুতর অপরাধের কথা বলা হয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির ঘনিষ্ঠজনের অপরাধ সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়৷

বেশধারী প্রতারকদের চিনতে না পেরে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন ইন্টারনেট বা ফোন ব্যবহারকারীরা৷ কথার জালে জড়িয়ে তাকে ‘ডিজিটালি গ্রেপ্তার' করে অপরাধীরা৷ অভিযোগের বয়ান দিয়ে শিকারের কাছে অনলাইনে পাঠানো হয় অ্যারেস্ট মেমো৷ এই নকল মেমো দেখিয়ে টাকা চাওয়া হয়৷ অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধের হাত থেকে রেহাই পেতে জালিয়াতের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয় সাধারণ মানুষ৷ পরবর্তীতে তারা পুলিশের শরণাপন্ন হলে সামনে আসে জালিয়াতি চক্র৷

প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী

‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে সতর্ক করে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ডিজিটাল গ্রেপ্তারির জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকুন৷ আইনে এই ধরনের কোনো কিছুর উল্লেখ নেই৷ তদন্তের জন্য সরকারি সংস্থা কখনও আপনার সঙ্গে ফোনে বা ভিডিও কলে যোগাযোগ করবে না৷''

যদি কেউ যোগাযোগ করে, ঘাবড়ে না গিয়ে ধীরে সুস্থে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘থামুন, ভাবুন এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিন৷''

কোনো ফোন কল সন্দেহজনক হলে সেটি রেকর্ড করতে বলেছেন মোদী৷ আধুনিক ডিভাইসে স্ক্রিন রেকর্ড করার সুযোগ আছে৷ প্রয়োজনে সেই সুবিধা ব্যবহার করে কথোপকথন রেকর্ড করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর৷

তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সরকারি সংস্থা অনলাইনে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে অপরাধের কথা জানায় না৷ অ্যারেস্ট মেমো পাঠানো দূরের কথা, এই ধরনের ফোন এলে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সাইবার সহায়তা নম্বরে যোগাযোগ করার কথা বলেছেন মোদী৷ সেইসঙ্গে স্থানীয় থানাতেও বিষয়টি জানাতে বলেছেন৷

প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে বিষয়টি উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷দূরসংযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে গ্রামেও পৌঁছে গেছে মোবাইল পরিষেবা৷ এই জনতাও এসে গেছে জালিয়াতদের নাগালে৷ তাই প্রান্তিক মানুষদের সচেতন করতে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ এক্ষেত্রে ধনী দরিদ্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভেদ থাকছে না৷

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অমিত দুবে বলেন, ‘‘এমনটা নয় যে শুধু অল্পশিক্ষিতরাই এই সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন৷ উচ্চশিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন মানুষও এর কবলে পড়েছেন৷ এমনকি যারা দেশের আইন-কানুন ভালো করে জানেন, তারাও বাদ থাকছেন না৷''

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এটা মূলত জামতাড়া গ্যাংয়ের কাজ, যারা পুলিশ সেজে নকল থানায় বসে কার্যসিদ্ধি করে৷ হঠাৎ এমন ফোন এলে মানুষ হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, এর সুযোগ নেয় দুষ্কৃতিকারীরা৷''

ভারতে সাইবার অপরাধের বিস্তৃত জাল

13:07

This browser does not support the video element.

অপরাধের ধরন বদল

কোভিড পরবর্তী সময়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে৷ বদলে গেছে অপরাধের ধরন৷ দুষ্কৃতিকারীরা ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জগতে৷ শুধু ভারত নয়, উপমহাদেশে এই প্রবণতা বাড়ছে৷

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ কণিষ্ক গৌর বলেন, ‘‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ক্যাসিনোগুলো কালো টাকাকে সাদা করার একটা মাধ্যম ছিল৷ কোভিড পিরিয়ডে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই টাকা রোজগারের জন্য অন্য ব্যবস্থা করে ওই এলাকার অপরাধীরা৷ এই অপরাধের শিকার হন ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তানের জনসাধারণ৷ চাকরির সন্ধান করছেন এমন অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজেই এই জালিয়াতি শিকার হন৷''

অনলাইন প্রতারকদের কথাবার্তা তাদের প্রধান হাতিয়ার৷মানসিকভাবে শিকারকে কব্জা করার চেষ্টা করে তারা৷ এই কথার জাল ভেদ করতে চেতনা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷

সাইবার সাইকোলজিস্ট নিরালি ভাটিয়া বলেন, ‘‘এসব ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷ আমাদের অনলাইন জগতে কাউকে বিশ্বাস না করাটা অভ্যাস করতে হবে৷ অপরাধীরা একটা জরুরি অবস্থা তৈরির চেষ্টা করে৷ তারা আপনাকে বোঝাবে যে এখনই কাজটা করতে হবে, নইলে এর ফলাফল ভয়ানক হতে পারে৷ এটাই কোনো ব্যক্তির উপর মানসিক চাপ তৈরি করে৷''

সতর্কতা জরুরি

অনলাইন জলিয়াতদের উপর সরকারি নজরদারি পর্যাপ্ত নয়৷ তাই যারা অনলাইনে যুক্ত থাকেন, তাদের সতর্কতা সবচেয়ে জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের৷ আচমকা কোনো অপরিচিতের ফোনে সন্দেহজনক কথাবার্তা শুনলে কী করবেন?

‘ভিডিও কলে দুষ্কৃতিকারীরা রেকর্ড করে আরো ঝামেলা করতে পারে’

This browser does not support the audio element.

অমিত বলেন, ‘‘বুঝতে হবে যে পুলিশ এরকম কাজ করে না৷ পুলিশের ভিডিও কল বা স্কাইপ মারফত যোগাযোগ করার সুযোগ নেই৷ যখনই ভিডিও কলে পুলিশ টাকা-পয়সা দিয়ে আপস করার কথা বলবে, তখনই বুঝে নিতে হবে ব্যাপারটা ভুয়া৷ ফোনে পুলিশ কখনোই টাকা-পয়সা দিয়ে মিটিয়ে নেয়ার কথা বলবে না৷''

ভিডিও কল রিসিভ করা হতে পারে আরো মারাত্মক৷সন্দীপের মতে, ‘‘কখনও ভিডিও কলে যাবেন না৷ ভিডিও কলে গেলে দুষ্কৃতিকারীরা রেকর্ড করে আরো ঝামেলা করতে পারে৷ যদি কখনও বলে আপনার ছেলে-মেয়েরা থানায় আমাদের কাছে আছে৷ তখন কলটা কেটে দিয়ে ছেলে-মেয়েকে আগে ফোন করুন৷ ফোন করে নিজেকে পুলিশ বলে দাবি করলে কাউকে বিশ্বাস করবেন না৷ কারণ পুলিশ ওভাবে ফোন করে না৷''

ভাটিয়া বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না, কাউকে বিশ্বাস করবেন না৷ দুষ্কৃতিকারীরা অনেক হোমওয়ার্ক করে আসে, আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আপনার বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করবে৷ তারপরেই আপনাকে প্রলোভন দেখাবে৷ এসব থেকে বেরিয়ে আসুন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ