অনশনে নয়া দুই, আরো এক হাসপাতালে
১২ অক্টোবর ২০২৪আর জি কর মামলার সুবিচার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে লাগাতার অনশনে জুনিয়র চিকিৎসকরা। উৎসবের মধ্যে কমেনি আন্দোলনের ঝাঁজ।
অনশনে আরো দুই
জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশনের এক সপ্তাহ পার। গত শনিবার রাত সাড়ে আটটায় ছয়জন অনশন শুরু করেন। পরে যোগ দেন এক চিকিৎসক। অনশনকারীদের একজন অনিকেত মাহাতো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শুক্রবার রাতে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট জানায়, আরও দুই জন জুনিয়র চিকিৎসক আমরণ অনশন শুরু করছেন। শিশুমঙ্গল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের পিজিটি-র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া পরিচয় পণ্ডা। অন্যজন আলোলিকা ঘোড়ুই কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রথম বর্ষের পিজিটি। সবমিলিয়ে ধর্মতলায় আটজন চিকিৎসক অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ শুক্রবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। অনশন চালিয়ে যাওয়া স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, তনয়া পাঁজা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্যের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এবার তারা পাশে পাচ্ছেন নতুন দুই অনশনকারীকে।
অনশনে বসে পরিচয় বলেন, ‘‘কয়েকটা ওয়াশরুম, টয়লেট তৈরি করার কথা বলে সরকার দাবি করছে তারা আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছে। শুধু সিসিটিভি বসানোর জন্য এই আন্দোলন নয়। কেন এখনো স্বাস্থ্য সচিবকে সরাচ্ছে না রাজ্য? এটা তো একটা নির্দেশের মাধ্যমে হতে পারে। তার প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রমাণিত।''
আলোলিকার মন্তব্য, ‘‘আমাদের একজন সহযোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সরকার ভাবছে, এবার এরা অনশন থেকে পিছু হটবে। আর অনশন চালাতে পারবে না। তাই আমরা দুজন অনশনে বসেছি। আমাদের একজন হাসপাতালে গেলে আরো দুজন তৈরি আছে। আমরা এতোটাই মোটিভেটেড।''
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দুই পড়ুয়া সাতদিন ধরে অনশন করছেন। তাদের একজন আলোক বর্মা শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
পাশে একজোট সিনিয়ররা
সরকারি থেকে বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন আরো বেশি সংখ্যায়।
আরামবাগের প্রফুল্লচন্দ্র সেন মেডিক্যালের ৩৮ জন চিকিৎসক গণ ইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তারা পদত্যাগের ইচ্ছে জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনে। এর আগে আর জি কর সহ বিভিন্ন হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা ইস্তফা দেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গণ ইস্তফা পদত্যাগ হিসেবে গ্রাহ্য নয়। এটা নিয়োগকর্তা ও নিযুক্ত চিকিৎসকের বিষয়। তাই ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগের চিঠি না এলে এর বৈধতা নেই।''
পদত্যাগী চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘‘এই চিঠিটা ধোঁয়া, এর নীচে আগ্নেয়গিরি আছে। চিঠির শেষ লাইনে লেখা আছে, যদি রাজ্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে সিনিয়র চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত ভাবে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন।''
রাজ্যের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে বেসিরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতা। একের পর এক বড় হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ঘোষণা করছেন। সি কে বিড়লা, কোঠারি, উডল্যান্ডস এর চিকিৎসকরা সোম ও মঙ্গলবার জরুরি ছাড়া অন্য পরিষেবায় থাকবেন না। একই অবস্থান ফর্টিস, পিয়ারলেস হাসপাতালের।
সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কর্মবিরতির মেয়াদ বাড়তে পারে। রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর ফলে আউট পেশেন্ট বিভাগের পরিষেবা ধাক্কা খেতে চলেছে। চিকিৎসকরা শুধু জরুরি বিভাগে পরিষেবা দেবেন। ইন পেশেন্ট পরিষেবা চালু থাকবে।
ডা. অংশুমান মিত্র বলেন, ‘‘সরকারের শুভবুদ্ধি থাকলে তারা দাবিগুলি বিবেচনা করবে। চিকিৎসক খুনের বিচার থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবি মানা না হলে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সেটা স্বাভাবিক।''
ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকার সংবেদনশীল আচরণ করলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। আমরা জুনিয়রদের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব চিন্তিত। তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করুক, এটা আমরা চাই না।''
সিজিও অভিযান
আর জি করের চিকিৎসক খুনে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। সিবিআই প্রায় দুমাস তদন্ত চালিয়ে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে মূল অপরাধী হিসেবে সেই সঞ্জয়ের নামই রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের একটা অংশ।
প্রতিবাদে শনিবার পুজোর শহরে সিবিআই দপ্তরে অভিযান চালায় ১৩২টি গণ সংগঠন। করুণাময়ী থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থার দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে যায় বিশাল মিছিল। কয়েকজন প্রতিনিধি সিবিআই দপ্তরে যান।
সংগঠনগুলির অভিযোগ, সিবিআই চার্জশিট কার্যত পুলিশি তদন্তে সিলমোহর দিয়েছে। আর জি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার সাবেক ওসিকে সিবিআই গ্রেপ্তার করলেও কেন চার্জশিটে তাদের নাম নেই, এই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।