প্রতীকী অনশনে বসেছেন ভারতের প্রতিবাদী কৃষকরা। তাঁদের সমর্থন করছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
বিজ্ঞাপন
সমাধানসূত্র এখনো অধরা। দিনভর অনশনে বসলেন ভারতে বিক্ষোভরত কৃষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁরা প্রতীকী অনশনে বসেছেন। এতেও কাজ না হলে তাঁরা লাগাতার অনশন শুরু করবেন। দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় শুরু হয়েছে অনশন। কৃষকদের অনশন সমর্থন করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনিও কৃষকদের সঙ্গে অনশন শুরু করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
দিল্লির রাজপথের দখল নিচ্ছেন কৃষকরা
বিতর্কিত আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের কৃষকরা ভারতের রাজধানী দিল্লির পথে নেমেছে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: IANS
ব্যর্থ আলোচনা
রাজধানী দিল্লি ও হরিয়ানার সীমান্তে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন কৃষকরা৷ সদ্য পাস হওয়া কৃষি বিল মানতে না পারায় সরকারের সাথে আলোচনায় বসছে কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্ব৷ কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি৷ চলছে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ৷
ছবি: Moshin Javed
ছাড় নেই
কৃষকদের দাবির মুখে এখনো অনড় কেন্দ্রীয় সরকার৷ প্রতিবাদী কৃষকরা যাতে দিল্লির মূল রাস্তায় না ঢুকতে পারেন, সেজন্য যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Moshin Javed
কর্পোরেটের দখল
ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি সংসদে তিনটি কৃষি বিল পাশ করেছে৷ নতুন নিয়মের আওতায় এখন আর ফসলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে পারবেন না কৃষকরা৷ খোলা বাজারের নিয়ম মেনেই ঠিক হবে ফসলের দাম৷ কৃষকদের বক্তব্য, এই নিয়মের কারণে কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রভাব বাড়বে, কমবে ফসল ফলানো কৃষকদের অধিকার৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
ফসলের ন্যূনতম দাম
এমএসপি বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের ব্যবস্থা এতদিন নিশ্চিত করেছে ফসলের দাম৷ এই এমএসপির সুবিধা তুলে দেওয়ায় বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা কৃষকদের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
চাপে স্থানীয় নেতৃত্ব
যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব বলছে যে, এমএসপির সুবিধা সরানো হবে না, কৃষক সংগঠনগুলির মত, তবুও বাড়বে কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট হস্তক্ষেপ, যার কোপ এসে পড়বে ছোট চাষীদের ওপরেই৷ প্রতিবাদে বিজেপি কার্যালয়গুলির সামনে ও নেতাদের বাসস্থানের বাইরেও অবস্থানে রয়েছেন কৃষকরা৷ অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামাঞ্চলে, যেখানে কৃষিনির্ভর পরিবারের বাস, সেখানে সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
পাঞ্জাবের রাজনীতিতে প্রভাব
কৃষক সংগঠনগুলি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলকে এই প্রতিবাদে না টানলেও, তাদের এই প্রতিবাদ সরকারকে চাপে রাখছে৷ পাঞ্জাবে বহুদিন ধরেই বিজেপির জোটসঙ্গী আকালি দল, যারা চলমান প্রতিবাদের পরিস্থিতিতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে৷ বলা হচ্ছে, এমনটা তারা করেছে স্থানীয় সমর্থন না হারাতে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
সম্মানের, জীবিকার প্রশ্ন
পাঞ্জাবে একজন কৃষক গড়ে এক থেকে দুই হেক্টর জমির মালিক৷ তবে সেই জমি থেকে আয় খুব একটা বেশি নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তা যথেষ্টই হয়৷ ভারতের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২০ কোটি মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল৷ ফলে, তাদের জন্য এই প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
কিছু বদলাবে কি?
কৃষকদের মত, তাদের সমস্যা শুনতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ৷ উল্টোদিকে, কৃষকদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ, তারা ‘নতুন বিলগুলি ঠিক করে পড়েনি’, তারা‘অর্থনীতি বুঝতে নারাজ’, এবং তারা ‘অতীতেই আটকে আছে’৷ কৃষকরা ‘রাজনৈতিক ঘুঁটি’, এমনটাও শোনা গেছে সরকারের তরফে৷ কৃষকরা হলফ করে বলতে পারছেন না এখনো কতদিন পথ আঁকড়ে পড়ে থাকবেন৷ কিন্তু প্রতিবাদ থেকে সরে এলে তাঁদের কথা প্রচার করবার কোনো পন্থা থাকবে না বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
8 ছবি1 | 8
প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল, দিল্লি সীমানা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন কৃষকরা। সাম্প্রতিক কৃষি আইনের বিরোধিতা করে দুই মাস আগেই পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার একাংশের কৃষক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁরা দিল্লি সীমানায় চলে আসেন। দিল্লির সীমানায় হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের প্রায় সবকটি বর্ডার আটকে দিয়েছেন তাঁরা। এই প্রবল শীতে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে তাঁদের। কিন্তু সমাধান সূত্র মেলেনি। আইন প্রত্যাহারে রাজি নয় সরকার, কৃষকরাও নিজেদের দাবিতে অনড়। গোটা দেশের ৩৩টি কৃষক সংগঠন এই আন্দোলন চালাচ্ছেন। যোগ দিয়েছেন কয়েক লাখ কৃষক। সরকারের তরফে কোনো প্রতিশ্রুতি না মেলায় রোববারেই কৃষক নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সোমবার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁরা অনশন করবেন। যার পরেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দেন তিনিও অনশন করবেন। কৃষকদের হুমকি, এরপরেও সরকার তাঁদের দাবি না মানলে লাগাতার অনশন শুরু হবে। তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
এ দিকে সোমবার দুপুরেও কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কী ভাবে কৃষকদের আন্দোলন বন্ধ করা যায়, কেন্দ্র কতদূর পর্যন্ত মাথা ঝোঁকাতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকার অবশ্য এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানায়নি। অন্য দিকে, সিঙ্গু সীমানায় কৃষকদের সমর্থনে বহু গণ সংগঠন উপস্থিত হয়েছে। চলছে গান। প্রতীকী চাষও করেছেন কৃষকরা। রাস্তার মাঝে ডিভাইডারে সবজি লাগিয়েছেন তাঁরা।