সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ১৭ দিন ধরে চলা অনশন তুললেন জুনিয়র ডাক্তররা। মঙ্গলবার সর্বাত্মক ধর্মঘটও স্থগিত।
বিজ্ঞাপন
গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও সেখানে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। সোমবার রাতে তারাও অনশন তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে চিকিৎসাক্ষেত্রে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাকও দিয়েছিলেন জুনিয়ররা। আপাতত সেই কর্মসূচিও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে চলতি সপ্তাহেই আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি পালিত হবে। শনিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, প্রশাসনের অনুরোধে নয়, মৃত তিলোত্তমরা বাবা-মায়ের অনুরোধেই তারা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। বস্তুত, এদিন সন্ধ্যায় অনশন মঞ্চে গেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাদের উপস্থিতিতেই এদিন অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হয়।
ধর্মতলায় 'আমরণ অনশন' জুনিয়র ডাক্তারদের
ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে অস্থায়ী ভাবে মঞ্চ তৈরি করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ‘আমরণ’ অনশনে ছয় ডাক্তার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে
শুক্রবার রাতে সংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, কর্মবিরতি তুলে নিলেও যত দিন পর্যন্ত না তাদের সব দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন অবস্থান চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে এও জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দাবি মানা হলো না, অনশন শুরু
শনিবার রাতে ঘোষণা করা হল, সেদিন থেকেই আমরণ অনশনে বসবেন তারা। জানালেন, তারা কাজে ফিরছেন কিন্তু খাবার খাবেন না। জানানো হলো, অনশনে বসছেন ছয় জন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্যকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কারা অনশনে
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, স্নিগ্ধা হাজরা, তনয়া পাঁজা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য।
ছবি: Subrata Goswami/DW
যুক্ত হলো আরজি কর
প্রথমে আরজি করের কেউ এই অনশনে ছিলেন না। রবিবার সন্ধ্যায় অনশনে যোগ দেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘দাবি পূরণ না হলে বা মৃত্যু না হলে অনশন চলবে। যাঁরা অনশনে বসছেন, তাঁরা নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাসী। তবে তাঁদের কিছু হলে দায় রাজ্য সরকারের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তার তনয়া পাঁজাকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাধারণ মানুষের সমর্থন
জুনিয়র ডাক্তার সাহস জোগাতে শহর বা শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে জরো হচ্ছেন মানুষ। ডানকুনি থেকে এসেছেন কুমকুম গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর প্রতিবেশী। তাঁদের আবাসনের ছেলে অনুষ্টুপ অনশনে শামিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আসছেন তারকারাও
মনোবল বাড়াতে উপস্থিত হয়েছেন চিত্রতারকা বাদশা মৈত্র।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুজোর বেড়ানো বাতিল করে
পুজোয় সপরিবার বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল টালিগঞ্জের বিজয়েন্দ্র চক্রবর্তীর। জয়নগর কুলতলির ধর্ষণ আর জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন, এই দুই ঘটনার পর বেড়ানো বাতিল করে অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন পোস্টার হাতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিনিয়র ডাক্তাররাও আসছেন
আর জি কর থেকেই ১৯৮০ সালে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন শিবপ্রসাদ রায় চৌধুরী। সন্তানের বয়সিরা অনশনে বসেছে। বাড়িতে বসে থাকতে পারলেন না। বললেন, “ সরকারি তরফে একজন সেক্রেটারি লেভেলের কেউ এসে অন্তত কথা বলতে পারতেন। বড় হৃদয়হীন এই সরকার।”
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রশাসনের বাধা
এই মঞ্চ বাঁধতেও বাধা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। যে ডেকোরেটরের লোকজন এই মঞ্চ বাঁধতে এসেছিলেন, তাঁদের হুমকি দিয়ে দরিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। এরপর আন্দোলনকারীরা নিজেরাই মঞ্চ বেঁধে নেন। জানালের ডাক্তার সোহম পাল। অনশনকারীরা ছাড়াও মঞ্চে রয়েছেন অসংখ্য জুনিয়র ডাক্তার। সোহম তাঁদেরই একজন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বায়ো টয়লেটেও বাধা
বায়ো টয়লেট বসাতেও দেওয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। উলুবেরিয়া মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার ঊর্মিমালা ভট্টাচার্য বললেন, “আমরা সরকারকে দিতে বলছি না, আমাদের সিনিয়রেরাই আমাদের জন্য বায়ো টয়লেট-এর বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন, কিন্তু এখানকার পুলিশ সেই অস্থায়ী টয়লেট নামাতে দেয়নি গাড়ি থেকে।”
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিজেরাই বানালেন
জুনিয়র ডাক্তাররা তারপর নিজেরাই বায়ো টয়লেট বানান। ধর্মতলায় অনশন মঞ্চের কাছে কয়েকজন এই বায়ো টয়লেট তৈরির কাজে ব্যস্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কথা বলে
অনশনকারী ডাক্তারদের শারীরিক পরীক্ষা চলছে ধর্মতলার মঞ্চে। কেউ বসে আছেন। কেউ ঘুমোচ্ছেন। কেউ বাকিদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে অনশনকারী এসএসকেএমের জুনিয়র ডাক্তার অর্ণব মুখোপাধ্যায়কে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতীকী মূর্তি
সিনিয়র ডাক্তারেরাও অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের তরফে তা ঘোষণা করা হয়েছে। রিলে অনশন করবেন তাঁরা। জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। কবে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হবে। ছবিতে অনশন মঞ্চে বসানো নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রচুর পুলিশ
পুলিশ চিকিৎসকদের জানিয়েছিল, ওখানে বসা যাবে না। কিন্তু চিকিৎসকরা ততক্ষণে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছেন। এরপর অনশনের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে কেউ যোগাযোগ করেনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে মঙ্গলবার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পরও তা থেকে পিছিয়ে আসা হলো। সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েন, এমন কিছু তারা করতে চাইছেন না বলে ঘোষণা করেছেন তারা।
সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক হয় চিকিৎসকদের। বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, আলোচনায় তারা খুশি নন। যেভাবে এবং যে ভাষায় এদিন বৈঠকে তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত বলে জানিয়েছেন তারা। বস্তুত, এই দিনই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ হুমকি দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সার্বিক ধর্মঘট হলে, একজনও সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হলে জুনিয়র ডাক্তারদের নামে এফআইআর করা হবে।
এদিনের বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তররা বলেছেন, বৈঠকের একাধিক বিষয় নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রধানদের এদিন একটি কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের নয়, সরকারের। সরকারের এই বক্তব্য অগণাতান্ত্রিক বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি তাদের দাবি, থ্রেট কালচারের যে অভিযোগ তারা বার বার তুলছেন, তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য ইতিবাচক নয়।
সিনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনগুলিও জানিয়েছে, আন্দোলন এখনই বন্ধ হবে না। আগামীদিনে একের পর এক কর্মসূচি পালিত হবে। আলোচনার মাধ্যমে সেই কর্মসূচির কথা জানানো হবে।