রোববার রাতে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় পুলস্ত্যকে। মোট চারজন অনশনকারী সিসিইউতে।
বিজ্ঞাপন
সাতদিন টানা অনশন করার পর রোববার রাতে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্যকে। কার্যত অচেতন অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে।
মেডিসিনের প্রধান জয়দীপ দেব তাকে পরীক্ষা করে প্রাথমিক ওষুধ দেন। আরো কিছু টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জয়দীপ জানিয়েছেন, টানা সাতদিন অনশন করার ফলে পুলস্ত অচেতন হয়ে পড়েছেন। তার পেটে ব্যথা হচ্ছিল। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যাসিডের মাত্রায় তারতম্য হয়েছে। হাসপাতালে এনে দ্রুত সেলাইন চালানো হলেও তার অবস্থা এখনো সংকটজনক বলে জানিয়েছেন জয়দীপ।
পুলস্তের চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন। এর আগে শনিবার রাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় আরেক অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অনুষ্টুপকে। তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সংকট কাটেনি। আরজি করে এখনো ভর্তি অনিকেত মাহাতো। তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে অনশন করছিলেন অলোক বর্মা। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসায় সাড়া দিলেও অলোকের সংকট এখনো কাটেনি।
নারকেলডাঙার সরস্বতী কালীমাতা মন্দির পরিষদ ক্লাবের দুর্গাপুজোয় উঠে এসেছে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ। সেখানে মা দুর্গার মূর্তির সামনে রাখা হয়েছে চাদরে ঢাকা অভয়ার শোয়ানো মূর্তি। যা দেখে হাত দিয়ে মুখ ঢেকেছেন মা দুর্গা। সিংহও নতমুখ। মায়ের হাত অস্ত্রহীন। পাশে প্যান্ডেলে লাগানো চিকিৎসকের পোশাক ও স্টেথো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন আয়োজকরা
নারকেলডাঙা পুজোর উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সরকার জানিয়েছেন, নারীর উপর একের পর এক অত্যাচারের খবর আসছে। তাই তাদের থিম এবার লজ্জা। মা দুর্গা লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। তার বাহন সিংহও লজ্জায় নতমুখ হয়েছে। এভাবেই তাদের পুজো হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের পুজো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চতুর্থীর প্রদীপ
সোমবার ছিল চতুর্থী। সেই রাতে গিয়ে দেখা গেল, অভয়ার প্রতীকী মূর্তির সামনে ফুলমালা ও তার মধ্যে একটা প্রদীপ জ্বলছে। প্রতিবাদের আলো, অভয়াকে স্মরণ করার প্রদীপ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিবাদের পুজোয় অগ্রণী কাঁকুরগাছি যুবকবৃন্দ
কাঁকুরগাছি যুবকবৃন্দের পুজোর থিম পরিচয়। ৯৫ বছরে পা দেয়া এই পুজোর কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন, এবার পুজোয় থিম হবে পোশাকশিল্পী। আরজি করের ঘটনা সবকিছু বদলে দিল। তারা এটা জানলেন, পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত সাধারণ মধ্যবিত্ত বাবা-মা মেয়েকে চিকিৎসক করেছিলেন অনেক কষ্ট করে। তখন তারা থিমের কিছুটা বদল ঘটালেন। তাদের পুজো হয়ে উঠলো প্রতিবাদের পুজো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জীবন্ত রূপকার
এই পুজোর আরেকটি চমক হলো, জীবন্ত রূপকার। অর্থাৎ, দুইজন পোশাকশিল্পীকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা অভয়ার বাবা-মার প্রতীক। মন্ডপে দর্শকদের সামনে তারা কাজ করছেন। কৃত্রিম মেধা বা এআই ব্যবহার করে চিকিৎসকের প্রতীকী ছবি তৈরি করা হয়েছে। সেই ছবি দেয়া হয়েছে মণ্ডপে। বাকি মণ্ডপজুড়ে রয়েছে পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অনুসঙ্গ। কিন্তু প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে আছে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আয়োজকের বক্তব্য
এই পুজোর উদ্য়োক্তা শান্তনু সাহা জানিয়েছেন, তাদের থিম হলো 'রূপকার'। যারা আমাদের পোশাকের রূপ দেন তাদের নিয়ে এই পুজোর থিম করার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে যখন আরজি কর কাণ্ড হলো, তখন তারা মনে করলেন এই প্রতিবাদটা জরুরি। আর অভয়ার বাবা নিজেও পোশাকশিল্পী ছিলেন। ফলে তাদের মূল থিমের সঙ্গে প্রতিবাদের থিমও মিলে গেল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থিম যেখানে 'ব্রাত্য'
ভবানীপুর শিবমন্দিরের থিম হলো ব্রাত্য। সেই পুজোতেও রয়েছে প্রতিবাদের চিহ্ন। একটি যন্ত্রণাকতর মুখের ভাস্কর্য রয়েছে সেখানে। আর সেই মুখের গায়ে রয়েছে একটি মেয়ের ছবি। দেখলেই বোঝা যায়, এ কার যন্ত্রণা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় এবারের থিম হলো লাস ভেগাসের বিখ্যাত আলোর গোলক স্ফিয়ার। ১১ডি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ১১ দিক থেকে দেখা যাবে এই গোলকের মধ্যে মা দুর্গার অসীম শক্তির প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সেই পুজোতেও রয়েছে প্রতিবাদের সুর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ন্যায়ের দাবি
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা হলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এখানে পুজোর থিম 'স্ফিয়ার' হলেও পোস্টারে-ফেস্টুনে রয়েছে ন্যায়ের দাবি। যেমন এই বিশালকায় বোর্ডে লেখা রয়েছে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
আংশিক কর্মবিরতিতে বহু হাসপাতাল
এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের সংহতি জানাতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বহু বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও সোমবার থেকে আংশিক কর্মবিরতি শুরু করছেন। অ্যাপোলো, উডল্যান্ড, পিয়ারলেস-সহ প্রায় ৩০টি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসকেরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা তারা শুধুমাত্র জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করবেন। ওপিডি-সহ সমস্ত নন-এমার্জেন্সি পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এরপরেও যদি রাজ্য সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আন্দোলন আরো তীব্র হবে। বস্তুত, সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সোমবার থেকে এই আন্দোলন শুরু হলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এরপরেও যদি রাজ্য সরকার সমাধানসূত্র খুঁজতে আলোচনায় না বসে, তাহলে পরিস্থিতি আরো কঠিন হবে।''
মুখ্যসচিবের বৈঠক প্রস্তাব
সোমবার বেলা ১২টায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-সহ একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বেলা ১২টায় স্বাস্থ্যভবনে তাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, প্রতিটি সংগঠন থেকে দুজন করে প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন। তবে তাদের নাম আগে থেকে ইমেল করে জানিয়ে দিতে হবে।
সিনিয়র চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির সঙ্গে তারা সহমত। সরকার যত দ্রুত সেই দাবিগুলি মেনে নেবেন, তত দ্রুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংস্কার আনা সম্ভব হবে। বস্তুত, আইএমএ-এর সর্বভারতীয় প্রধান আগেই অনশন মঞ্চে এসে কথা বলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। তিনিও সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গেছেন আন্দোলনকারীদের।