পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশ, দলের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেবেন না।
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পেশ করা হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভোটাভুটি হবে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন ইমরান। এই অবস্থায় তিনি লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তার দলের সদস্যরা ভোটাভুটির সময় হয় ভোটদানে বিরত থাকবেন অথবা সেদিন অধিবেশনে যোগ দেবেন না।
দলের সদস্যদের চিঠি দিয়ে ইমরান বলেছেন, সব সদস্যকে এই নির্দেশ মানতে হবে। না হলে পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩(এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইমরান ওই চিঠিতে দলের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চিঠিতে উল্লিখিত যে কোনো একটি নির্দেশ অমান্য করলেই সদস্যরা দলত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩(এ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, দলীয় নির্দেশ না মানলে সদস্যপদ হারাতে হবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যকে। তাকে তখন বরখাস্ত করা যাবে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে ক্ষমতা হারাননি। ইমরান খান হলেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যাকে অনাস্থা প্রস্তাবের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ
ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে এসেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ এমন ঘটনা নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এর আগেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের রাজনীতির ময়দানে দেখা গেছে৷ ছবিঘরে তেমন কয়েকজনকে দেখে নিই চলুন৷
ছবি: bdnews24.com
ইমরান খান
ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ইমরান খান৷ ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খান৷ ১৯৯৬ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে৷ গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ ২০১৮-র সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Yam G-Jun
অর্জুনা রানাতুঙ্কা
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা৷ অবসর গ্রহণের পর তিনি লঙ্কান বোর্ডের নানা দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০০১ সালে রাজনীতিতে আসেন শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে৷ সে বছর কলম্বো থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন৷ পরে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ এখন তিনি বন্দর ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী৷
ছবি: AFP/Getty Images
সনত জয়াসুরিয়া
সনত জয়াসুরিয়া সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারদের একজন৷ মাশরাফির আগে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ ২০১০ সালে তিনি মাতারা’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন৷ মাহিন্দা রাজাপাকশে’র মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন৷
ছবি: AP
কীর্তি আজাদ
কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন৷ ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগমত ঝা আজাদের পুত্র কীর্তি৷ তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন লোকসভার নির্বাচিত সদস্য৷
ছবি: imago/Hindustan Times
নভজোত সিং সিধু
সিধু’র ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন৷ বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন৷ জিতেও যান৷ ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত হলেও বিজেপি ত্যাগ করেন৷ ২০১৭ সালে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ পূর্ব অমৃতসর থেকে নির্বাচনও জেতেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ভারতের এই সাবেক অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৮৪ সালে৷ ২০০৯ সালে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দেন৷ উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ নানা কারণে ভারতের আলোচিত ক্রিকেটারদের একজন তিনি৷
ছবি: AP
বিনোদ কাম্বলি
শচীন টেন্ডুলকারের স্কুলের বন্ধু বিনোদ কাম্বলি৷ নিজে ভারত দলে খেলতেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে৷ বলিউডে অভিনয়ও করেছেন৷ পরে লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
মনসুর আলী খান পতৌদি
পতৌদিকে বলা হয় ভারতের সেরা অধিনায়কদের একজন৷ তাঁর সময়ে মাঠের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন তিনি৷ ১৯৯১ সালে ভোপাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও লড়েন তিনি৷ তবে হেরে যান৷
ছবি: dapd
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
ছবি: Naimur Rahman Durjoy
মাশরাফি বিন মর্তুজা
জয়সুরিয়ার পর মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলা অবস্থাতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন৷ তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন৷ নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karanikos
10 ছবি1 | 10
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন জানাচ্ছে, চিঠিতে ইমরান বলেছেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর কোনো সদস্য অনাস্থা নিয়ে ভোটাভুটির দিন ও সময় উপস্থিত থাকবেন না। দলের যে সদস্যরা বিতর্কে অংশ নেবেন, তাদের দলের নীতি মেনে কথা বলতে হবে। এটাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, কোনো সদস্য যেন অন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে ভোট না দেন। প্রতিটি নির্দেশ সব সদস্যকে মানতে হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
অনাস্থা প্রস্তাবে জয়ী হতে গেলে বিরোধীদের ১৭২ জন সদস্যের সমর্থন লাগবে। ইমরানের শরিক দল বালোচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি-মেঙ্গল এবং বালোচিস্তান আওয়ামি পার্টি বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। জামহুরি ওয়াতন পার্টির নেতা বুগতি রোববার ইমরান মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে সরকারের আরেক শরিক এমকিউএম এখনো তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। তাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সাতজন সদস্য আছে।
এছাড়া ইমরানের দলের অন্ততপক্ষে ১২ জন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সদস্য প্রকাশ্যে সরকারি নীতির সমালোচনা করেছেন। তারা বিরোধীদের সমর্থন করতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে কয়েকজন সদস্য শোকজ নোটিশের জবাবে জানিয়েছেন, তারা দলত্যাগ করছেন না। তাই শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষুব্ধরা কী করবেন তা স্পষ্ট নয়।