1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনুদানের জন্য ব্যবসা বাড়লো পুজোয়?

৫ অক্টোবর ২০২৫

দুর্গাপুজোয় বাড়লো ব্যবসার পরিমাণ। চলতি বছরে আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে পুজোকে ঘিরে। যদিও বিক্রিবাটা কমেছে ছোট ব্যবসায়ীদের।

কলকাতার একটি পূজামণ্ডপ
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৪৫ হাজার পুজো কমিটি রাজ্য সরকারের অনুদান পেয়েছেছবি: Satyajit Shaw/DW

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে। এই উৎসবকে ঘিরে বিপুল টাকার আর্থিক লেনদেন হয়। রাজ্য সরকারের দাবি, গতবারের থেকেও বেশি টাকার ব্যবসা হয়েছে এ বছরে।

অর্থমন্ত্রীর দাবি

গত বছরে পুজো কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা মন্দা দেখা গিয়েছিল। এবছর সেই হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। সূত্রের খবর অনুযায়ী, গতবারের তুলনায় এই বৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। ব্যবসার মোট অঙ্ক পৌঁছতে পারে ৫০ হাজার কোটিতে।

পুজোয় ১৫ শতাংশ হারে কি ব্যবসা বেড়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, "এ বছরে দুর্গা পুজোকে ঘিরে অর্থনীতির অনেকটা বৃদ্ধি ঘটেছে। এখনই কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা মুশকিল। সব দপ্তর থেকে তথ্য পেলে বৃদ্ধির হার বলা সম্ভব হবে।"

ব্যবসা বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। কর্পোরেট সংস্থার স্পনসরশিপ বেড়েছে। বড় বিপণি ও মলে বেড়েছে ভিড়। একই সঙ্গে বেড়েছে কেনাকাটা। শুধু বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা নয়, একইসঙ্গে পরিবহণ থেকে হস্তশিল্প, ডেকোরেটর থেকে আলোকশিল্প, রেস্তোরাঁ থেকে ফাস্টফুড, ব্যবসা সব ধরনের ব্যবসাতেই ভালো লাভ হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

বাণিজ্যিক গতিবিধির একটি সূচক বিদ্যুতের চাহিদা। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, এবছর বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটের নীচে।

রাজ্য সরকারের অনুদান

পশ্চিমবঙ্গ সরকার চলতি বছরেও বিভিন্ন পুজো কমিটিকে অনুদান দিয়েছে। অনুদান পেয়েছে রাজ্যের প্রায় ৪৫ হাজার পুজো কমিটি। কলকাতা ও জেলায় কমিটি প্রতি এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলে ছাড় দেয়া হয়েছে ৮০ শতাংশ।

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই টাকা বিভিন্ন পুজো কমিটির মাধ্যমে শিল্পী, শ্রমিক, কর্মীদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে, যাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার ফলে বাজারের হাল শুধরেছে।

২০২৪ সালে পুজো কেন্দ্রিক ব্যবসা ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা। যা তার আগের বছরের তুলনায় ২০-৩০ শতাংশ কম। মূলত মুদ্রাস্ফীতি, কর্পোরেট সংস্থার আগ্রহের অভাব এবং ক্রেতারা কেনাকাটায় বিমুখ হওয়ার ফলে এই অধঃপতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

পুজোর মাস দুয়েক আগে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল। পুজো কেটে গেলেও প্রতিবাদের রেশ কাটেনি। তার প্রভাব পুজোর ব্যবসায় পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত

এ বছরে প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও কেনাবেচা হয়েছে পুরোদমে। কলকাতার বড় মলগুলিতে বিপুল ভিড় দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, জামাকাপড়, জুতো থেকে অলঙ্কারের বিক্রি বেড়েছে অনেকটাই। এই বৃদ্ধির হার দুই অঙ্কের কম নয়।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ২২ সেপ্টেম্বর মহালয়া থেকে জিএসটি-র নতুন হার কার্যকর হবে। এর ফলে অনেকেই মুলতবি রেখেছিলেন কেনাকাটা। নয়া হারের জিএসটি কার্যকর হতেই ব্যবসা বেড়েছে কয়েক গুণ। গাড়ি কেনার খরচ কমে যাওয়ায় অটোমোবাইল ব্যবসা লাভবান হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থার মাধ্যমে কেনাকাটা বেড়েছে চার-পাঁচ গুণ।

বড় বিপণি, শপিং মল, ই-কমার্সের রমরমার ফলে কিন্তু ক্ষতি হয়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের। কলকাতার একটা বড় অংশে, পথের ধারে ছোট ছোট দোকানে বিক্রেতারা নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে দোকান বসান। পোশাক, জুতো, সাজগোজের সামগ্রী-সহ নানা পণ্য তারা বিক্রি করেন। এদের ব্যবসা তেমন জমেনি এবার। এছাড়া পুজোর ঠিক মুখে কলকাতায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে প্রায় দুদিন এসব ছোটখাটো বিক্রেতারা দোকান খুলতেই পারেননি।

জাতীয় হকার ফেডারেশনের সভাপতি শক্তিমান ঘোষ বলেছেন, "অনলাইন ব্যবসার জন্য হকারদের কেনাবেচা ৪০ শতাংশ কমেছে। ছোট দোকানদারদের অবস্থা বেশ খারাপ। তার উপরে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ক্ষতির বহর বেড়েছে।"

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

পুজো কেন্দ্রিক ব্যবসার বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। অভিরূপ সরকার ডিডাব্লিউকে বলেন, "প্রত্যেক বছরই একটা স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এর সঙ্গে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। টাকার দাম ও কমে তাই বৃদ্ধির যে অংক দেখা যাচ্ছে সেটা প্রকৃত বৃদ্ধি নাও হতে পারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে একই জিনিস কিনতে গেলে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে।"

তার মতে, "আমাদের কেনাকাটার কিছুটা মৌসম কেন্দ্রিক। সারাবছর মানুষ জামা কাপড় কেনেন না। পুজোর সময় কেনেন। তাই এই সময় বিক্রি বেশি হয়। একই সঙ্গে বুঝতে হবে, মানুষের আয় বাড়ছে। তাই কেনাকাটা বাড়ছে। এ বছরের বাড়তি সুবিধা জিএসটিতে ছাড় দেয়া হয়েছে। তাই সব মিলিয়ে ১০ হাজার কোটির মতো যদি বেড়ে থাকে সেটা ভালো।"

জিএসটির পরিবর্তিত হার ব্যবসা বৃদ্ধির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর বলে মত অর্থনীতিবিদ, বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে, এটার দিকে লক্ষ্য রেখে জিএসটি হারে পরিবর্তন করা হয়েছে। পণ্যের দাম কমায় মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তার ফল মিলছে। শুধু ভিড় দেখে সবটা বোঝা যাবে না, এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান খুব জরুরি। তাহলে ঠিকঠাক বৃদ্ধিকে পরিমাপ করা যাবে। তবে বারবার কেন্দ্রীয় সরকার কর কমাতে পারবে না। রাজ্য সরকারকে ব্যবসার উন্নতির স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায় যে গতি এসেছে, সেটাকে রক্ষা করতে রাজ্য কী করবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।"

পুজো অনুদানের মাধ্যমে বাজারের কেনাকাটা বাড়ালে সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়, এমনটাই মত অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশের। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "মূর্তি পুজোর বদলে পরিকাঠামো নির্মাণ করলেও প্রান্তিক মানুষের হাতে টাকা যাবে। তার মাধ্যমে একটা সুস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নও সম্ভব হবে। একটা রাস্তা তৈরি হলে সেখানে যারা কাজ করেন, তাদের হাতে টাকা আসে, তারাও সেই টাকা খরচ করেন। তাই শুধু পুজো উপলক্ষে সরকারের অনুদানের অর্থ বাজারে রোল করবে, এটা এক ধরনের কুযুক্তি।"

পুজো আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তাদের অনুদান দেয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সিপিএম সাংসদ, আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "মানুষ সারা বছর কেনাকাটা করেননি। পুজোর জন্য অপেক্ষা করেছেন। সেই কারণে বিক্রি কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে। একইসঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ পাঁচ টাকার সামগ্রী সাত টাকায় কিনতে হয়েছে। ফলে টাকার অংকটা বেশি দেখাচ্ছে। পুজো অনুদানের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ঢাকি থেকে মন্ডপ বা আলোকশিল্পীকে প্রাপ্য সাম্মানিক প্রতিটি পুজো কমিটিকেই দিতে হয়। অনুদান পাওয়ার আগেই দিতে হয়। তাছাড়া সরকারি অনুদানের টাকা পুজো কমিটি জনস্বার্থে খরচ করবে, এমনটাই নিয়ম। এর সঙ্গে ঢাকিদের টাকা দেওয়ার সম্পর্ক নেই।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ