অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দিতে বিহারে তালিকা সংশোধন
১ জুলাই ২০২৫
বিহারে বিধানসভা ভোট হবে আগামী অক্টোবর নাগাদ। তার আগে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে।
কেন এই সংশোধন?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় থাকা বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের অবৈধ অনুপ্রকবেশকারীদের নাম বাদ দিতে এই নিবিড় সংশোধনের কাজ করা হচ্ছে। সংবিধান শুধু ভারতীয়দের ভোট দেয়ার অধিকার দিয়েছে। সংবিধান সর্বোচ্চ। সব ভারতীয়, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান মেনে চলতে হয়।
নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন সফলভাবে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭৮ হাজার বুথ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। আরো ২০ হাজার কর্মীকে নিয়োগ করা হবে। এক লাখের মতো কর্মী প্রকৃত ভোটদাতাদের সাহায্য করবে।
এখন বিহারে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের কাজ চলছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গসহ আরো পাঁচ রাজ্যে এই কাজ হবে। নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে, ২০০৩ সালের পর থেকে যার নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাদের ও তাদের বাবা-মা-র নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। আর যাদের নাম ২০০৩ সালের আগে ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাদের শুধু একটা ফর্ম ভরতে হবে এবং তা জমা করতে হবে।
কমিশন জানিয়েছে, ১ অগাস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। তা নিয়ে আপত্তি থাকলে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে। তারপর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
বিরোধীরা কেন আপত্তি জানাচ্ছে?
আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেছেন, বিহারে ভোটার তালিকা থেকে ৩৭ শতাংশ মানুষের নাম বাদ দেয়ার জন্য এই কাজ করা হচ্ছে। বিহারের ৩৭ শতাংশ ভোটদাতা পরিযায়ী শ্রমিক এবং অন্য রাজ্যে থাকে। তারা উৎসবে বাড়িতে আসে। এখন তাদের পরিবারের মানুষকে বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, তারা ভারতীয়। এই সব মানুষরা অধিকাংশই সংখ্যালঘু, দলিত, অনগ্রসর গরিব মানুষ। তাদের বাড়িতে কোথায় জন্মের সার্টিফিকেট থাকে?
এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, যে সব কারণ দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন করছে, সেই একই কারণে ২০০৩ সালে তালিকা সংশোধিত হয়েছে। এখন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে নিজের ও বাবা-মার জন্মের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ওব্রায়েন বলেছেন, আসলে এইভাবে ঘুরপথে এনআরসি চালু করতে চাইছে সরকার। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তৃণমূল প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।
কংগ্রেসও বলেছে, এর ফলে ভোটদাতাদের নাম বাদ দেয়ার একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ফইজান মুস্তাফা বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিজের ক্ষমতাবলে এই ধরনের সংশোধন করতে পারে। যাদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই, তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত। তবে তার মতে, কমিশনের নির্দেশে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকা সংশোধনের পর যাদের নাম তালিকায় আছে, তারা তারা ভারতের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিকাশ বাগড়ি বলেছেন, নেপাল থেকে মানুষ বিহারে কাজের জন্য আসেন। এখানে ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজটা সহজ। তাই তালিকা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে এই অল্প সময়ে পুরো ভোটার তালিকার সকলের নাম যাচাই করাটা কঠিন কাজ।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস-এর(এডিআর) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জগদীপ চোখার দ্য ওয়্যার পত্রিকাকে বলেছেন, ২০০৩ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকায় যাদের নাম আছে, ধরে নিতে হবে, তারা ভারতের নাগরিক। যাদের নাম পরে যোগ করা হয়েছে, তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। তাহলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনসহ অন্য যেসব নির্বাচনে এই ভোটদাতারা ভোট দিয়েছেন, সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে। আর ২০০৪ সালের পর থেকে নির্বাচন কমিশনই বা কী করছিল? ২১ বছর তো তারা এই নিবিড় সংশোধনের কাজ করেনি?
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এন গোপালস্বামী বলেছেন, ভারতের নির্বাচন ভারতীয়দের জন্য, বিদেশিদের জন্য নয়। যদি ঠিকভাবে দেখা হয়, কে ভারতীয়, কে নয়, তাহলে কেন আপত্তি করা হচ্ছে?
তবে ভোটার তালিকার এই সংশোধন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বা তার দল সংযুক্ত জনতা দলের কোনো নেতা একটা কথাও বলেননি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের কী হবে
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটদাতাদের একটা ফর্ম পূরণ করতে হবে। কিন্তু যারা পরিযায়ী শ্রমিক তারা কী করে ফর্ম পূরণ করবেন? চোখার বলেছেন, বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকরা কী করে এই ফর্ম পাবেন, বিহারের গ্রামের ভোটদাতাদের মধ্যে কতজন কম্পিউটার থেকে ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন, তাদের পক্ষে এটা কি করা সম্ভব?
সতর্ক নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অঞ্জলি ভরদ্বাজ দ্য ওয়্যারকে বলেছেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে প্রচুর মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এবারও সেই সম্ভাবনা আছে যে, অনেক মানুষ ভোট দিতে পারবেন না।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)