‘অনুভূতিতে আঘাত লাগে’ এমন কিছু পাঠ্যবইয়ে রাখবে না এনসিটিবি
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কয়েকটি মহলের দাবির মুখে গঠনের মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে সমন্বয় কমিটি বাতিল করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার৷ তবে এনসিটিবি বলছে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ তারা অব্যাহত রেখেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইসলামিক দল ও ব্যক্তিদের দাবির মুখে বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল নিয়ে চলছে বিতর্ক৷ এই কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাঠ্যপুস্তক স্বাধীনভাবেই করা উচিত৷ কারো চাপ বা দাবির মুখে সেটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করা ঠিক না৷'' অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ তারা অব্যাহত রেখেছেন, অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কনটেন্ট পরিমার্জনের চেষ্টা চলছে৷
কমিটির বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দাবি
৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগের পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের দাবি ওঠে৷ ১৫ সেপ্টেম্বর সংশোধনের জন্য নতুন সমন্বয় কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খ ম কবিরুল ইসলামকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়৷ সদস্যরা ছিলেন: শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান৷
নাস্তিকদের দিয়ে কোনো কমিটি হবে না: মহিউদ্দিন রাব্বানী
কিন্তু ওই কমিটি গঠনের পর দুইজন সদস্যের পদত্যাগ দাবি করে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ৷ তারা কমিটিতি ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম রাখারও দাবি করে৷ দুই জন সদস্যকে ইসলামবিদ্বেষী বলে অভিহিত করে তারা৷
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী রোববার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু পাঠ্যপুস্তকে রাখা যাবে না৷ অতীতে পাঠ্যপুস্তকে অনেক বিকৃত ও ইসলামবিরোধী তথ্য ছিল৷ আর কমিটিতে থাকবেন যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম৷ নাস্তিকদের দিয়ে কোনো কমিটি হবে না৷’’
অন্যদিকে জাময়াতে ইসলামী দাবি করেছে, ‘‘পাঠ্যপুস্তকে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিকৃত ও ভ্রান্ত তথ্য থাকতে পারবে না৷’’ শুক্রবার সংগঠনটির পক্ষ্য থেকে এমন বক্তব্য দেয়া হয়েছে৷
কমিটির সদস্য ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
২৮ সেপ্টেম্বর দেয়া প্রজ্ঞাপনে কমিটি বাতিলের কারণ উল্লেখ করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু ইসলামপন্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই তা বাতিল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে সমালোচনা ও বিতর্ক৷
ওই কমিটির সদস্য রাখাল রাহা প্রতিক্রিয়ায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাঠ্যপুস্তক স্বাধীনভাবেই করা উচিত৷ কারো চাপ বা দাবির মুখে সেটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করা ঠিক না৷ সঠিক শিক্ষার জন্যই করা উচিত৷ এটা বলতেই হবে যে, দাবি ও চাপের মুখেই আমাদের কমিটি বাতিল করা হয়েছে৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ওই কমিটিতে ছিলাম তাদের শিক্ষা নিয়ে সবারই নিজস্ব চিন্তা ও দর্শন আছে৷ কিন্তু যারা প্রতিবাদ করেছেন তারা একটি বিষয় জানেন না যে, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন আমাদের কাজ ছিল না৷ এই কাজের জন্য এনসিটিবির একাধিক কমিটি আছে৷ তারা আগেই কাজ শুরু করেছেন৷ আমাদের কাজ ছিল তারা যে কাজ করছেন তা দেখা ও প্রয়োজনীয় মতামত দেয়া৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন কারো দাবির প্রেক্ষিতে নয় বরং প্রয়োজনের নিরিখে ব্যবস্থা নেয়া উচিত সরকারের৷
তিনি মনে করেন শিক্ষা কমিশন গঠন করে তার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যপুস্তক যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে করা উচিত৷ বলেন, ‘‘কোন পক্ষ কী দাবি করলো সেটা আমলে না নিয়ে যা হওয়া উচিত তাই করা দরকার৷’’
তার মতে, কোনো একটি কবিতা বা গল্প বাদ দিয়ে নতুন গল্প-কবিতা অন্তর্ভূক্ত করলেই পাঠ্যপুস্তক সংশোধন হয় না৷ তার পেছনে চিন্তা ও দর্শন থাকতে হবে৷ ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে আমাদের সংবিধানের আলোকে,'' বলেন তিনি৷
তিনি মনে করেন সমন্বয় কমিটিটি তাড়াহুড়ো করে গঠন করা হয়েছিল৷ শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তা করা প্রয়োজন ছিল৷ আবার সেটা যে দাবি ও চাপের মুখে বাতিল করা হলো সেটাও ঠিক না৷ ‘‘শিক্ষা নিয়ে এরকম তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়,'' বলেন এই শিক্ষা বিশেষজ্ঞ৷
কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে এনসিটিবি
এদিকে নতুন কমিটি গঠন হবে কিনা, হলেও তা কবে হবে বা কাদের রাখা হবে সে বিষয়ে জানায়নি সরকার৷ জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম রিয়াজুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন কমিটি কবে হবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানে৷ তবে আমাদের পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ অব্যাহত আছে৷''
পরিমার্জনের চেষ্টা করছি যাতে তারা আহত না হয়: রিয়াজুল হাসান
তিনি বলেন, ‘‘কমিটির দায়িত্ব ছিল পরিমার্জন সংক্রান্ত তাদের কাজগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা৷ এই কাজ এরইমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷''
হেফাজত ও জামায়াতের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাঠ্যপুস্তকে কোনো পক্ষ, কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীকে আহত করে এমন কোনো কনটেন্ট আমরা পরিমার্জন করার চেষ্টা করছি যাতে তারা আহত না হয়৷’’
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ আগের পাঠ্যক্রমে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন৷ নতুন যে শিখন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর কাজ শুরু হয়েছিল তা স্থগিত হবে৷ অধ্যাপক এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘‘শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন আপাতত ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়া হবে৷ আমরা সেটাই করছি৷ আর ২০২২ সালে যে বই প্রকাশিত হয়েছে আগামী বছরও সেই বই চলবে৷''
তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির সঙ্গে তারা দুইটি বৈঠক করেছিলেন৷ ওই কমিটি বাতিল হওয়ায় তাদের কাজে কোনো অসুবিধা হবে না৷
বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল৷ বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদা এর প্রধান ছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে দেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল৷ কুদরত-ই-খুদা কমিশন নামে পরিচিতি পাওয়া এই কমিশন ১৯৭৪ সালে রিপোর্ট পেশ করেছিল৷ এতে শিক্ষার সবস্তরে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/epd
উল্লেখযোগ্য সুপারিশ
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল কুদরত-ই-খুদা কমিশন৷ প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছিল৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি চার বছর মেয়াদি সম্মিলিত ডিগ্রি কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
কমিটি গঠন
কুদরত-ই-খুদা কমিশনের সুপারিশের আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস প্রণয়নের জন্য অধ্যাপক সামছুল হুদাকে প্রধান করে ১৯৭৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷ কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮ সালে সাত খণ্ডে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেছিল৷ সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিল ঐ কমিটি৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Eyepix/IMAGO
মজিদ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮২
এরশাদ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আবদুল মজিদ খানের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন ১৯৮২ সালে একটি শিক্ষা নীতি প্রস্তাব করেছিল৷ এতে প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলার সঙ্গে আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি ভাষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়৷ এছাড়া যারা ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করতে পারবে, ফল খারাপ হলেও তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু পরে তীব্র আন্দোলনের কারণে কমিশনের কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দীন আহমদকে প্রধান করে ১৯৮৭ সালে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়৷ তাদের রিপোর্টে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন এবং ডিগ্রি কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়৷ এছাড়া বড় জেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতে একটি করে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ১৯৯৭ সালে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা দান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদের অনুপ্রাণিত করার কথা বলেছিল ঐ কমিশন৷ এছাড়া কমিটি একটি শিক্ষানীতিও প্রণয়ন করেছিল, যেটি ২০০০ সালে সংসদে গৃহীত হয়৷ কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি৷
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance
এম.এ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০১
ড. এম এ বারীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ২০০২ সালে রিপোর্ট পেশ করে শিক্ষাক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার ও পরিবর্তনের সুপারিশ করে৷ এসব সুপারিশ ২০০৩ সালে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন কর্তৃক বিবেচনায় আনা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন, ২০০৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের রিপোর্ট তিন ভাগে বিভক্ত ছিল: সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা৷ ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য নির্বিশেষে সবার জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করেছিল৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Eyepix/IMAGO
কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন, ২০০৯
২০০০ সালের শিক্ষানীতিকে সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ এই কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরাত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট এবং ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে৷ সেটি ২০১০ সালে সংসদে গৃহীত হয়৷
ছবি: Bdnews24.com
বাস্তবায়ন কত দূর?
শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে৷ কিন্তু সেটি হয়নি৷ মাধ্যমিক শিক্ষা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছিল৷ এজন্য উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি সংযোজন করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো হয়নি৷ শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির মতো কমিশন হয়নি৷ শিক্ষা আইন হয়নি৷ স্থায়ী শিক্ষা কমিশনও হয়নি৷
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance
নতুন শিক্ষাক্রম
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়৷ এরপর এ বছর থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷ ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে৷ একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে৷
ছবি: Habibur Rahman/abaca/picture alliance
কী আছে?
নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার চেয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে৷ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে৷ পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম দুটোই আছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দশম পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাস
শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে৷ আর তারা বিজ্ঞান, মানবিক, না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, তা ঠিক হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে৷ এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ধরণ এখনকার মতো হবে না৷ শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা হবে৷ প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে৷ এরপর দুই ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে৷
ছবি: Salim/Xinhua/picture alliance
শেখার ক্ষেত্র
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে৷ এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি৷ প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন৷