ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাসের যুগ এখন গত৷ যুগটা এখন বি+, এ+ তথা কিউমিলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ বা সিজিপি এর৷ এ+ এখন বহুল আকাঙ্ক্ষিত৷ সাধারণত ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে একজন শিক্ষার্থী এ+ পেয়ে থাকেন৷
বিজ্ঞাপন
ধরুন, গণিতে সমপূর্ণমানের ১০টি অংকের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী যদি আট বা তার বেশি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন তাহলে তিনি এ+ পান৷ অর্থাৎ দুটি প্রশ্নের উত্তর ভুল দিয়েও তিনি সফল৷ একেবারে ২২ ক্যারেট সোনার গয়নার মতো, তবে খাঁটি সোনা নয়৷ কিন্তু ভাবুন তো, একটি প্রতিবেদনে ১০টি তথ্যের মধ্যে আট বা নয়টি তথ্য ঠিক আছে, এক বা দুটি তথ্য ভুল দেয়া আছে৷ আবার ভুল না দিলেও প্রতিবেদনে উত্থাপিত ১০টি অভিযোগের মধ্যে ২/১টির জবাব যথাযথ ও নির্ভুল তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়নি৷ তাহলে এটি কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা? সাংবাদিকতা শাস্ত্রের উত্তর হলো, ‘না’৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সৌন্দর্য এখানেই৷ এটি খাঁটি সোনার মত নির্ভেজাল, কিন্তু নরম নয়৷ এ ধরনের সাংবাদিকতায় আপনাকে দশে দশ পেতে হবে৷ নয় দশমিক নয় নয় পাওয়ার কোন অবকাশ নেই৷ একটি ভুল তথ্য কিংবা অভিযোগের জবাব দিতে না পারলে পুরো প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে৷ সে কারণে অভিযোগ, দাবি, সন্দেহ, গুজব ইত্যকার শব্দ যে খবরের মধ্যে থাকে সে খবরটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট হতে পারে না৷ তাই সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই ভাল প্রতিবেদন; কিন্তু সব প্রতিবেদন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নয়৷ শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা আর বস্তুনিষ্ঠতার জন্যই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে থিওডর রুজভেল্ট যেমনটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের গালমন্দ করতেন তেমনি আজও বিশ্বের নানাপ্রান্তে রাজনীতিবিদরা সত্যিকারের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জাতপাত উদ্ধার করেন৷ ১৯০৪ সালে ‘দ্য শেম অব দ্য সিটিস’র মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে আবেদন তৈরি হয়েছিল শতাব্দী পরে এসে তার আবেদন তাই বেড়েছে বৈকি কমেনি৷
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগে ভূমিকা রাখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা ‘ওয়াটারগেট কেলেংকারি’৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
ঘটনার শুরু
১৯৭২ সালের ১৭ জুন ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট ভবনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদরদপ্তরে পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ তাদের মধ্যে একজন সিআইএ-র সাবেক কর্মকর্তা জেমস ম্যাকর্ড৷ ঘটনার সময় তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনি প্রচারণার জন্য গঠিত সংস্থায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন বলে ১৯ জুন জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট৷ তবে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেন প্রধান জন মিচেল তা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Paul J. Richard/AFP/GettyImages
চোরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিক্সন ক্যাম্পেনের টাকা
ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানান, ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিসে ঢোকার চেষ্টা করা এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার ডলারের ক্যাশিয়ার্স চেক পাওয়া গেছে৷ চেকটি আপাতদৃষ্টিতে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের বলে জানায় পত্রিকাটি৷
ছবি: washingtonpost.com
ডেমোক্রেটদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জন মিচেল নিক্সনের রিপাবলিকান দলের একটি গোপন তহবিল নিয়ন্ত্রণ করতেন, যেটা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ে ব্যবহার করা হতো৷
ছবি: washingtonpost.com
ওয়াটারগেট ঘটনার সঙ্গে নিক্সন ক্যাম্পেনের সম্পৃক্ততা
বব উডওয়ার্ড (ডানে) ও কার্ল বার্নস্টিন (বামে) ১০ অক্টোবর জানান, ওয়াটারগেটের ব্রেক-ইন ছিল নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের পক্ষ থেকে চালানো রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি ও ডেমোক্রেটদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা তৈরির চেষ্টার অংশ৷ অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনি প্রচারণা সম্পর্কে তথ্য পেতে তাদের অফিসের টেলিফোনে আড়িপাতার যন্ত্র বসাতে ঐ পাঁচ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন নিক্সন ক্যাম্পেনের কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ডিপ থ্রোট’
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন তাদের কয়েকটি প্রতিবেদনে সূত্রের নাম উল্লেখ করেননি৷ পরে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাদের ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ বইতে ‘ডিপ থ্রোট’ নামে একটি সূত্রের কথা জানানো হয়৷ সব সূত্রের মধ্যে এই সূত্রটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলা জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কিন্তু কে ছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উডওয়ার্ডকে তথ্য দিয়েছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’৷ তাই উডওয়ার্ডও ডিপ থ্রোটের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন৷ তবে প্রতিবেদনগুলোতে গোপন সব তথ্যের উপস্থিতি দেখে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ডিপ থ্রোটের পরিচয় জানতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন৷ কিন্তু পারেননি৷ অবশেষে নিক্সনের পদত্যাগের ৩১ বছর পর ২০০৫ সালে জানা যায় এফবিআই-এর সেই সময়কার দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্ক ফেল্ট ছিলেন সেই ডিপ থ্রোট৷ ফেল্টের বয়স তখন ৯১৷
ছবি: picture-alliance/FBI Collection at NARA
কেন ডিপ থ্রোট তথ্য ফাঁস করেছিলেন?
ফেল্টের পরিবারের দাবি, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের কারণে ফেল্ট তথ্য ফাঁস করেন৷ এদিকে, উডওয়ার্ড তার ‘দ্য সিক্রেট ম্যান’ বইয়ে জানান, ১৯৭২ সালের মে মাসে এডগার হুভারের মৃত্যুর পর ফেল্ট মনে করেছিলেন, ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় এবার তাকে এফবিআই প্রধান করা হবে৷ কিন্তু তা না করে আইন প্রয়োগের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা নৌ কর্মকর্তা প্যাট্রিক গ্রে’কে প্রধান করা হয়েছিল৷ এতে ফেল্ট অসন্তুষ্ট ছিলেন৷
ছবি: FBI Collection at NARA/Consolidated/picture alliance
ফেল্টের সঙ্গে উডওয়ার্ডের যোগাযোগ পদ্ধতি
গোপনে কথা বলতে তারা দুটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন৷ ফেল্টের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ড নিজের ব্যালকনিতে টবে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিতেন, যা দেখে ফেল্ট বুঝতেন, উডওয়ার্ড কথা বলতে চান৷ আর ফেল্ট কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ডের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের রিসিপশনে উডওয়ার্ডের নামে থাকা ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ২০ নম্বর পাতায় ‘২০’ লেখাটি গোল করে সেখানে দাগ কেটে সময়টা বলে দিতেন৷ মাঝেমধ্যে ফেল্টের বাসায়ও ফোন করতেন উডওয়ার্ড৷
ছবি: AP
হোয়াইট হাউসের তোপের মুখে ওয়াশিংটন পোস্ট
ওয়াশিংটন পোস্টে একের পর এক প্রতিবেদন নিয়ে খুশি ছিল না নিক্সন প্রশাসন৷ নিক্সনের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত যুদ্ধ শুরু করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট৷ এসব প্রতিবেদন মিথ্যা তথ্যে পরিপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়েছিল৷ এছাড়া ওয়াটারগেট নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ও টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু না বললেও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের সমালোচনায় মুখর ছিল হোয়াইট হাউস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ওয়াশিংটন পোস্ট নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের সন্দেহ
ওয়াটারগেট নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে শুরুর দিকে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছিল তার গুরুত্ব অন্যান্য গণমাধ্যম বুঝতে পারেনি৷ শুধু তাই নয়, ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’ ও ‘ওয়াশিংটন স্টার-নিউজ’ ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রতিবেদন করেছিল৷ এছাড়া পোস্টের একটি প্রতিবেদনের তথ্য না ছাপিয়ে হোয়াইট হাউসের ঐ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের সংবাদ ছেপেছিল ‘শিকাগো ট্রিবিউন’ ও ‘ফিলাডেলফিয়া ইনক্যোয়ারার’৷
ছবি: AP
তথ্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
ওয়াটারগেটে অবৈধ প্রবেশের পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্ভবত জানতেন না নিক্সন৷ তবে এফবিআই এক চোরের খাতায় হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার নাম পেলে চিন্তিত হয়ে ওঠেন নিক্সন৷ তিনি এফবিআই-এর তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন বলে ‘স্মোকিং গান’ শীর্ষক অডিও টেপগুলো থেকে জানা যায়৷ এসব টেপে নিক্সন ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা রেকর্ড করা ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/Everett Collection
নিক্সনের পদত্যাগ
ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, এফবিআই-এর তদন্ত ইত্যাদি কারণে নিক্সন প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছিল৷ এই ঘটনা তদন্তে সেনেটে একটি কমিটিও গঠন করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নিক্সন ইম্পিচমেন্টের শিকার হতেন৷ সেটা আঁচ করতে পেরেই ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি৷ ফলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র দেড় বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷
ছবি: Everett Collection/imago images
‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’
ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বিস্তারিত ১৯৭৪ সালে ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ নামে প্রকাশিত এক বইয়ে তুলে ধরেছিলেন বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন৷ বইয়ে ওয়াটারগেট কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত নিক্সন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নিক্সনের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ‘প্রেসিডেন্ট’স মেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ ঐ ঘটনায় নিক্সন ক্ষমা পেলেও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
13 ছবি1 | 13
সাংবাদিক মাত্রই মনে করতে পারেন, সব রিপোর্টিংই অনুসন্ধানমূলক৷ কারণ সাদামাটা খবরেও তথ্য থাকে, এখানেও কৌশল ব্যবহার করা হয়৷ প্রকৃতপক্ষে সাদামাটা বা ‘দিনে আনি দিনে খাই' সাংবাদিকতার সাথে এর বিস্তর ফারাক আছে৷ কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে পুরোপুরি যুক্তিনির্ভর একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া৷ এ ধরনের সাংবাদিকতার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলোর মাধ্যমে একজন আম পাঠকের কাছেও সাদামাটা প্রতিবেদনের সাথে পার্থক্য এর স্পষ্ট হয়ে উঠে৷
প্রথমত, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন শুধু কোন ঘটনা নয় বরং সুনির্দিষ্ট প্রণালী অনুসরণ করে পাঠকের সামনে পুরো প্রক্রিয়াকে তুলে ধরে৷ এখানে অনুমিতি বা হাইপোথেসিস থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত একে কতগুলো ধাপ বা স্তর পার করতে হয়৷ এ স্তরগুলো পার না করলে প্রতিবেদনের স্বপক্ষে প্রমাণ যেমন মেলে না তেমনি এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়৷ দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিবেদনের হাইপোথেসিস বা প্রশ্ন নির্ধারণ করতে হয়, যা প্রতিবেদনের পথনির্দেশনা৷ এই প্রশ্নমালা প্রতিবেদনের পরিধি বা স্কোপ নির্ধারণ করে দেয়৷ অর্থাৎ প্রতিবেদক কোন কোন প্রশ্নের উত্তর যথাযথ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে তুলে ধরতে পারবেন তা নির্ধারণ করতে হয়৷ পৃথিবীর তাবৎ বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর সাফল্য এর ভেতর নিহিত৷ কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনুমান ও কটাক্ষ করে দাবি করার চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ তুলে ধরতে হয়৷ অনেক বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিবেদক কয়েকটি অনুমিতি বা প্রশ্ন নিয়ে কাজে নেমেছেন কিন্তু পরে সেগুলো যথাযথ ত্যথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে না পেরে সেসব প্রশ্ন বা অভিযোগ অব্যক্ত রেখে দিয়েছেন৷ এজন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের একটি স্তর হলো লক্ষ্য নির্ধারণ করা৷ এখানে দুটি লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন লক্ষ্য৷ অনুমিতি বা প্রশ্নের সবটুকু প্রমাণ করতে পারাই হলো সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছা৷ কিন্তু সবসময় সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেও ভাল অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা সম্ভব৷ ২০০০ সালে ফিলিপাইন সেন্টার ফর ইনভেসটিগেটিভ জার্নালিজমের প্রতিবেদকরা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ এস্ত্রাদার একটি ভিডিও ক্লিপ পান যাতে দেখা যায়, তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক ব্রিফকেস টাকা নিচ্ছেন৷ একজন হুইসেলব্লোয়ার দাবি করেন, এটি ঘুষের টাকা৷ প্রতিবেদকরা বুঝতে পেরেছিলেন, ঘুষ নেয়ার ঘটনাটি তারা কোনভাবে প্রমাণ করতে পারবেন না৷ তাই তারা প্রমাণ করলেন প্রেসিডেন্টের অকল্পনীয় সম্পদ বা সম্পদের পাহাড় ছিল; যার মধ্যে তিনি তার চার স্ত্রীর জন্য চারটি প্রাসাদস্বর্গ বানিয়েছেন৷ তারা ১৯৯৮ সালে নির্বাচনের সময় এস্ত্রাদার জমা দেয়া আর্থিক হিসাবের বিবরণের সাথে নতুন হিসাবের বিবরণের তফাৎ তুলে ধরেন যেখানে প্রাসাদ স্বর্গগুলোর উল্লেখ ছিল না৷ অর্থাৎ তাদের প্রতিবেদনের মূল ফোকাস হয়ে যায় প্রেসিডেন্টের অবৈধ সম্পদ আছে৷ তারা এ অর্থের উৎস কি বা কোথা থেকে এ অর্থ এসেছে তা অনুসন্ধান করেননি৷ এটাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা খুঁটি – যেটুকু প্রমাণ করা গেছে সেটুকু উপস্থাপন করা৷ ভাল তথ্য থাকা সত্ত্বেও শুধু নিজের অনুমিতি জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক রিপোর্ট মুখ থুবড়ে পড়ে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিরপরাধ মানুষ৷
সেরা ১১ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পুলিৎজার পুরস্কারকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে ধারণা করা হয়৷ গত ১১ বছরে কারা পেয়েছেন এ পুরস্কার জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Heidi Levine
২০০৬ সাল
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’-র সাংবাদিক সুজান স্মিড, জেমস ভি গ্রিমাল্ডি এবং আর. জেফরি স্মিথ সে বছর পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ সংস্কারের নামে মার্কিন কংগ্রেসে ওয়াশিংটন লবিস্ট জ্যাক আব্রামোফের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০০৭ সাল
‘দ্য বার্মিংহ্যাম নিউজ’-এর ব্রেট ব্ল্যাকলেজ পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেন তিনি৷ যার ফলে ঐ চ্যান্সেলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০০৮ সাল
এ বছর দু’টি পত্রিকা এ পুরস্কার পায়৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ওয়াল্ট বোগদানিচ এবং জেক হুকার পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ চীন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷ এছাড়া ‘শিকাগো ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিনিধি জিতেছিলেন এই পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৯ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর ডেভিড বার্সতো পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পেন্টাগনের সমর্থনে ইরাক যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে কত কোম্পানি সুবিধাভোগ করছে তাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
২০১০ সাল
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলি নিউজ’-এর বারবারা ল্যাকার ও ওয়েনডি রুডারম্যান এবং ‘নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্র-পাবলিকার শেরি ফিঙ্ক যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেছিলেন৷ একটি অসৎ পুলিশ দলের মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি উদঘাটন করেন ল্যাকার ও রুডারম্যান৷ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছিল৷ ফিঙ্ক ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
২০১১ সাল
‘সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর পেইজি সেন্ট জন সে বছর পুলিৎজার পেয়েছিলেন৷ ফ্লোরিডার বাড়ি মালিকদের সম্পদের ইনস্যুরেন্সে দুর্বলতা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁকে এ পুরস্কার এনে দিয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১২ সাল
‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ম্যাট অ্যাপুৎসো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এইলিন সুলিভান এবং ক্রিস হাওলি সে বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ‘ক্ল্যানডেস্টাইন গুপ্তচর কর্মসূচি’র আওতায় শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায় এপি-র ঐ প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করা হয়৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৩ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর ডেভিড বার্সতো এবং আলেহান্দ্রা ইয়ানিক ফন বেরত্রাব এই বছর পুরস্কারটি পান৷ মেক্সিকোতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কীভাবে ওয়াল-মার্ট ঘুষ দেয়, সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০১৪ সাল
ওয়াশিংটর ডিসির ‘দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ইনটিগ্রিটি’-র ক্রিস হামবি জেতেন এই পুরস্কার৷ কয়লা খনির শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ নিয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও চিকিৎসকের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেছিলেন তার প্রতিবেদনে৷ যার ফলে ঐ আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৫ সাল
এ বছর দুইজন জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এরিক লিপটন কংগ্রেস নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের লবিস্টরা তাদের কতটা প্রভাবিত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক প্রতিনিধির স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের জন্য৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
২০১৬ সাল
চলতি বছরে ‘ট্যাম্পা বে টাইমস’-এর লিওনোরা লাপিটার ও অ্যান্থনি কর্মিয়ার এবং ‘দ্য সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর মাইকেল ব্রাগা জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ফ্লোরিডা মানসিক হাসপাতালের অবহেলার অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তাদের প্রতিবেদনে৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
11 ছবি1 | 11
কোনো অনুমিতি তৈরি করার অর্থ এই নয় যে, যেন তেন প্রকারে তাকে সঠিক প্রমাণ করতেই হবে৷ জোর করে তথ্য উপস্থাপনের অর্থ হলো প্রমাণিত তথ্যের চেয়ে মোটিভ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়া৷ এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বহুল আলোচিত আল জাজিরার পরিবেশনা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স মেন’ এর কথা টানা যায়৷ এক ঘন্টার পরিবেশনায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে: গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার একজন প্রধান ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ভাইকে ছদ্ম নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র করে দেয়া; পলাতক দু আসামি গোপনে সংস্থার প্রধানের পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া; সংস্থাটির প্রধান ও তার ভাইরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ও পাচ্ছেন; বিনিময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনে দুটি বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে; এবং ইসরায়েলের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল টেলিফোনে আড়িপাতার যন্ত্র কেনার অভিযোগ৷ প্রত্যেকটি অভিযোগ নিয়ে আলাদা আলাদা রিপোর্ট করা যেতো৷ কিন্তু আল জাজিরা তাদের পরিবেশনায় ভুয়া পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র এবং ইসরাইলি কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্র কেনার অভিযোগ যেভাবে একাধিক সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করে প্রমাণের চেষ্টা করেছে অন্যগুলোতে তা করেনি৷ ফলশ্রুতিতে পরিবেশনার পরিধি বড় হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি৷
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে একাধিক সূত্র ও হাতিয়ার (টুলস) ব্যবহার করে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়৷ কোন তথ্য বা অভিযোগ যতক্ষণ পর্যন্ত কমপক্ষে দুটি সোর্স বা টুলসের মাধ্যমে প্রমাণ করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা রিপোর্টের মুখ দেখতে পারে না৷ সাক্ষাৎকার, নথি, পর্যবেক্ষণ ও জরিপ – এই চারটি টুলসের যে কোন দুটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী রিপোর্টে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়৷ প্রধানমন্ত্রী একটি বাহিনীর প্রধান ও তার ভাইদের সহযোগিতা করছে, দুটি নির্বাচনে দুটি বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমন গুরুতর অভিযোগ শুধু একজনের ঘরোয়াভাবে প্রদত্ত বক্তব্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে যাওয়ার প্রয়াস শিক্ষানবিশ রিপোর্টাররাও করবেন না৷ এ ধরনের প্রয়াসে ধান ভাঙতে শিবের গীত এসে যায়৷ তাই আল জাজিরার পরিবেশনা অনাবশ্যক ঘন্টা ছাড়িয়েছে, ফোকাসগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে৷ তাদের মোটিভ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷
আল জাজিরার প্রতিবেদন সত্য, আংশিক সত্য, নাকি মিথ্যা?
58:18
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আরেকটি বৈশিষ্ট্যটি হলো বস্তুনিষ্ঠতা এবং নিরপেক্ষতা৷ এ ধরনের সাংবাদিকতায়, সাংবাদিকতার মৌল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ‘বস্তুনিষ্ঠতা’র বিষয়টি প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য জনস্বার্থ৷ জনস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে অন্যের আইনি ও নৈতিক অধিকারের বারোটা বাজালে তখন বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না৷ এজন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাননিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব জরুরি৷ মান নিয়ন্ত্রণ বা শুধু যাচাইকৃত তথ্য উপস্থাপনের রীতি হলো পেশাগত নীতিমালার অংশ৷ আল জাজিরার ওয়েব সাইটে যে কোড অব কন্ডাক্ট দেয়া আছে সে অনুযায়ী তাদের এই পরিবেশনা এভাবে প্রচারিত হতে পারে না৷ নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন না করে শুধু নিজের অনুমিতি ও মোটিভ জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় পুরস্কার পুলিৎজার হারানোর উদাহরণও আছে৷ ১৯৮০ সালে হেরোইন আসক্ত আট বছর বয়সি এক বালকের ওপর ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ‘জিমি'স ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে জ্যানেট কুকির প্রতিবেদনটি পরের বছর পুলিৎজার পেয়েছিল৷ কুকি রাতারাতি বনে যান তারকা রিপোর্টার৷ প্রতিবেদনে সবই ঠিক ছিল, কেবল বালক জিমির গল্পটির কোন সত্যতা ছিল না৷ পরে অবশ্য প্রমাণিত হয় কুকির শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভুয়া ছিল৷ শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ২০০৩ সালে চাকরি হারান নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জেসন ব্লেয়ার৷ পত্রিকাটি ভুল স্বীকার করে একই সাথে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদককে বিদায় দিয়ে বলেছিল, এ ধরনের প্রতিবেদন তাদের ১৫২ বছরের ইতিহাসে বিশ্বাসভঙ্গের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ৷ অপ্রমাণিত তথ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উপস্থাপন করায় ২০১৭ সালে সিএনএন তাদের অনুসন্ধানী দলের প্রধানসহ তিনজনকে চাকরিচ্যুত করেছিল৷
অনুসন্ধানী খবরের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে হুইসেলব্লোয়াররা, যারা প্রতিষ্ঠান বা কর্মপ্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে দুর্নীতি বা অনিয়মের খবর ফাঁস করে দেন৷ উইকিলিকসের চেলসি ম্যানিং, সাবেক এনএসএ কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন বা পানামা পেপার্স অনুসন্ধানের পেছনে থাকা ‘জন ডো’ দেখিয়েছেন, তথ্য-ফাঁসের সাংবাদিকতা দিয়ে কত বড় পরিবর্তন আনা যায় সমাজে৷ কিন্তু হুইসেলব্লোয়ারদের উদ্দেশ্য বুঝে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা সাংবাদিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রমাণ না করা পর্যন্ত তাদের দেয়া তথ্যগুলো শুধুই অভিযোগ৷ এখানেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাথে লিক সাংবাদিকতার পার্থক্য৷ প্রসঙ্গক্রমে গার্ডিয়ানের ভাষায় এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী খবর লাতিন আমেরিকার ‘অপারেশন কার ওয়াশে'র সাংবাদিকদের কথা বলা যায়৷ ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তাদের প্রায় ৭৮ কোটি ডলার দুর্নীতির এই খবর নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে এখনও সংবাদ করে যাচ্ছেন৷ তাদের নীতি হলো প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন অভিযোগ খবরের আলোর মুখ দেখতে পারে না৷
অল দ্য প্রেসিডেন্ট'স মেনের পর স্পটলাইট চলচ্চিত্রটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবেশনা৷ এই চলচ্চিত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হাইলাইট করা হয়েছে৷ পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ক্যাথলিক চার্চে কয়েক হাজার শিশু যৌন নিপীড়ন নিয়ে করা বস্টন গ্লোবসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছিল এই চলচ্চিত্রের উপজীব্য৷ চলচ্চিত্রে বলা হয়, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলো পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত৷ অনুসন্ধানের শুরু হয় বড় কিছু দিয়ে, তারপর নজর ফেলা হয় ক্রমশ ছোট বিষয়ে৷ বড় পরিসর থেকে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে প্রতিবেদক বের করে আনতে থাকেন ছোট ছোট সূত্র, যতক্ষণ না গল্পটা দাঁড়ায়৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোন খোসা বা স্তর যদি পচা হয় আমরা পেঁয়াজের সে অংশটি খাই না, ফেলে দিই৷ তেমনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কোন অভিযোগ বা তথ্য প্রমাণ করা না গেলে তা প্রকাশ করতে হয় না৷ করলে তা একমণ দুধের মধ্যে এক ফোটা লেবুর রসের মতই বিষক্রিয়া ঘটাতে বাধ্য৷
আল জাজিরার রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্নের মুখে সরকারের সততা