1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বাধা কোথায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ নভেম্বর ২০১৬

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শুরু করেন আবেদ খান৷ ‘ওপেন সিক্রেট’ নামে তাঁর প্রতিবেদন ছাপা হতো৷ তখন তাঁর সেইসব প্রতিবেদন ব্যাপক সাড়া জাগায়৷ কিন্তু...

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতীকী ছবি
ছবি: Hoang Dinh Nam/AFP/Getty Images

শেষ পর্যন্ত ‘ওপেন সিক্রেট' বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় তাঁকে৷ এমনকি মাঠের সাংবাদিকতাও ছাড়তে হয় আবেদ খানকে৷ বদলে তাঁকে বসিয়ে দেয়া হয় ডেস্কে৷ সেই ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ওপেন সিক্রেট'-এর শেষ পরিণতি নিয়ে ডয়চে ভেলেকে আবেদ খান জানান, ‘‘আমি ১৯৭৫-এর মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকে যাই৷ মেজর ডালিমসহ কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা সে সময় একটি বৈঠক করছিলেন৷ তাঁদের সেই বৈঠকে সরকার উৎখাত ও বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল৷ যে কোনো উপায়ে আমি সেই বৈঠক পর্যন্ত পৌঁছে যাই৷ কিন্তু সেই প্রতিবেদন আমি ছাপতে পারিনি৷ আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল৷ ইত্তেফাকের মধ্যেই ঐ সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষের প্রভাবশালী লোক ছিল৷ তারা আমাকে বসিয়ে দেয়৷ এরপর আমি আর ‘ওপেন সিক্রেট' প্রতিবেদন করিনি৷ পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে আবারও উদ্যোগ নেই ‘ওপেন সিক্রেট'-এর৷ কিন্তু সেবার সরকারি আদেশেই ‘ওপেন সিক্রেট' বন্ধ করা হয়৷''

Abed Khan - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

৭২ থেকে ৭৫ সাল – এ সময়টা জুড়ে আবেদ খান ‘ওপেন সিক্রেট' নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন৷ এই ‘ওপেন সিক্রেট'-কে স্বাধীন বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রথম পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হয়৷  সে সময়ের রিপোর্টার আর এখনকার সম্পাদক আবেদ খান বলেন, ‘‘আমার প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু নিয়মিত পড়তেন, ব্যবস্থাও নিতেন৷ আমার প্রতিবেদনের কারণে বিডিআর থেকে সিআর দত্তকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ডেপুটি গভর্নরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল৷ আরো অনেক কাজ হয়েছিল৷ শুনেছি, সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে হত্যার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল৷''

তাঁর কথায়, ‘‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য দরকার সাহস, যোগ্যতা, কমিটমেন্ট এবং সততা৷ এছাড়া দরকার সংবাদমাধ্যম-এর সমর্থন ও সহযোগিতা৷ এটা সহজ নয়৷ তাই সবদেশেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ৷''

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কমিটমেন্ট, সাহস আর সততার অভাব৷ একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোও চায় না কোনো ‘রিস্ক' নিতে৷''

প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না

বাংলাদেশের আলোচিত সাপ্তাহিক পত্রিকা সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তজা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রা থেকে সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু করেন৷ বরেণ্য সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরির নেতৃত্বে সাপ্তাহিক বিচিত্রা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান ছিল৷ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ, আদালত এলকার দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে বিচিত্রার আলোচিত সব প্রতিেদনগুলো এখনো হয়ত অনেকের মনে আছে৷ তাছাড়া গবেষক ও বিতার্কিকদের কাছে বিচিত্রার পুরনো কপি আজও আকড় হিসেবে কাজ করে৷

Golam Mortoza - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

গোলাম মোর্তোজা বলেন, ‘‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যে হচ্ছে না, তা নয়৷ তবে আমরা যতটা আশা করি ততটা হচ্ছে না৷ পাঠক বা দর্শকরা আশা করেন বড় কোনো ঘটনায় যেখানে পুলিশ প্রশাসন ঠিকমত কাজ করে না, সেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরাই পথ দেখাবেন৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড বা গুলশান হামলায় যে ধরনের অনুসন্ধান আমরা আশা করেছি, সাংবাদিকদের কাছ থেকে তা আমরা পাইনি৷''

তাঁর কথায়, ‘‘সাংবাদিকতা এখন অনলাইন, রেডিও-টিভি মিলে অনেক বিস্তৃত৷ কিন্তু সেইভাবে বিস্তৃত হয়নি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা৷''

এর কারণ কী? গোলাম মোর্তজা জানান, ‘‘সাংবাদিকতায় এক ধরনের কথিত ‘গ্ল্যামার' এসেছে৷ তেমন কিছু না করেও এখন বড় সাংবাদিক হয়ে যান কেউ কেউ, কষ্ট করতে চান না৷ সেই সঙ্গে কর্পোরেট চরিত্রের কারণে অনেক সংবাদমাধ্যম ‘রিস্ক' নিতে চায় না৷ এর সঙ্গে দক্ষতার অভাব আর আইনের নানা খড়গ তো আছেই৷ দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ পদে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় দক্ষ তেমন কাউকে দেখি না, যাঁরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে নতুন প্রজন্মকে দক্ষ করে তুলবেন৷''

বাংলাদেশে এরপরও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আছে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেওয়া সোনার মেডেল এবং ক্রেস্ট যে পুরোটাই ফাঁকি – এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘প্রথম আলো'৷ বলা বাহুল্য, রোজিনা ইসলামের সেই প্রতিবেদন হইচই ফেলে দেয়৷ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোও আলোচিত৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে উল্লেখ করার মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়েছে৷ এছাড়া দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও কম নয়৷

Samim Reza - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখা গেছে প্রায় দুই দশক আগে থেকেই৷ বেশ কয়েকজন তরুণ সাংবাদিক আছেন, যাঁদের জঙ্গি বিষয়ক ধারাবহিক অনুসন্ধান বেশ আলোচিত৷ এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাঁদের ‘রেফারেন্স' হিসেবে ব্যবহার করেন৷ তাঁদেরই একজন একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ার৷ টেলিভিশন ও প্রিন্ট – দুই মাধ্যমেই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তিনি টিআইবি পুরস্কারও পেয়েছেন৷ দীপু বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উৎস, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং ক্রমবিকাশ নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন৷ জঙ্গি আস্তানায় গিয়ে সরাসরি জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আসলে প্রথমে রিপোর্টারকেই যোগ্য হতে হবে৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কী, সেটা বুঝতে হবে তাঁকে৷ তারপর তিনি ঠিক কী করতে চান, তা তাঁর কর্তৃপক্ষের কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে৷ এটা না করতে পারলে কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় রাজি করানো কঠিন৷ এতে অনেক সমস্যা আছে, ঝুঁকি আছে, কিন্তু আসল কাজ তো রিপোর্টারের৷''

বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথে অন্তরায় কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা মনে করেন, এখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে৷ এর মধ্যে – সুশাসনের অভাব, প্রতিকূল আইন, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, প্রাতিষ্ঠানিক আগ্রহ ও অর্থ খরচে অনীহা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঠিক ধারণার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি সুরক্ষার অভাব অন্যতম৷

তিনি মনে করেন, ‘‘এটা সংবাদমাধ্যমকে বুঝতে হবে যে, এখন আর প্রতিদিনের ঘটনা প্রকাশ করে টিকে থাকা যাবে না৷ মানুষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পড়তে চায়, ভিতরের খবর জানতে চায়৷ কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই ধরনের সাংবাদিকতায় যে প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, তা করতে হবে৷ নয়ত এমন সময় আসবে যে, যাঁরা এর বাইরে থাকবেন তাঁরা পিছিয়ে পড়বেন৷''

Robayet Ferdous - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস অবশ্য জানান, ‘‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ সাংবাদিক আছেন৷ প্রশিক্ষণের সুযোগ এখানে আছে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ‘নিউজ ম্যানেজমেন্টে'৷ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে দীর্ঘ সময় লাগে, মোটা অঙ্কের বিনিয়োগও লাগে৷ আর সেটা অনেক প্রতিষ্ঠানই করতে চায় না৷ তারা মনে করে, একজন সাংবাদিক প্রতিদিনের প্রতিবেদন তৈরি করবেন৷ একমাসে একটি প্রতিবেদন তারা ভাবতেই চায় না৷ তারা একে অপচয় মনে করে৷''

তবে তিনিও বলেন, ‘‘এটা তাদের জানতে হবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই প্রতিষ্ঠানকে শেষ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখাবে৷ বাংলাদেশে তার প্রমাণও আছে৷''

এরপরেও বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সার্ফেস, ক্রেকিং, স্কুপ বা ফলো-আপ প্রতিবেদনকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলে মনে করা হয়৷ এটা আসলে সঠিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাবে হয় বলে মনে করেন অধ্যাপক শামীম রেজা৷

টেলিভিশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা

বাংলাদেশে ‘ব্রডব্যান্ডে' সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশনই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শুরু করে৷ নব্বইয়ের দশকে ‘পরিপ্রেক্ষিত' নামে একটি সংবাদ ভিত্তিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা শুরু হয়৷ সৈয়দ বোরহান কবীরের উপস্থাপনায় প্রচারিত হতো অনুষ্ঠানটি৷ তবে নানা চাপের কারণে এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানটি আর চালাতে পারেনি বিটিভি৷ এরপর ইত্তেফাকের আবেদ খানই বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ‘টেরিটোরিয়াল' টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভিতে ‘ঘটনার আড়ালে' নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অনুষ্ঠান শুরু করেন৷ কিন্তু বিএনপি সকারের আমলে একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেলে সেই অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়৷ আবেদ খান জানান, ‘‘ঐ সংবাদ ভিত্তিক অনুষ্ঠানে আমরাই প্রথম জেল হত্যার বিষয়ে কারাগারে ঢুকে প্রতিবেদন প্রচার করেছিলাম, যাতে করে অনেক অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছিল৷''

Dipu Sarowar - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

ওয়ান ইলেভেনের সময় আবার একুশে টেলিভিশন চালু হলে ‘একুশের চোখ' নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আরেকটি অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ এই অনুষ্ঠানটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় টিআইবি অ্যাওয়ার্ডও পায়৷ এই অনুষ্ঠানে দুর্নীতি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার হয়৷ এছাড়া মোবাইল ফোনের টাওয়ারের রেডিয়েশন ও অর্থের বিনিময়ে কতিপয় র‌্যাব সদস্যের হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদনটিও আলোচিত হয়৷ এই অনুষ্ঠানের দু'টি প্রতিবেদন যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত৷ তবে অনুষ্ঠানটি যে সাংবাদিকরা করতেন, তাঁরা এখন আর সেখানে নাই, মানে টিকতে পারেননি৷ এরপরও অবশ্য অনুষ্ঠানটি এখনো চলছে৷

একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ার বলেন, ‘‘একুশের চোখের অনুসরণে পরে দেশের প্রায় সব বেসরকারি টিভি চ্যানেলই অপরাধ অনুসন্ধানের সংবাদ ম্যাগাজিন চালু করে৷ তবে তারা যেটা করছে, সেটা এখন আর রিপোটিং না বলে ‘ফিকশন' বলাই ভালো৷''

যমুনা টেলিভিশনের মোহসীন উল হাকিম আর মাছরাঙা টিভির বদরুদ্দোজা বাবু টেলিভিশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দুই আলোচিত সাংবাদিক৷ মোহসীন উল হাকিম সুন্দরবন এবং জলদস্যুদের নিয়ে অনেক আলোচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন৷ তাঁর এ সব প্রতিবেদনের কারণেই বেশ কয়েকটি জলদস্যু গ্রুপ আত্মসমর্পণ করেছে৷ অন্যদিকে বদরুদ্দোজা বাবু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে আলোচনায় আসেন৷

সম্পাদক গোলাম মোর্তজা বলেন, ‘‘টেলিভিশনে আরো কিছু ভালো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমার চোখে পড়েছে৷ তবে তা পরিমাণে অল্প৷ আসলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঝুঁকি এবং খরচ অনেকেই বহন করতে চান না৷ তার ওপর সাংবাদিকদের সেইভাবে ‘প্রটেকশনও' দেওয়া হয় না৷''

Iftekharuzzaman - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেন প্রয়োজন?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি গত ১৮ বছর ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার দিয়ে আসছে৷ এছাড়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তারা ‘ফেলোশিপ' দেয়, আয়োজন করে নিয়মিত ওয়ার্কশপেরও৷ তাদের এই প্রচেষ্টার কারণ কী? জানতে চাই টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখরুজ্জামানের কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দুর্নীতি, অপরাধসহ নানা অনিয়ম প্রকাশ ও প্রতিরোধে সহায়তা করে৷ আমরা যারা দুর্নীতি বিরুদ্ধে কাজ করি, তারা এই ধরনের প্রতিবেদন থেকে সহায়তা পাই৷ পরিস্থিতি বুঝতে পারি৷ এ জন্যই আমরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো সমর্থন এবং সেই প্রতিবেদনগুলো যাঁরা করছেন, তাঁদের নানাভাবে সহায়তা করতে চাই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার সব সময় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সহায়ক হবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ এখানেও নানা আইন করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই আসল সাংবাদিকতা৷ তাই এটা আরো বাড়াতে হবে৷''

তবে সংবাদমাধ্যমের বাইরে আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার বিরোধী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস৷ তিনি মনে করেন, ‘‘উইকিলিক্স বা পনামা পেপার্স নয়, আমরা চাই প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা৷ আর সংবাদমাধ্যম যত দ্রুত এটা বুঝবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের ক্ষমতা এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এটা সরকারকেও বুঝতে হবে যে,. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সরকারের জন্যও উৎকর্ষতা অর্জনে সহায়ক৷ তবে শুধুমাত্র সরকার যদি সেটা চায়৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ