অনেক শিক্ষক সমিতি, তবু শিক্ষক নির্যাতনে প্রতিবাদ কম
১ জুলাই ২০২২
বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দুশ'রও বেশি সমিতি আছে৷ শিক্ষকদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদ, দোষীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে তারা কতটা তৎপর?
বিজ্ঞাপন
সব পর্যায়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো- এই সমিতিগুলো দলীয় রাজনীতির কারণে বিভক্ত৷ নেতারা নানা স্বার্থ নিয়ে ঘোরেন৷ পদ,পদবি, পদোন্নতিসহ নানা বিষয় নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন৷ তাই শিক্ষক সমিতিগুলো শিক্ষকদের বিষয় নিয়ে কাজ করার তেমন সময় পায় না৷
আরেকটি বিষয় হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে অন্য পর্যায়ের শিক্ষক নেতারা প্রতিবাদের ভারও প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপরই ছেড়ে দেন৷ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও অন্যরা একই রকম চিন্তা করেন৷ কোনো মাদ্রাসা শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে বাকিদের তা নিয়ে তেমন আগ্রহই দেখা যায় না৷ তবে সবাইর কথা হলো, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাতে জিম্মি৷ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে চাকরিই তো থাকে না৷ তারপর প্রতিবদী হলে তো আরো বিপদ৷’’
প্রাথমিক শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি৷ সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘‘শিক্ষকদের ওপর কোনো অন্যায় হলে প্রতিবাদ হয়৷ কিন্তু সেই প্রতিবাদটা জোরালো নয়৷ এর কারণ শিক্ষকদের সব সংগঠন প্রতিবাদ করে না৷ শিক্ষক সে প্রাইমারি, হাইস্কুল বা মাদ্রাসা যে প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক হোক না কেন, সে শিক্ষক৷ সেটাই তার পরিচয়৷ কিন্তু দেখা যায়, প্রাইমারির কোনো শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে অন্যরা সেটা নিয়ে কথা বলে না৷ মাদ্রাসা শিক্ষক লাঞ্ছিত হলে অন্যরা মনে করেন, সে তো মাদ্রাসা শিক্ষক৷ আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো সময় প্রতিবাদ করতে দেখি না৷ সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে এই পরিস্থিতি হতো না৷’’
তিনি মনে করেন, এখন শিক্ষকদের যে দুইশরও বেশি সংগঠন আছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে৷
মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘‘শিক্ষকরা যে কার্যকর প্রতিবাদ করছেন না, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখন ম্যানেজিং কমিটির হাতে জিম্মি৷ কমিটিগুলো দলীয় নেতা এবং এমন লোকের হাতে চলে গেছে, যাদের সুশিক্ষিত বলা যাবে না৷ তাদের পেশি শক্তি, রাজনৈতি শক্তি সবই আছে৷ ফলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যেতে পারেন না৷ নড়াইলে পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো হলো৷ তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না৷ তাদের ছত্রচ্ছায়ায়ই ঘটনা ঘটলো৷ এতেই বোঝা যায়, প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষকদের কী চোখে দেখেন৷’’
তার কথা, ‘‘রাষ্ট্রীয়ভাবেও শিক্ষকরা অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার৷ তারই প্রতিফলন এখন আমরা স্থানীয় পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছি৷”
শিক্ষা, শিক্ষকতা ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে শিক্ষাঙ্গন ও বাইরের প্রভাব
শিক্ষক মানেই গুরু৷ শিক্ষার্থী তার কাছে স্নেহাস্পদ৷ কিন্তু ইদানীং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট৷ তাতে শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষক, সমাজ, রাজনীতি, পাঠক্রমের ভূমিকা কতটুকু? এর উত্তর খুঁজেছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: bdnews24.com
আবদুল্লাহ রানা, সাংস্কৃতিক কর্মী
সামগ্রিক পরিবেশের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক পরিবেশও অনেকটা দায়ী৷ আমার ছেলে যখন ক্লাস থ্রি-তে পড়তো, তখন একদিন সে আমাকে বলল, তার ক্লাসের একটা ছেলে হিন্দু বলে তার সঙ্গে কেউ কথা বলে না৷ আমি তখন হেডমাস্টারের সঙ্গে কথা বলি৷ ওই স্কুলের পরিবেশ কিন্তু এমন না৷ তার মানে, পরিবার থেকেই এটা এসেছে৷ আসলে বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই, এলাকায় লাইব্রেরি নেই৷ কীভাবে আমরা ধর্মান্ধ একটা জাতিতে পরিণত হতে পারি- সে দিকেই যাচ্ছি৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
তৌহিদুল হক, সমাজ গবেষক ও শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তৈরি করা৷ নৈতিক শিক্ষা আমরা পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ থেকে পেয়ে থাকি৷ ধর্মীয় বোধও গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নৈতিক শিক্ষার দায়টা পরিবার ও রাষ্ট্র শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে থাকে, যা একপেশে ধারণা৷ সমাজের সব স্তরেই যদি নৈতিকতার চর্চা না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র শিক্ষকদের বক্তব্য বা বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হবে, এমন মনে করা ঠিক নয়৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আরেফিন শরিয়ত, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নৈতিক শিক্ষা বইপত্র পড়ে শেখা যায় না৷ পারিবারিক সংস্কৃতি, শিক্ষকের মানসিকতা- এসবের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে৷ মানসিকতার কারণে ধর্ম ও বিজ্ঞান আলাদা হয়ে যায়৷ দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের ভাবনার জায়গা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রসার ঘটছে না, যে কারণে শিক্ষার্থীরা এখন অন্য ধর্মের শিক্ষককে ভিন্ন চোখে দেখছে৷ এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ৷ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শিক্ষককে কীভাবে দেখছেন তারও প্রতিফলন ঘটছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
রুকাইয়া জহির, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
দিন দিন আমরা বাঙালি সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি৷ গত দুই বছর ধরে কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা নেই৷ আমরা যদি বাঙালি সংস্কৃতি আরো বেশি তুলে ধরতে পারি, আরো বেশি চর্চা করতে পারি, তাহলে বিভাজনটা চলে যাবে৷ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই আমরা আবার বিশ্ব বাঙালি এক হতে পারি, আমাদের অন্ধত্ব দূর হতে পারে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সালমান সিদ্দিকী, সভাপতি, ছাত্রফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত৷ এই সম্পর্কের উপর নির্ভর করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এগুবে, না পেছাবে৷ যত দিন যাচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে৷ এখন আমরা দেখি, ছাত্রকে অপহরণ করছেন শিক্ষক৷ আবার ছাত্ররা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷ এখন শুধু স্কুল না, পুরো রাষ্ট্রের মধ্যে ধর্মকে ব্যবহার করা, ধর্মকে ব্যবহার করে অন্যকে ফাঁসানো, একটা উন্মাদনা তৈরি করার প্রবণতা বাড়ছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সায়মা সিদ্দিকা, উন্নয়নকর্মী
আমাদের মধ্যে ধর্মভিরুতা তৈরি করা হচ্ছে৷ দীর্ঘদিনের যে সমাজ-সংস্কৃতি তা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ এটা হওয়া উচিত না৷ পরিবার থেকেই বাচ্চাদের আমাদের কৃষ্টি-কালচার শেখাতে হবে৷ যেমন কীভাবে আমরা একে অপরের ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে মিশে যেতাম, এখনও যেতে পারি৷ এতে আমাদের ধর্মের কোনো ক্ষতি হবে না৷ আমি এখনও বিশ্বাস করি, সমাজে এই ধরনের মানুষ এখনও আছে৷ তারাই পরিস্থিতি পালটে দেবে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
অনিক রায়, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন
আমাদের সময় যেভাবে পাঠ্যবইয়ে ধর্ম পড়ানো হতো, এখন সেভাবে হচ্ছে না৷ এখন ধর্মকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও উগ্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ ওয়াজগুলো কোনো সেন্সর ছাড়াই চলছে৷ সেখানে নারীর বিরুদ্ধে বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, যেটা বারবার বলার কারণে মানুষের মাথায় গেঁথে যায়৷ শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের যে ঘটনা, সেখানে একটি ছেলে বারবার বলছে, সে ওয়াজে শুনেছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
উৎপল বিশ্বাস, সাবেক ভিপি, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে সম্পর্কটা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি এখন সেটা আর নেই৷ শিক্ষকরা এখন অনেক হীনমন্যতায় ভুগছেন৷ নৈতিক শিক্ষা দিতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হতে হয় কিনা তা তাদের ভাবনায় থাকছে৷ এই সুযোগটা শিক্ষার্থীরা নিচ্ছে৷ কোনো শিক্ষক যদি কিছু বলেনও, শিক্ষার্থীরা সেটিকে ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ এই যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে দূরত্ব, এর জন্য জাতিকে আগামী দিনে চড়া মাশুল দিতে হবে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সুস্মিতা রায় সুপ্তি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকার সমন্বয়ক
আমরা যেটা দেখছি, শিশুদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষা এত বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তারা নৈতিক শিক্ষার কথা ভাবতেই পারছে না৷ শুধু বই পড়ছে৷ এখন বেশি নম্বর পাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে৷ স্কুলের প্রশ্ন ফাঁস করছেন শিক্ষক৷ এগুলো তো ভয়াবহ ব্যাপার৷ যে শিক্ষক নৈতিক শিক্ষা দেবেন, তিনি যদি প্রশ্ন ফাঁস করে দেন, তাহলে কোথায় শিখবে৷ আবার অভিভাবকরাও এই প্রশ্ন সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
শান্তনু মজুমদার, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা যে খুব একটা গুরুত্ব পায়, তা নয়৷ শিক্ষার ক্ষেত্রে সহনশীলতা এবং বৈচিত্র খুবই প্রয়োজন৷ আমি এখনও বিশ্বাস করি না, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ধর্মের ভিত্তিতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক রচনা করে৷ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে প্রবণতা দেখছি, সেটা একটা দুষ্টু প্রবণতা৷ শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ নষ্ট করার রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক চেষ্টা তো আছেই৷ তবে আমি মনে করি না, এখনও সব ধ্বংসের মুখে চলে গেছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
10 ছবি1 | 10
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যার পর আমরা সেখানে গিয়েছি৷ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি৷ নারায়ণগঞ্জেে শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবসের ঘটনার পরও আমরা সেখানে গিয়েছি৷ নড়াইলে জুতার মালা পরানোর পরও আমরা গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি৷”
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘ম্যানেজিং কমিটির কারণে আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত৷ আমাকে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ম্যানেজিং কমিটি খড়গের মতো৷ শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সামনে৷ ভয়ে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে পারেনি৷ আশুলিয়ায় নিহত শিক্ষককে হত্যার উদ্দেশ্যে যখন পিটানো হয়, তখন আরেকজন শিক্ষক ওই ছাত্রকে জাপটে ধরেছিল৷ কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ আরো অনেকে তার আত্মীয় হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়৷”
তবে শিক্ষকের মর্যাদাহানির ঘটনায় সমিতিগুলোর খুব বেশি প্রতিবাদমুখর না হওয়ার কারণ হিসেবে রাজনীতিকেও দুষেছেন তিনি, ‘‘শিক্ষকরাও এখন দলীয়ভাবে বিভক্ত৷ অনেক সমিতিই আছে যারা দলীয় স্লোগান দিয়ে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করে৷ শিক্ষক নেতারা যদি রাজনীতি করেন, দলীয় স্লোগান দেন, দালালি করেন, তাহলে তো তাদের নৈতিক অবস্থান এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায়৷’’
আশুলিয়ায় শিক্ষক নিহত হওয়ার পর এই সংগঠনের নেতারা কেউ সেখানে যাননি বা নিহত শিক্ষক উৎপল সরকারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেননি৷ তারা নড়াইলেও যাননি৷ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘শ্যামল কান্তিসহ অন্য শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় আমরা গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি৷ তবে পুলিশ বা প্রশাসন আমাদের প্রতিবাদকে তেমন গুরুত্ব দেয় না, আমলে নেয় না৷ তারা প্রভাবশালীদের কথায় কাজ করে৷’’
মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেসিনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা সাব্বির আহমেদ মমতাজি মনে করেন, ‘‘শিক্ষকদের মূল কাজ ছাত্রদের পড়াশোনা করানো৷ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তাদের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ৷ কেউ কেউ এই মূল কাজ বাদ দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে নানা সমিতি করে, রাজনীতি করে৷ এটা ঠিক না৷ শিক্ষক নির্যাতনের প্রতিবাদ যে হয়না তা নয়৷ তবে যত সমিতি তত প্রতিবাদ দেখি না৷”
শিক্ষকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘‘আশুলিয়ায় শিক্ষক নিহত হওয়ার পর আপনারা কী করেছেন?’’ জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছি৷”
শিক্ষক সংগঠনগুলো বাস্তবে এখন বিবৃতি এবং ফেসবুক প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ শিক্ষক নেতারা এজন্য সামাজিক অবক্ষয় এবং রাষ্ট্রের উদাসীনতাকে দায়ী করেন৷
অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘‘শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন একজন সংসদ সদস্য৷ তার কোনো বিচার হয়নি৷ ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ একজন শিক্ষককে লাঞ্ছনাকারী যতই প্রভাবশালী হোক, রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না?”
তিনটি বৈশ্বিক শিক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান
শিক্ষার মান তুলে ধরে এমন তিনটি বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ৷ এর মধ্যে দুটি সূচকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নীচে৷
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক
ইউএনডিপি ও মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম৷ সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে৷ প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশ৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে পাকিস্তান (১২৩), নেপাল (১২৮) ও আফগানিস্তান (১৫১)৷ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছে শ্রীলঙ্কা (৮৬)৷ ভারত ও ভুটান আছে যথাক্রমে ৯৭ ও ১০৮তম স্থানে৷
ছবি: David Talukdar/Zumapress/picture alliance
প্রতিভা সূচক
ফ্রান্সভিত্তিক বিজনেস স্কুল ‘ইনসিয়েড’ ও ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘পোর্টুল্যান্স ইনস্টিটিউটের’ গত অক্টোবরে প্রকাশিত ২০২১ সালের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে’ ১৩৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ নম্বরে৷ মেধা অর্জনের সক্ষমতা, আগ্রহ, বিকাশ, ধরে রাখা, বৃত্তিমূলক, কারিগরি দক্ষতা ও বৈশ্বিক জ্ঞান- এই সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago/epd
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
প্রতিভা সূচক দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নীচে৷ এই অঞ্চলে শীর্ষে আছে ভারত (৮৮)৷ এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (৯৩), পাকিস্তান (১০৭) ও নেপাল (১১৩)৷
ছবি: AP
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক
জাতিসংঘের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের’ প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬ নম্বরে৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
উদ্ভাবন সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নীচে আছে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারত (৪৬)৷ এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (৯৫), পাকিস্তান (৯৯) ও নেপাল (১১১)৷
ছবি: IANS
বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম
ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের হিসেব বলছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম বাজেট বরাদ্দ করা হয়৷ ১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে৷ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র ১.৮৩ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ একটি দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত বলে মনে করে ইউনেস্কো৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷