1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

​​​​​​​অনেক সাংবাদিক নৈতিকতায় কম্প্রোমাইজ করছেন

৮ নভেম্বর ২০১৯

সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকদের গুরুত্ব কি দিন দিন কমে যাচ্ছে? যদি এমনটাই হয় তাহলে কেন এই পরিস্থিতি?

Bangladesh Zeitungen
ছবি: DW

প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই অবক্ষয় হয়েছে৷ অবক্ষয় হয়েছে সাংবাদিকতারও৷ প্রাপ্তির আশায় অনেকেই নৈতিকতায় কম্প্রোমাইজ করছেন৷ ফলে সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে : আপনারা যখন শুরু করেছেন তখন সাংবাদিকতা কেমন ছিল, আর এখন কেমন?

ইকবাল সোবহান চৌধুরী : আমরা যখন শুরু করেছি, তখন আমাদের যারা পূর্বসূরি ছিলেন তারা ছিলেন আমাদের আদর্শ৷ বর্তমানে সেই সুযোগটা কমে গেছে৷ এখন মিডিয়ার বিস্তৃতি ঘটেছে৷ সাংবাদিকদের পরিবার অনেক বড় হয়েছে৷ এখন প্রযুক্তির কারণে অত বেশি তথ্য রাখতে হয় না৷ আগে তথ্য নিতে যেতে হতো৷ আর এখন আপনি চাইলে গুগলে গিয়ে বা ইন্টারনেটে গিয়ে সব তথ্যই পাচ্ছেন৷ সেটা শুধু দেশি না, বিদেশী রেফারেন্সও আপনি পাচ্ছেন৷ ফলে সাংবাদিকতায় এখন পরিশ্রমের প্রবণতা কমে গেছে৷ নীতি নৈতিকতা বা বস্তুনিষ্ঠতাও এখন সংখ্যার কারণে কমে যাচ্ছে৷ আগে মালিকেরা একটা ভিশন নিয়ে সংবাদপত্র বের করতেন৷ এখন কর্পোরেট কালচারের কারণে এটা পেশার মতো না হয়ে চাকরির মতো হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে নীতি নৈতিকতায়ও একটা কম্প্রোমাইজের ভাব চলে এসেছে৷ এসব কারণে সাংবাদিকতাও এক ব্যবসায়িক জায়গায় চলে গেছে৷

সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাংবাদিকেরা আগে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতেন, রাজনীতিবিদ ও সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছেও সাংবাদিকদের গুরুত্ব ছিল, এখন এটা নেই কেন?

এর দু'টি কারণ৷ আমাদের যারা পূর্বসূরি ছিলেন তাদের একটা নীতি আদর্শ ছিল৷ এ কারণে তাদের অনেক সাহস ছিল৷ আদর্শ বা ভিশন বাস্তবায়নে তারা সাংবাদিকতা করতেন৷ রাষ্ট্রের কাছে কোন স্বার্থের জন্য বা পাওনার জন্য তারা লালাইতো ছিলেন না৷ সব জায়গায়ই তো অবক্ষয়৷ তাই অন্যান্য পেশার মতো আমাদের মধ্যেও প্রাপ্তির আকাঙ্খা জেগে উঠেছে৷ প্রাপ্তির জন্য তাই অনেকেই কম্প্রোমাইজ করছে সরকার বলুন আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বলুন বা অন্য কোন স্বার্থের কাছে৷ এই কারণে সাংবাদিকদের প্রতি আগে যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল এখন সেটার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে৷ আরেকটি বিষয়, সেটা হল আগে আমাদের যে ইউনিয়ন ছিল সেটা ছিল দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে৷ ১৯৯১ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পর সাংবাদিকরাও রাজনীতিকভাবে বিভক্ত হয়ে যান৷ ফলে সরকার বা কর্পোরেট হাউজগুলোও সাংবাদিকদের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন৷ পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছেও মিডিয়া অনেক সময় দূর্বল হয়ে পড়ে৷ তাদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজও করতে হচ্ছে৷

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? রাষ্ট্র ব্যবস্থা সাংবাদিকরা না সংবাদপত্রের মালিকরা?

সবকিছু মিলিয়েই৷ সাংবাদিকতা তো বিচ্ছিন্ন কোন অংশ না৷ সমাজেরই একটা প্রতিচ্ছবি৷ টোটাল ব্যবস্থার একটি পার্ট হলাম আমরা৷ আয়না যদি ভালো না হয় তাহলে প্রতিচ্ছবি ভালো হবে না৷ সমাজ, রাষ্ট্র যদি আয়না হয় তাহলে সাংবাদিকরা প্রতিচ্ছবি৷ কর্পোরেট কালচারে মালিকেরা অনেক সময় সাংবাদিকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন৷

সাংবাদিকতার ভবিষ্যত কেমন দেখেন আপনি?

আমি যে অবক্ষয়ের কথা বলেছি, সেটার শিকার কিছু সংখ্যক সাংবাদিক হতে পারেন৷ কিন্তু এই পেশার শাশ্বত একটা চরিত্র আছে৷ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ, কর্পোরেট চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ তারপরও কিন্তু সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের উপর নির্ভর করতে চান৷ এটাই সাংবাদিকতার বড় শক্তি৷

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অবস্থা এখন কেমন?

এটা আসলে আপেক্ষিক৷ আপনার কাছে যেটা বস্তুনিষ্ঠ, সেটা আরেকজনের কাছে বস্তুনিষ্ঠ নাও হতে পারে৷ এটা হল দৃষ্টিকোণ৷ আপনি কিভাবে দেখেন৷ যেটা কর্পোরেট মিডিয়া তারা বস্তুনিষ্ঠতা একভাবে দেখবে, আবার যারা রাজনৈতিক মুখপাত্র তারা বস্তুনিষ্ঠতা আরেকভাবে দেখবে৷ আরেকটা হল প্রফেশনাল মিডিয়া৷ শাশ্বত যেটা সত্য তারা সেটাই লিখবে, তাদের কাছে এটা বস্তুনিষ্ঠতা৷ মিডিয়ার বিচারক কারা? দর্শক বা পাঠক৷ বস্তুনিষ্ঠতা না থাকলে আপনি কিছু চমক দিতে পারেন কিন্তু দিনশেষে টিকে থাকতে পারবেন না৷ 

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ কমে যাচ্ছে? এর কারণ কি সরকারের বিধি নিষেধ নাকি সেলফ সেন্সরশিপ?

সব মিলিয়েই কিন্তু৷ সরকারই একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি না৷ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও কিন্তু এখানে বিষয়৷ তবে আগের তুলনায় রাজনীতিবিদদের কাছে সাংবাদিকদের নিয়ে চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে৷ পাশাপাশি মিডিয়াতে যে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশ হচ্ছে সেটা ভালো টাকাও হতে পারে, কালো টাকাও হতে পারে৷ পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দাতারাও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে৷ এসবের ফলে কোন কোন সময় মিডিয়ার সাহসী ভূমিকায় টানাপোড়েন দেখা দেয়৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কী সাংবাদিকতার গতি কমিয়ে দিয়েছে? আমি মনে করি না৷ কারণ প্রযুক্তি যেমন আমাদের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, আবার অন্যদিকে প্রযুক্তি অনেক সময় ঝুঁকিও তৈরী করে৷ অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় দেখা যায় অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷ অনেক সময় তাদের উদ্দেশ্যমূলক এজেন্ডা থাকে, দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভূমিকা দেখা যায়৷ এর ফলে অনেক সময় সমাজে রাষ্ট্রে বা ব্যক্তিজীবনেও সমস্যার সৃষ্টি হয়৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ