করোনার মধ্যেই গাড়ি করে বেরিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন ডনাল্ড ট্রাম্প। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এখন অনেক সুস্থ।
বিজ্ঞাপন
নাটকীয়। প্রথমে সেনা হাসপাতালের প্রেসিডেনশিয়াল ঘর থেকে ভিডিও, তারপরেই গাড়ি চড়ে বেরিয়ে পড়া। রোববার করোনার মধ্যেই সমর্থকদের চমকে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সামান্য সময়ের জন্য গাড়ি চড়ে বেরিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে ভিডিও বার্তায় জানিয়ে দিলেন, তিনি এখন ভালো আছেন। সব ঠিক থাকলে দ্রুত হাসাপাতাল থেকে মুক্তিও পাবেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুরো দস্তুর নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি গিয়েছিলেন নিউ জার্সিতে। শুক্রবার সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিজেই অসুস্থতার কথা টুইটে জানান। জানিয়ে দেন, টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তিনি কোয়ারান্টিনে থাকবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য জানা যায়, ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই দিনই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
করোনায় কাবু সরকার প্রধানরা
বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তিই করোনার কাছে হেরে গেছেন৷ এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে৷ সবশেষ এই দলে যোগ দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
ছবি: Olivier Matthys/AP Photo/picture alliance
সোফি গ্রেগরি ট্রুডো
গত মার্চে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো৷ এরপর ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো নিজেও৷ তবে তিনি বা তিন সন্তানের কেউ করোনা সংক্রমিত হননি৷
ছবি: Reuters/P. Doyle
প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট
মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি৷ মার্চে তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/D. Van Tine
বরিস জনসন
শুরুতে করোনাকে পাত্তা না দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ প্রধান বিশ্ব নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এপ্রিলের শুরুতে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়৷
ছবি: Photoshot/picture-alliance
মিখাইল মিশোস্টেন
এপ্রিলের শেষে করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশোস্টেন৷ ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে৷ তার অবর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আন্দ্রেই বেলোসোভ৷
ছবি: Reuters/Sputnik/E. Shtukina
নুনো গোমেজ নাবিয়াম
এপ্রিলেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন গিনি-বিসাউ এর প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমেজ নাবিয়াম৷ তার মন্ত্রীসভার তিন সদস্যেরও কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল সেসময়৷
ছবি: DW/B. Darame
হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ
জুনে নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ৷ পরবর্তীতে করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়৷ করোনার টিকায় বিশ্বের সবার সমান অধিকার নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: AFP/O. Sierra
নিকোল পাশেনিয়ান
পুরো পরিবারসহ জুনে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশেনিয়ান৷ তবে আক্রান্তের খবর প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন বলে ফেসবুকে ঘোষণা দেন তিনি ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Druzhinin
জেইর বলসোনারো
শুরুর দিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো করোনা সংকটকে ‘উদ্ভট কল্পনা’ এবং সাধারণ ফ্লু হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ পরবর্তীতে দেশটি মারাত্মকভাবে করোনা আক্রান্ত হয়৷ জুলাইতে এসে বলসোনারো নিজেই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন৷
ছবি: Youtube/TV BrasilGov
আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো
করোনা প্রতিরোধে যেসব দেশের সরকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার একটি বেলারুশ৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো করোনা মহামারিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন৷ করোনা প্রতিরোধে ভদকা পানেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি৷ জুলাইর শেষ দিকে নিজে করোনা আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেন লুকাশেঙ্কো৷ জানান, কোভিড পজিটিভ হলেও তার তেমন কোন লক্ষণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/V. Listsyn
আলেখান্দো গিয়ামাত্তে
সেপ্টেম্বরে গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেখান্দো গিয়ামাত্তের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়৷ এরপর গোটা মন্ত্রীসভার সদস্যদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন তিনি৷ যার মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রীরও করোনা ধরা পড়ে৷
ছবি: Johan Ordonez/AFP
ডনাল্ড ট্রাম্প
দুই অক্টোবর নিজের ও ফাস্ট লেডি মেলানিয়ার করোনা পজেটিভের খবর দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে৷ শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের হুমকিকে খাটো করে দেখানোর জন্য সমালোচিত হয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Carlos Barria/Reuters
এমানুয়েল মাক্রোঁ
১৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ তার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ খবর নিশ্চিত করা হয়৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, মাক্রোঁ সাত দিনের আইসোলেশনে রয়েছেন৷ তার বেশ কিছু বিদেশ সফর ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে৷ লেবানন সফরও রয়েছে বাতিল হয়ে যাওয়া সফরের তালিকায়৷
ছবি: Olivier Matthys/AP Photo/picture alliance
12 ছবি1 | 12
ট্রাম্পের অসুস্থতা ঘিরে নানা গুজব রটতে শুরু করে। কোনো মহল থেকে প্রচার করা হয়, প্রেসিডেন্ট খুবই অসুস্থ। রোববার সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন ট্রাম্পের চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের জ্বর ছিল। শুক্রবার তাঁর অক্সিজেন স্যাচিউরেশন ৯৪ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছিল। সে কারণেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাতেই তাঁর অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়। ফুসফুসে যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য স্টেরয়েডও তাঁকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রেসিডেন্ট অনেকটাই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ট্রাম্পের আর জ্বর আসেনি। তিনি নিজেই হাঁটতে চাইছেন।
তবে রোববারের সব চেয়ে বড় চমক দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। প্রথমে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন তিনি। তাতে বলা হয়, শারীরিক ভাবে এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি। তারপরেই চমক দেওয়ার কথা জানান।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ট্রাম্প। সমর্থকদের দিকে হাত নাড়ান। তাঁর জন্য সেনা হাসপাতালের বাইরে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। ট্রাম্পকে দেখে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাম্প ফের হাসপাতালেই ফিরে যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে সোমবারও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে তাঁকে। আর ট্রাম্প বলেছেন, হাসপাতালে গিয়ে করোনার বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছেন তিনি। বই পড়ে যা শেখা সম্ভব নয়।