যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দেয়া অন্তত একটি ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে চান ব্লগার জান্নাতুল ফেরদৌস৷ তিনি লেখেছেন, ‘‘একবার, অন্তত একবার রাজাকারের ফাঁসি হয়েছে এই আনন্দে বিজয় মিছিল করতে চাই৷ অন্তত একটি রায় কার্যকর দেখতে চাই৷’’
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ৷ এই সময়ের মধ্যে তাই অন্তত একটি রায় কার্যকর দেখতে চান ব্লগার জান্নাতুল ফেরদৌস৷
আমার ব্লগ ডটকমে ফেরদৌস লিখেছেন, ‘‘অন্তত একটা রাজাকারের ফাঁসি এই সরকারের এই মেয়াদের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই৷ আওয়ামী লীগের উপর এখনও বিশ্বাস আছে, তারা যাতে নিজেরা এই বিশ্বাস নষ্ট করে না দেয়৷ শত শত নির্বাচনী প্রচারণা, সভা-সমাবেশের চেয়ে বেশি কার্যকর হবে একটা রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করা৷''
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
বলাবাহুল্য, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি অনেকের৷ এই দাবিকে কেন্দ্র করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগারদের আহ্বানে শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চ৷ ব্লগার সাকী শওকত সামহয়্যার ইন ব্লগে লিখেছেন লিলু ভাই নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে৷ একাত্তরে লিলু ভাইয়ের উপর হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান তিনি৷ শওকত লিখেছেন, ‘‘লিলু ভাইয়ের দু'চোখ উপড়ে ফেলে ছিল গণকবরের সাক্ষ্য দিবে বলে৷ লিলু ভাই নিজ হাতে লাশ টেনে গণকবর দিয়েছেন৷ পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকার মিলে তাকে এই কাজে বাধ্য করেছিল৷''
নিবন্ধের শেষের অংশ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘সেই লিলু ভাইয়ের অন্ধত্বের পিছনের মানুষগুলি, রাজাকার, আলবদরের এই খুনিগুলো, ওদের ফাঁসি চাই, আবারো ফাঁসি চাই৷''
আরো অনেকের মতো রায় কার্যকর হওয়ার আশায় অপেক্ষায় আছেন ফেসবুক ব্যবহারকারী আলমগীর হোসেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘শোক, আতঙ্ক আর ঘৃণার আগস্টে একটা ছোট্ট সুসংবাদও অনেক বড় মনে হচ্ছে! মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত রাজাকারদের ফাঁসির উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১২ জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ জল্লাদকে৷....মানে, রাজাকারদের ফাঁসি কার্যকর হবে প্রায় নিশ্চিত!''
উল্লেখ্য, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷