অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ?
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের ঝটিকা মিছিল বেড়েই চলেছে। দেশের বাইরে দলটির কিছু নেতা-কর্মীকে সরকার-সংশ্লিষ্টদের হেনস্তা করতে এবং তাদের গাড়িতে ডিম-হামলা চালাতেও দেখা গেছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে চট্টগ্রামে পুলিশ মাইকিং করে বাড়ি বা মেস বাড়িতে ভাড়া দেয়ার আগে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে কর্ণফুলি থানার পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-র বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ নিষিদ্ধ সংগঠন নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করছে। চট্টগ্রামেও করছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাসা বা মেস যাদের ভাড়া দেয়া হবে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ তাদের সব পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ভাড়া দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বান পুরো চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ নিষিদ্ধ বা জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ভাড়া না দেয়ার কথা আমরা বলিনি। আমরা বলেছি, পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে যেন ভাড়া না দেয়া হয়।”
“সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে বেশ কিছু ঝটিকা মিছিল বের করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। তাদের আমরা আইনের আওতায়আনার চেষ্টা করছি,” বলেন তিনি।
বেশি ঝটিকা মিছিল ঢাকায়
ঝটিকা মিছিল সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ঢাকায়। একদিনে তিনটি ঝটিকা মিছিলও হয়েছে। আর প্রতিটি ঝটিকা মিছিলের পরই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগহ তাদের অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ফেসবুক পেজে মিছিলের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও সেসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে তাদের ঝটিকা মিছিলের খবর বা ছবি প্রকাশ করা হয় না। তবে কিছু অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তাদের নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক পেজগুলোতে ওইসব মিছিলের ভিডিও দ্রুতই ‘আপ’ করা হয়।
আজও (বৃহস্পতিবার) ঢাকার হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলের পর ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তার আগে মঙ্গলবার শ্যামলি এলাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করলেমোটর সাইকেলে আরেকটি দল এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ করা হয় বলেও অভিযোগ৷ পুলিশ ওই ঘটনায় মোট পাঁচ জনকে আটক করে।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “তারা মিছিলের প্রস্তুতি নিতে গেলে আমরা প্রথমে চারজনকে আটক করি। তাদের মধ্যে একজন ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এরপর মোটর সাইকেলে আরেকটি গ্রুপ এসে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করলে সেখান থেকে আরো একজনকে আটক করা হয়। কাউকে তারা ছাড়িয়ে নিতে পারেনি।”
গত ৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ে একযোগে তিন জায়গায় ঝটিকা মিছিল কের করে। তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো মোড় ও জিএমজি মোড় এবং ধানমন্ডির ৪/এ সড়ক - এই তিন এলাকায় দুপুরের পর মিছিল করে তারা।
ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল। ঢাকার বাইরেও হচ্ছে। শুধু দিনে নয়, রাতেও হচ্ছে এমন মিছিল। গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশা ডিবিএল ভবনের সামনে ঝটিকা মিছিল করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগ দলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ সেখান থেকে পাঁচজনকে আটক করে।
এর তিন দিন আগে, ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাংলামোটর ও গুলশানে ঝটিকা মিছিল করার সময় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে ৯ সেপ্টেম্বর মিরপুর দারুসসালাম এলাকায় ঝটিকা মিছিলের পর আওয়ামী লীগের ১৮ জনকে আটক করা হয়। ঢাকার প্রতিটি এলাকায়ই ইতিমধ্যে কমপক্ষে একবার করে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও তাদের ঝটিকা মিছিল হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-র উপ-কমিশনার মো. তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “গত ১৫ দিনে ঝটিকা মিছিল করার অপরাধে আমরা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৩০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে তারা কতগুলো ঝটিকা মিছিল করেছে সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই।”
ঝটিকা মিছিল থেকে শ্যামলীতে পুলিশের ওপর হামলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন,“ তারা হামলা করেছিল, কিন্তু কাউকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি।”
তবে ঢাকা শহরে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৮দিনে ৪২টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে বলে দাবি করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠনটির আত্মগোপনে থাকা এক নেতা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “গত মাসে এত হয়নি। চলতি মাস থেকে আমরা ঝটিকা মিছিল বাড়িয়ে দিয়েছি। অক্টোবরে আরো বাড়বে।” তবে সারা দেশে চলতি মাসে কতগুলো ঝটিকা মিছিল হয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এমন ঝটিকা মিছিলের জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে। কাজের সুবিধার জন্য নিজস্ব যোগাযোগ চ্যানেলও গড়ে তুলেছেন তারা। প্রতিটি মিছিলের একটি অগ্রবর্তী দল থাকে। তারা আগে রেকি করে পরিস্থিতি জানানোর পর মিছির বের করা হয়। ইদানীং মিছিলে মোটর সাইকেল আরোহীদের একটি দলও থাকে। খুব অল্প সময়ের জন্য মিছিল করে তা মোবাইল ফোনে ধারণ করে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন তারা। মিছিল শেষ করে খুব দ্রুত সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যান তারা। যাবার সময় হাতের ব্যানার ফেলে যান তারা। জানা গেছে, ফেলে যাওয়া ব্যানারগুলো তারা নিজেরাই তৈরি করার চেষ্টা করেন।
সরকার যা যা করছে
ঢাকার কয়েকটি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন সব সময় এই ঝটিকা মিছিল নিয়ে টেনশনে থাকেন। সন্দেহজনক মনে হলে নিয়মিত বাসা-বাড়ি ও মেসবাড়িতে অভিযানও চালাচ্ছেন তারা। একাধিক ওসি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের এক এলাকার নেতা-কর্মীরা অবস্থান পরিবর্তন করে আরেক এলাকায় চলে গেছে। বাইারে থেকে আসা সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন বলেও মনে করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তারা।
উপ পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, “ আসলে তারা এখন সংখ্যায় ঠিক কতজন আছে সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। তাদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষেরও সহায়তা নিচ্ছি।”
“আর তাদের কারা অর্থ সহায়তা করছে, ইন্ধন দিচ্ছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি, ’’ বলেন তিনি।
আর পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, “সরা দেশেই আমরা এই ঝটিকা মিছিল দেখতে পাচ্ছি। তবে গত এক মাসে কত ঝটিকা মিছিল বের হয়েছে সারা দেশে, কতজন আটক হয়েছে- তার সুনির্দিষ্ট হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে আটক হচ্ছে।”
“আমরা আসলে তিন পর্যায়ে আটক করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্ততে আগাম, মিছিল চলাকালে এবং মিছিলের পরে। এই ঝটিকা মিছিল বেআইনি। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। আর আমরা তাদের অর্থ ও আশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করে আইানের আওতায় আনছি,” বলেন তিনি।
গত শনিবার পুলিশ ঢাকায় এনায়েত করিম চৌধুরী নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে৷ দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি সরকার উৎখাত ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঢাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে যাদের আটক করা হয়, তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কারো কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনেও মামলা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মর্তা তালেবুর রহমান।
আওয়ামী লীগের এসব ঝটিকা মিছিল নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। গত ৭ সেপ্টেম্বর যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ উপদেষ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।
এদিকে পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর কোনো থানা এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল হলে জবাবদিহি করতে হবে সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-সহ পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের। পরিদর্শকদের থানা থেকে প্রত্যাহারও করা হবে বলে জানান তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-র ৫০ থানার ওসি ও পরিদর্শকদের ইতিমধ্যে তা জানানো হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত রবিবার রাত ৯টার দিকে বেতারযন্ত্রে ৫০ থানার ওসি ও পরিদর্শকদের উদ্দেশে এই বার্তা দেন। বার্তায় বলা হয়, যেসব থানা এলাকায় ঝটিকা মিছিল হবে, সেই থানার ওসিসহ সবাইকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা ও শিথিলতার কারণে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হবে তাদের।
থামানো যাবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের স্পষ্ট কথা, “এই ঝটিকা মিছিল থামানো যাবে না। এটা সামনে আরো বাড়তে পারে। ” ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, “এখানে তো একটা গ্রে এরিয়া আছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দল তো নিষিদ্ধ করা হয়নি। আর তাদের তো লাখ লাখ নেতা-কর্মী আছে। তারা তো দেশ ছেড়ে যায়নি। দেশের বাইরেও আছে। দেশে-বিদেশে সবখানেই তারা সক্রিয় হবে।”
তার কথা, “আসলে পুলিশ কয়জনকে আটক করবে? তারা তো আটক হতে পারে জেনেই মিছিল করছে। রাজনৈতিক দলগুলোও ভোটের হিসাব করে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে না। তাদের ভোট বিএনপি চায়, জামায়াতও চায়। আর তাদের নিষিদ্ধ করার পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তো দ্বিমত আছে।”
“দলটির তো শক্তি আছে। অর্থ আছে। বিদেশেও তাদের শক্তি আছে। তাই এভাবে নয়, যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের ব্যবস্থা করুন। সবাইকে তো নিষিদ্ধ করা যাবে না। দেশে রাজনৈতিক সংকট যত বাড়বে, আওয়ামী লীগ আরো সক্রিয় হবে। ঠেকানো যাবে না,” বলেন তিনি।
সাংবাদিক মাসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পুলিশের চেয়ে ঝটিকা মিছিল যারা করেন, তাদের সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে তো পুলিশ পারবে না। ঝটিকা মিছিলকারীরা তো সংখ্যায় অনেক বেশি। তাদের মিছিল যদি বাড়তে থাকে, তাহলে মনে করবেন, জনগণের সাথে তাদের একটা মনস্তাত্বিক সংযোগ আছে।”
তার কথা, “নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ওই দলটিকে শেষ করা যায় না। দেশের জনগণ যদি ওই দলকে প্রত্যাখান না করে, নিশ্চিহ্ন না করে, তাহলে নিশ্চিহ্ন হয় না। দলটি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। ইতিহাসে তার প্রমাণ আছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌহিদুল হক মনে করেন, “আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনৈক্য তৈরি হয়েছে, তার সুযোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই অনৈক্য যদি আরো বাড়ে, তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
তার মতে, “যেভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা-ও সঠিক প্রক্রিয়া নয়। আসলে বিচারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”
বিদেশে হামলা, বিক্ষোভ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিদেশ সফরে গিয়ে একাধিকবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন।২০২৪ সালের নভেম্বরে সুইজারল্যান্ডে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগ কর্মীদের হেনস্তার শিকার হন। আইএলওর একটি বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা হয়। তিনি লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িতে বের হওয়ার সময় ওই হামলার চেষ্টা হয়। তবে লন্ডন দূতাবাসের দাবি, তখন গাড়িতে উপদেষ্টা মাহফুজ ছিলেন না। এর আগেও একবার বিদেশে তিনি হেনস্তার শিকার হন। গত ২৫ আগস্ট নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তখনও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসের সামনে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে হেনস্তার চেষ্টা করে। এইসব ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে মামলা করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফরে ‘নতুনত্ব’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। এবার তার সফরসঙ্গী হচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বুধবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চান, সম্প্রতি বিদেশে উপদেষ্টারা বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন, জাতি সংঘের সামনে সেরকম হলে কী করণীয়? জবাবে তিনি বলেন, “ বিক্ষোভ হবে, এটা কিন্তু আমি ধরে নিচ্ছি। কারণ, এটা ঠেকানোর উপায় আমাদেরও নেই, তাদেরও নেই।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘সম্প্রতি লন্ডনে যে ঘটনা ঘটেছিল, সেটার বিষয়ে কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া ছিল এবং খবর যা এসেছে, সবকিছু কিন্তু পুরোপুরি সত্য না। যেমন - যে গাড়িটা আক্রান্ত হয়েছে, সেই গাড়িতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছিলেন না। তিনি অন্য একটা গাড়িতে ছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমাদের বুঝতে হবে, পশ্চিমের দেশগুলোতে বাধা দেয়া, স্লোগান দেয়া, রাস্তায় মিছিল করা, প্রতিবাদ করার রাস্তা আটকানোর কোনো উপায় আমাদের কেন কারোই নেই। সেসব দেশের সরকার এটা করতে দিতে বাধ্য। শুধু ডেলিগেশন দলের নিরাপত্তা যেন সঠিক থাকে। আমি আসলে তেমন আশঙ্কা করছি না। কারণ, নিউইয়র্ক পুলিশ এই ব্যাপারে বিস্তর অভিজ্ঞ। । আমি আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর কিছু হবে না।’’
সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেন, “ আমার মনে হয়, এবার প্রধানত দুইটি কারণে তিন দলের নেতাদের প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরের সঙ্গী করেছেন। একটা হতে পারে, প্রফেসর ইউনূস সারা দুনিয়াকে দেখাবেন যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আমার সঙ্গে আছে। আরেকটি হলো, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যদি বিক্ষোভ করে, তাহলে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সাপের্টাররাও তাদের বিরুদ্ধে ওখানে দাঁড়িয়ে যাবে তাকে প্রটেক্ট করার জন্য। তবে আমি মনে করি, এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে।”
তার কথা, “ আমি নিজে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ বিদেশে থাকার বিরোধী। আইনেও এটা নেই। তারপরও আছে। আওয়ামী লীগের আমলে হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি তিনি যখন বিদেশে গিয়েছেন সেখানে বিক্ষোখ করেছে। এবারও হবে। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে। আমি পছন্দ করি আর না করি, এটা হবে।”
সাবেক কূটনীতিক এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের ধারণাও একই রকম। তিনি বলেন, “বিদেশে গিয়ে উপদেষ্টারা ঝামেলায় পড়ছেন। এবার যদি নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ কোনো ঝামেলা করে, সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বিএনপিসহ তিন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি সেরকম কিছু হয়, তাহলে ওই তিন দলের নেতা-কর্মীরাও সেখানে তাদের সাপোর্ট দিতে পারবে। আরেকটি বিষয় হলো, তিনি দেখাতে চাইছেন যে, তাকে নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্য আছে। আর সরকারি খরচে যাচ্ছেন। তিন দলের নেতাদের সাথে নিয়ে খুশি রাখছেন।”
তার কথা, “ এরইমধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সংবাদ মাধ্যমকে যা বলেছেন তাতে আমার মনে হচ্ছে এরই মধ্যে নিউইয়র্ক পুলিশেরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে।”