গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় আছে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়টি। সংশয় তৈরি হয়েছে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এই সরকারের সব সংস্কারের বৈধতা দেবে কিনা তা নিয়ে৷ তাই উঠে এসেছে ‘দায়মুক্তি'র প্রসঙ্গ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের সমালোচনা করেছে জামায়াত এবং এনসিপি। তারা মৌলিক সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদ নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছে। আর সংস্কার নিয়েও দলগুলোর মধ্যে আছে মতানৈক্য।ছবি: Bangladesh CA Wing
বিজ্ঞাপন
সরকার আদৌ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবে, নাকি বিএনপির জন্য ‘বিস্কুট দৌড়-'এর আয়োজন করবে - উঠছে এমন প্রশ্নও।
বুধবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "আগের তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রত্যেকের একটা নিষ্ক্রমণ পথ (এক্সিট পলিসি) নির্ধারিত ছিল বলে তাদের কাজকর্মের বৈধতার ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। কিন্তু আগামী সরকার এই সরকারের কাজগুলোর সম্পূর্ণভাবে বৈধতা দেবে কিনা, এই বিষয়ে প্রশ্ন এখনো সামনে রয়ে গেছে। কী কী করে যাচ্ছেন আর আগামী সরকারের জন্য কী কী রেখে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে স্বচ্ছ বক্তব্য দিতে হবে।'' তিনি আরো বলেন, "এই সরকার কী পদ্ধতিতে যাবে, সেটা এখন স্পষ্ট করা জরুরি। এক্সিট পলিসি চিন্তা করার সময় এসেছে। যেটুকু সময় আছে, এর ভেতর দিয়ে এই সরকার কী অর্জন করে বের হয়ে যেতে চায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে সেটাও বলার সময় এসেছে।''
দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘আমার পিসিমা একটা কথা শিখিয়েছেন, যতখানি খেতে পারবে, অতখানি কামড় দিয়ো। যতটুকু চাবাতে পারবে না, অত কিছু মুখে নিয়ো না।''
ডেমোক্র্যাসি ডায়াস নামের একটি সংগঠনের আয়োজন করা ওই সেমিনারে রাজনৈতিক নেতারাও অংশ নেন। অংশ নেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা সরকারের দায়মুক্তির বিষয়টিও সামনে আনেন। ডেমোক্র্যাসি ডায়াস-এর চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন সেমিনারে বলেন, "২৬টি দেশে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ মাসের বেশি যেসব অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হয়, তাদের সফলতা তুলনামূলকভাবে কম।” আজ (বৃহস্পতিবার) আবদুল্লাহ আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, " আসলে অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের যে অস্বচ্ছ কথা, তাই সংকট তৈরি করেছে। আসলে বিশ্বে যেসব অন্তর্বর্তী সরকার সফল হয়েছে, তারা নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও সরকারের কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
সিফাত নাহার, চিকিৎসক
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধের অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব, লোকবলের অভাবসহ আরো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এসব কারণে আমরা প্রায়ই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই৷ মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে, এই সরকার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে৷
ছবি: DW
দীপংকর সরকার দীপু, ভিজুয়াল আর্টিস্ট
বেশিরভাগ মানুষের আস্থা অর্জন, জানমালের নিরাপত্তা বিধান, দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা- ইত্যাদি সরকারের চ্যালেঞ্জ৷ আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেন, দুর্নীতি নির্মূল করতে পারেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারেন৷
ছবি: DW
সাদিয়া মরিয়ম রূপা, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক
প্রত্যাশা: পাহাড় থেকে সেনাশাসন হটাতে হবে, পাহাড় দখলমুক্ত করতে হবে৷ ক্ষমতাধর ও আইনপ্রণেতাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে৷ বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না৷ বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে৷
ছবি: DW
আলী আরাফাত জাকারিয়া, লেখক
প্রত্যাশা: রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করা, পুলিশকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, দুর্নীতি দমন ও ছাত্র হত্যার বিচার করা, আর্থিকখাতে দুর্নীতি করা ব্যক্তিদের বিচার এবং সর্বোপরি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা৷ চ্যালেঞ্জ: অর্থনীতি ঠিক করা, সতর্কতার সাথে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পুলিশ রিফর্ম করা৷
ছবি: DW
ফারহানা শারমিন শুচি, উদ্যোক্তা
স্বচ্ছ সরকার চাই৷ রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছিল, সেগুলো নির্মূল করতে হবে৷ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়, অবিচার দেখেছি৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিয়োগ দিতে হবে৷ দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং দরকার৷
ছবি: DW
আমিরুল, প্রকৌশলী
প্রত্যাশা: কথা বলা ও রাস্তায় নামার অধিকার ফিরিয়ে আনা৷ এখন যে পরিস্থিতি সেটা আগে মোকাবেলা করুক, সব স্বাভাবিক করে আনুক এটাই আশা করি৷ প্রাইমারি ফোকাস হওয়া উচিত রাষ্ট্রকে আগে গড়ে তোলা৷ নৈরাজ্য হবার পরে যে অবস্থা বা গত সরকার ১৫ বছর যেভাবে শাসন করেছে এটা থেকে স্বাভাবিক করার জন্য দেশকে একটা শক্তিশালী জায়গায় নেওয়া উচিত৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং সকল দিকই যেন ঠিকঠাক করতে পারে৷
ছবি: DW
শিমু আক্তার, শিক্ষার্থী ও ভলিবল খেলোয়াড়
আশা করবো বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার দাবির কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করবে৷ তবে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে৷
ছবি: DW
আবুল বাশার, শরবত বিক্রেতা
আমি চাই এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে যেন গরিব, ধনী সবাই শান্তিতে বাস করতে পারেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার প্রতি লোভ এই সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
রুপসী চাকমা, শিক্ষার্থী
পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুদিন ধরে ‘সেনাশাসন’ চলছে৷ যত ধরনের বৈষম্য তৈরি করা দরকার, সেটা তারা করেছে৷ আমরা সেনাশাসন প্রত্যাহার চাই৷ কল্পনা চাকমার গুমের যে ঘটনা ঘটেছিল তার তদন্ত ও সন্ধান চাই৷ দীর্ঘদিন ধরে যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ছিল সেটা নির্মূল করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে৷ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সংস্কার করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
জয়নাল, পান বিক্রেতা
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, দ্রব্যমূল্য যেন কম থাকে, সাধারণ মানুষ যেন কম দামে খাবার কিনতে পারে৷ তবে মনে হয় দ্রব্যের দাম কমানো অনেক কঠিন হবে৷ অবশ্য সরকার যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো পারবে৷
ছবি: DW
ইসরাত জাহান ইমু, শিক্ষার্থী
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে হয়ে আসা ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবি যেন এই সরকার পূরণ করে৷ এছাড়া অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে৷ কাঠামোগত দুর্নীতি দূর করতে হবে৷ নতুন সংবিধান তৈরি করে প্রশাসনিক কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন পরবর্তী কোনো সরকার আবার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে৷
ছবি: DW
11 ছবি1 | 11
এক্সিট প্ল্যান কেমন হতে পারে
সেমিনারে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নির্বাচনের জন্য প্রেসার তৈরি হচ্ছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের এখন এক্সিট প্ল্যান দরকার। একটা হতে পারে, নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তাদের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে চলে যাওয়া। তবে সেটা না-ও হতে পারে। ড. ইউনূসের অধীনে নির্বাচনের সম্ভাবনা বেশি। সেখানেও এক্সিট প্ল্যান লাগবে। লাগবে দায়মুক্তি। কারণ, এই সরকারের অনেক কাজের বৈধতা পরবর্তী সরকার না-ও দিতে পারে। ফলে তার জন্য ভালো হবে তার সরকারে এনসিপিপন্থি যেসব উপদেষ্টা আছে বা বিতর্কিত যেসব উপদেষ্টা আছে, তাদের পদত্যাগ করিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করে নির্বাচন করা। সেটা হলে তার জন্য এক্সিট সহজ হবে।”
"তবে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের খেলা আছে। সেই খেলার মাধ্যমে হয়তো সরকার চাইবে ফেব্রুয়ারি মধ্যে নির্বাচন না দিতে। তবে যেভাবে চাপ বাড়ছে, তাতে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে বলে আমার মনে হচ্ছে।”
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে?
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের "অল্প সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের'” বয়ানে পরিবর্তন হয় বিনএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার লন্ডন বৈঠকের পর। ১৩ জুন ওই বেঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় সংস্কার শেষ হওয়া সাপেক্ষে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়। কিন্তু এরপর প্রধান উপদেষ্টা নিজে থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে আর কোনো কথা বলেননি। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নির্বাচন কমিশনকে ভোটের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার কথা বলা হয়। নির্বাচন কমিশনও সীমানা নির্ধারণসহ নির্বাচনি প্রস্তুতির কথা জানাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন ঠিক কবে বা নির্বাচনের তফসিল ঠিক কবে হবে, তা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট কথা নেই।গত ২৬ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠকের পর জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)-এর চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন, তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় হচ্ছে এটা। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন- এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।'' তারপর পাঁচদিন হয়ে গেলেও প্রধান উপদেষ্টার সেই ঘোষণা আসেনি।
‘সরকার এরইমধ্যে এমন কিছু কাজ করেছে যার জন্য দায় মুক্তির প্রয়োজন পড়বে’: জাহেদ উর রহমান
This browser does not support the audio element.
আর মোস্তফা জামাল হায়দারের ওই কথার পরদিন, ২৭ জুলাই জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, "কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কথায় আমরা বলতে পারি না দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে। সরকার একা তারিখ ঘোষণা করতে পারে না। সরকারের পরামর্শে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।” জামায়াত ১৯ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করে যে সাত দফা দাবি দিয়েছে তাহলো : ১. ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার। ২. রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার। ৩. ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন। ৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন। ৫. জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। ৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ। ৭. রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' নিশ্চিতকরণ। ওই সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এনসিপি ও ইমলামী আন্দোলন বাংলাদেশহ আরো কিছু রাজনৈতিক দল ওই সমাবেশে অংশ নেয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, "আমরাসহ আরো অনেকেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই। বিএনপি এর বিরুদ্ধে। আমরা মৌলিক সংস্কার, বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। সেগুলো না করে যেনতেন নির্বাচনের কোনো মানে হয় না। ”
সংস্কার কমিশন ও সংস্কারের প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশের সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ছবিঘরে থাকছে সেসব সংস্কার প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ।
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশন সংস্কার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫০টির কাছাকাছি সুপারিশ করেছে কমিশন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চ কক্ষের জন্য নির্বাচন, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া ও জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট হলে পুনরায় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সংবিধান সংস্কার
সংবিধান সংস্কার কমিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করা হয়। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদের আসন বাড়ানো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Ponir Hossain
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয়, বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন, হাই কোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, জেলা ও উপজেলা আদালত স্থাপনসহ নানা সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পুলিশ সংস্কার কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Nazmul Hasan/DW
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে ৪৭টির মতো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
জনপ্রশাসন সংস্কার
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগকে আলাদা করা, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ছবি: bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের কথা বলেছে বলে তো আমরা শুনিনি। তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর আমরা শুনেছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করা সম্ভব হলে আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে। এটা তো শর্তসাপেক্ষ।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের সমালোচনা করেছে জামায়াত এবং এনসিপি। তারা মৌলিক সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদ নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছে। আর সংস্কার নিয়েও দলগুলোর মধ্যে আছে মতানৈক্য। জামায়াত ও এনসিপি জুলাই ঘোষণাকে আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা চাইছে। কিন্তু বিএনপি তাদের সঙ্গে একমত না। বৃহস্পতিবার জুলাই সনদের জন্য শাহবাগে অবস্থান নেন ‘জুলাই যোদ্ধারা'। জুলাই সনদকে স্থায়ী বিধানে যুক্ত এবং তা বাস্তবায়নের দাবিকে এই অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই যেদ্ধা সংসদ‘। দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগেই অবস্থান করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে এনসিপি আগামী ৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ২৭ জুলাই বলেছেন, "সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।এর আগে লন্ডনে বসে যখন একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।” তিনি আরো বলেন, " নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে।” এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন," আসলে জুলাই বিপ্লব শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি। মৌলিক সংস্কার, বিচার, জুলাই সনদ - এগুলো আগে করতে হবে। এগুলো ছাড়া নির্বাচন কোনো ভালো ফল দেবে না।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," নির্বাচন তো আমরা চাই। আর নির্বাচনের তো কোনো তারিখ পড়েনি। তাহলে পেছানোর প্রশ্ন কেন আসছে?”
বিজ্ঞাপন
এক্সিট প্ল্যান ও বিস্কুট দৌড়
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, "সরকার বিএনপির সঙ্গে বা যারা নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে এক ধরনের বিস্কুট দৌঁড় খেলার চেষ্টা করছে। একবার নির্বাচনের কথা বলছে । আবার চুপ থাকছে। ”
তার কথা, "তারপরও যদি সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করে, তাহলে আর ছয় মাস আছে। ফলে তার এখনই এক্সিট প্ল্যান দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা উচিত। আর তার দায়মুক্তি লাগবে। কারণ, সে এরইমধ্যে এমন কিছু কাজ করেছে, যার জন্য দায়মুক্তির প্রয়োজন পড়বে। সংবিধানও লংঘন করেছে। যেমন, সংসদ ভাঙার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সরকার তা করেনি। তার মেয়াদ তো সাংবিধানিক না। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর ক্ষমতা ও সুবিধা নিচ্ছে। তারা কোন আইনে নিচ্ছে? এগুলো নিয়ে তো পরে প্রশ্ন উঠবে। ”
তার কথা, "এই সরকার কিন্তু তাদের দায় মুক্তি বা বৈধতা নিয়ে একটা অধ্যাদেশ আগেই জারি করতে চেয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেই অধ্যাদেশে সই না করায় সেটা আর হয়নি।”
"আমার মনে হয়, এখন সরকারের মধ্যে একটা সরকার আছে। তারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। সরকারের বাইরেও কিছু রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থে নির্বাচন পেছাতে চায়। ফলে ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে বিএনপির জন্য বিস্কুট দৌঁড়ের খেলা থাকতেও পারে।”
‘৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ সই হতে পারে’: সাইফুল হক
This browser does not support the audio element.
আর সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন," সরকার যে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন দেবে, এটা কিন্তু বিএনপিকে এখনো স্পষ্ট করে বলেনি। বিএনপিকে আশ্বস্ত করার জন্য লন্ডন বৈঠকে শর্ত সাপেক্ষে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয়, সরকার বিএনপিকে টেনশনে রাখতে চায়। তারা বিএনপিকে কিছু বলে, আবার চুপ থাকে। বিএপিকে দাবা খেলার মতো ওয়েটিং মুভ-এর চাল দেয়। কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখে। আবার কিছু লোক বলে, সরকার চায় বিএনপি একটি ভুল করুক। তারা তার সুবিধা নেবে। আমার মনে হয় এটা সরকারের বিএনপির সঙ্গে একটা খেলা। ”
"আর বিএনপিও মনে করছে তারা নির্বাচনের জন্য চরম কিছু করলে হয়তো তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে। সাধারণ মানুষ মনে করবে বিএনপি ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে। সেই সুযোগ নিচ্ছে সরকারের ভিতরের একটি অংশ এবং তাদের বাইরের সহযোগী রাজনৈতিক শক্তিগুলো।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিস্কুট দৌড়ের কথা শুনে হেসে বলেন, "রাজনীতি কোনো খেলা নয়। কারো ভিতরে ওই ইচ্ছা থাকতে পারে। তবে বিএনপি দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা চায়। কোনো অস্থিরতা চায় না। ফলে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে তার অবস্থান প্রকাশ করছে। প্রধান উপদেষ্টার কথায় ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে আস্থা রাখছে। তবে সেটা না হলে বিএনপি দেশের মানুষের স্বার্থে যা যা করার সব কিছু করবে।”
বিএনপির চার দশক
৪৬ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলার কারণে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
তার কথা, "একটি শক্তি, যারা সরকারের ভিতরে আছে , বাইরেও আছে, তারা নানা খেলা খেলছে। কিন্তু সরকারের এখন এক্সিট প্ল্যান ঘোঘণার সময় এসেছে।” বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, " আজ (বৃহস্পতিবার) ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষ হবে। সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও বিএনপি স্ট্রং নোট অব ডিসেন্ট দিয়ছে। ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ সই হতে পারে। সংবিধান সংস্কারের ব্যাপারে ২০টি পয়েন্টের মধ্যে ১৪-১৫টি পয়েন্টে ঐকমত্য হয়েছে। এরপর তো নির্বাচন ছাড়া কোনা কাজ নাই এই সরকারের। বিচার তো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তারপরও নির্বাচনের বিরুদ্ধে ভিতরে বাইরে নানা উসকানি আছে।”
তার কথা," সরকারের এখন পুরোমাত্রায় নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। না হলে সংকাটময় পরিস্থিতি হবে। আর এই সরকারের এক্সিট প্ল্যানও ঘোষনা করা দরকার। দায়মুক্তির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে।”
সরকার যা বলছে
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংস্কার ও সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, "কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। সবাই ভোট দিতে পারবে ”
আর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন,"প্রধান উপদেষ্টা আগামী নির্বাচনের বিষয়ে যে সময়ে বলেছেন, তার থেকে একদিনও দেরি হবে না৷ আগামী পাঁচ-ছয় দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী পাঁচ-ছয় দিনে বোঝা যাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি।” বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।