1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

২৩ জানুয়ারি ২০২৫

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারেরর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তথ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সংগঠক এ বক্তব্যের বিরোধিতায় সোচ্চার৷ তবে বিএনপির অভিজ্ঞ নেতার পর্যবেক্ষণে ভুল দেখছেন না অনেকেই৷

Bangladesch | Ankunft Muhammad Yunus in Dhaka
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিএনপি মহাসচিব  ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, "কিছু বিষয়ে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।”

আজ (বৃহস্পতিবার) এ কথা বলেছেন তিনি৷ এর আগে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "অর্ন্তবর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে,  তাহলে নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আজকের বক্তব্যের বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম৷ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।”

মির্জা ফখরুল মূলত তার দুই দিন আগের সাক্ষাৎকারের বক্তব্যেরই ব্যাখ্যা দিয়েছেন  বৃহস্পতিবার। শহীদ আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে শহীদ আসাদ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, "আমি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। আমি এই কথাটা বলেছি, কারণ, আমরা দেখছি, কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।”

তিনি আরো বলেন, "এখন যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, সে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবেই একটি ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেখানে আমরা খুব বেশি নিশ্চিত হতে পারছি না যে, প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।”

তার কথা, "প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি আছে, সে কর্মসূচিগুলোতে সবাই একটা জায়গায় একমত- একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন শুধু একটি দলকে ক্ষমতায় পাঠানোর জন্য নয়, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটি পথ সৃষ্টি করা।”

তবে সাক্ষাৎকারে সে বিষয়েও সংশয় উঠে এসেছিল তার একটি কথায়৷ সেখানে তিনি বলেছেন, "জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।”

এটা স্পষ্ট যে, এই সরকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না: আসাদুজ্জামান রিপন

This browser does not support the audio element.

বিরুদ্ধমত

বৃহস্পতিবার তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, " বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১-র বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্র্র নীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।”

তার মতে, "ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১-র সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে।বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু-র আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।”

নাহিদ ইসলাম মনে করেন, ‘‘এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না।'' ‘‘আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র-” ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য সম্পর্কে এমন মন্তব্যও করেছেন নাহিদ ইসলাম।

সুদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, "রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই না যে, গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্খাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবো।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই একটি সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদও মনে করেন, "অভ্যুত্থান যে কারণে হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিএনপি এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের মাথায় এখন ক্ষমতায় যাওয়া। সেই কারণেই এখন তারা এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”

তার দাবি, ‘‘যে তিনজন ছাত্র এখন উপদেষ্টা পরিষদে আছে, তারা এখন আর আমাদের সঙ্গে নেই। তারা সরকারে আছেন। তারা কোনো দল গঠনে সহায়তা করছেন না। আর আমরা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে কিছু করছি না৷”

আব্দুল হান্নান মাসুদ মনে করেন," উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তাদের মধ্যে বিএনপির প্রস্তাবিত উপদেষ্টারাও আছেন। এই সরকার এখন বিএনপির কথাই বেশি শুনছে। তাদের বিরোধিতার কারণে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করা যায়নি।”

অধুনা গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক আরো বলেন, "আমরা রাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে কোনো দল গঠন করছি না। কিন্তু বিএনপি যখন গঠিত হয়েছে, তখন রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করেই দলটি গঠন করা হয়েছে।”

আরেক সংগঠক মুশফিক মনে করেন, "এই সরকারের লেজিটেমেসিই হলো ছাত্ররা। এই সরকারে যদি ছাত্ররা না থাকে, তাহলে এই সরকার তার বৈধতা হারাবে।” তার প্রশ্ন," এখনই এই সরকারের নিরপেক্ষতা বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রশ্ন কেন?'' তিনি বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক অনেক সংস্কার হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এমন হয় যে, তারা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারবে, তাহলে তো আর সমস্যা নাই।”

এদিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৃহস্পতিবার বিকালে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়ে করবে।”

তিনি বলেন, "সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে আমরাও।একই সাথে রাজনৈতিক দলেরও সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত।”

অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিএনপি এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে: আব্দুল হান্নান মাসুদ

This browser does not support the audio element.

বিএনপি অন্য রাজনৈতিক দল যা মনে করে

নাহিদ ইসলাম বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে এক অর্থে ‘বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র' মনে করলেও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, "এটা স্পষ্ট যে, এই সরকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না। তাদের সরকারে তিনজন সমন্বয়ক বা ছাত্র আছেন। সরকারের কেউ কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য কাজ করছেন। যে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। তবে সেটা সরকারের থেকে নয়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নয়। আর সরকারের কেউ কেউ সক্রিয় আছেন সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণ করে ওই রাজনৈতিক দল গঠনে সময় দিতে।”

উল্লেখ্য, আসাদুজ্জামান রিপন যে তিনজন সমন্বয়কের কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তাদের অন্যতম৷

আসাদুজ্জামান রিপনও মনে করেন, "ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের চাওয়া হলো, একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন। সেই চাওয়াকে পুরণ করতে এই সরকারের কাজ আসলেই দিন দিন প্রশ্নের মুখে পড়ছে।''

তিনি জানান, ‘‘এই প্রশ্ন যদি জনগণের মধ্যে আরো আসে, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলবো।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের বক্তব্যেও উঠে এসেছে একই মত। তার মতে, "কোনো কোনো উপদেষ্টার কথা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজই বলে দেয়, এই সরকার নিরপেক্ষতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা কেউ কেউ ক্ষমতায় থেকে নতুন দল গঠনের কাজ করছে। তারা যদি উপদেষ্টা পরিষদে থাকে, তাহলে তো এই সরকারের নিরপেক্ষতা থাকবে না। আমরা তো নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার চাইবো- যাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকেব না।”

অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে রুহিন হোসেন প্রিন্স আরো বলেন, " তারা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা না করেইতাদের মতো কাজ করছে। সংস্কারের কথা বলতে চাইছে। তারা  প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ঢুকিয়েছে।'' তারও স্পষ্ট অভিমত, ‘‘আসলে ঐক্যমত ছাড়া কিছু হবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের যে বৈশিষ্ট্য তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) হারিয়েছে।”

বিএনপি নির্বাচনের সময় আরেকটি নিরপেক্ষ সরকার দাবি করতেই পারে’

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, "সমন্বয়করা কেউ কেউ মুখে মুখে বলছেন ‘আমরা রাজনৈতিক দল করবো না, তবে পলিটিক্যাল শক্তি হিসাবে থাকবো।' তারা দুইটি প্ল্যাটফর্ম করে আসলে রাজনীতিই করছে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সংবর্ধনা নিচ্ছে। তারা কিংস পার্টি গঠন করছে। আর উপদেষ্টা পরিষদে যে তিন জন আছেন, তারা তাদের রাজনীতির কাজে সহায়তা করছেন। তারা এটা করলে পদত্যাগ করে করা উচিত।”

‘‘আর সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আছে, সেটা তো এই অন্তর্বর্তী সরকার নয়। সেটা তো আলাদা।সেটা তিন মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন। বিএনপি তাই নির্বাচনের সময় আরেকটি নিরপেক্ষ সরকার দাবি করতেই পারে,” বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও মনে করেন," সংবিধানে যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে, এই সরকারের চরিত্র তা নয়। ফলে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার দাবি করলে সেটা অন্যায় কিছু হবে না। এই সরকার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ সরকারের কেউ কেউ সরকারে থেকেই রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ করছে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ