অন্ধ্রপ্রদেশে দুইটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ধাক্কা, মৃত ১৩
৩০ অক্টোবর ২০২৩
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সন্ধ্যায় হাওড়া-চেন্নাই লাইনে অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানাগ্রাম জেলায়। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বিজ্ঞাপন
একটি যাত্রীবাহী ট্রেন বিখাশপত্তনম থেকে পালাসা যাচ্ছিল। সেই ট্রেনটি সিগন্যাল না পেয়ে আলামান্ডা ও কন্টকপাল্লা স্টেশনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় ভাইজ্যাগ-রায়গড় এক্সপ্রেস পিছন থেকে এসে তাকে ধাক্কা মারে। তিনটি কামরা লাইনচ্যূত হয়। এখনো পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জন। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনাস্থলের ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, কামরাগুলি মাটিতে পড়ে আছে। প্রচুর মানুষ সেখানে ভিড় করেছেন। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, রাতের মধ্যেই অন্য অক্ষত কামরাগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, মৃতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের আড়াই লাখ টাকা এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে।
কী করে এই দুর্ঘটনা?
একই লাইনে দুইটি ট্রেন কী করে ঢুকে পড়লো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টিভি৯ জানাচ্ছে, পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর তাদের ধারণা, মানুষের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি ট্রেনকে ভুল সিগন্যাল দেখানো হয়েছিল। আর সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি বলেছে, লোকো-পাইলটের চালক সিগন্যাল নজর করেননি। তাই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এই দুর্ঘটনার পর ২২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১৮টি ট্রেন ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের কাছে শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি আরো দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। আহতরা পাবেন আরো ৫০ হাজার টাকা।
দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ফোনে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডির সঙ্গে কথা বলেন। মুখ্যমনন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থলে মানুষকে সব ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহ ছবি
একসঙ্গে দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেন। দুইটি যাত্রীবাহী ও একটি মালগাড়ি। ভারতের ওড়িশায় এই ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একে অন্যের উপরে
কলকাতার শালিমার থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। আর বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথমে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস লাইনচ্যূত হয়। তারপর করমণ্ডল এক্সপ্রেসেরও একই দশা হয়। তারপর একটা মালগাড়ি ধাক্কা মারে। ট্রেনের কামরা, ইঞ্জিন একে অন্যের উপর উঠে যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলের চেহারা
একের পর এক কামরা উল্টে পড়ে আছে। কোনওটা পুরো উল্টে গেছে। লাইনের পাশে নয়ানজুলিতে পড়েছে কয়েকটি কামরা। সবমিলিয়ে ভয়ংকর অবস্থা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কামরার হাল
দুর্ঘটনার পর ট্রেনের কামরাগুলির এরকম অবস্থা হয়। কামরায় থাকা অনেক যাত্রী প্রাণ হারান। প্রচুর মানুষ আহত। অনেকের আঘাত গুরুতর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুধু মৃত্যুর ছবি
একের পর এক কামরা থেকে বের করা হচ্ছে মৃতদেহ। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৬১ জন মারা গেছেন। আহত ৬৫০ জন। অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী করে হলো?
রেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে তবেই বোঝা যাবে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার আগে কারণ বলা সম্ভব নয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
উল্টে গেছে কামরা
কিছু কামরা এভাবেই উল্টে গেছে। দুর্ঘটনাস্থলের ছবি ভয়ংকর। এখনো অনেকে ভিতরে আটকে আছেন বলে স্থানীয় মানুষ মনে করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিরল ঘটনা
তিনটি ট্রেনের এভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। সাধারণত একটি বা দুইটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। তিনটি ট্রেন কীভাবে দুর্ঘটনায় পড়লো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে রেল মন্ত্রণালয় এখন এই সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
উদ্ধারে সাধারণ মানুষ
আশপাশের সাধারণ মানুষই দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে হাত লাগান। তবে কামরাগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, তারা অনেক ক্ষেত্রে কিছু করতে পারেননি। তবে তারা বেশ কিছু আহতকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এনডিআরএফ নামে
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা ট্রেনের কামরা কেটে ভিতরে ঢোকে। ভিতর থেকে আহতদের বের করে আনে। বের করে আনে একের পর এক মৃতদেহ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাত্রী রবীন্দ্র সিং যা বললেন
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী রবীন্দ্র সিং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ট্রেন ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল। সন্ধ্যা প্রায় সাতটা নাগাদ মনে হলো, চালক এমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করেছেন। প্রচণ্ড শব্দ। যাত্রীরা সিট ও বার্থ থেকে ছিটকে পড়লেন। ট্রেন ঘষটে ঘষটে কিছুটা দূরে গেল। কোনোমতে বেরিয়ে দেখি বিশাল দুর্ঘটনা হয়েছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাত্রী অর্পিতার অভিজ্ঞতা
নবম শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা কলকাতায় ছুটি কাটাতে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন। ফিরে যাচ্ছিলেন চেন্নাই। ডয়চে ভেলেকে বললেন, ''হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা লাগলো। আমাদের কামরা লাইনের বাইরে চলে গেছিল। আমার গুরুতর আঘাত লাগেনি। বাইরে আসার পর স্থানীয় মানুষ আমাদের একটা বাড়িতে নিয়ে আসেন। সারা রাত বড় উদ্বেগে ও দুঃস্বপ্নে কাটিয়েছি।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাচ্ছেন মোদী, শাহ, মমতা
বালেশ্বর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে আছেন অমিত শাহ। তারাপ্রথমে দুর্ঘটনাস্থলে যাবেন। তারপর দেখা করবেন আহতদের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি রওনা হয়েছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ঘটনাস্থলে আছেন।
ছবি: Dibyangshu SARKAR/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
দিল্লিতে রেল মন্ত্রণালয়ে একটি ওয়ার রুম খোলা হয়েছে। ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে হেলপলাইন নম্বরের কথা জানিয়েছে। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সৌরভ প্রসাদ গতরাতেই ঘটনাস্থলে যান। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, সব কামরা ভালো করে দেখেই মৃতের সংখ্যা জানানো সম্ভব হবে। প্রথম কাজ হলো ইঞ্জিন থেকে কামরাকে আলাদা করা।