সব রোগীর জন্য একই ওষুধ বা চিকিৎসা যে কার্যকর হতে পারে না, চিকিৎসকরা তা বেশ কিছুকাল ধরেই জানেন৷ ভবিষ্যতে জিন থেরাপি কোনো রোগীর নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারবে৷ এমনকি হয়তো দৃষ্টিশক্তিও ফিরিয়ে দিতে পারবে৷
বিজ্ঞাপন
শহর হিসেবে বাসেল সবসময়ে ব্যস্ততায় ভরা৷ রয়েছে নানা রং ও বৈপরিত্য৷ আছে আলো-ছায়ার খেলা, নানা মাত্রা ও দৃষ্টিকোণ৷ চোখের মাধ্যমে আমরা সেই অনুভূতি বা স্বাদ গ্রহণ করি৷ কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারালে সেই জগতের জানালা বন্ধ হয়ে যায়৷ শহরের মলিকিউলার ও ক্লিনিকাল অপথালমোলজি ইনস্টিটিউট সেই জানালা আবার খুলে দেবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷
সেখানে চিকিৎসাবিদ্যার গবেষক বোটন্ড রস্কা অন্ধ মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবার নানা উপায় নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দৃষ্টিশক্তি কী তা বোঝা ও সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অন্ধত্বের রোগের চিকিৎসা সৃষ্টি করাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য৷’’
চোখের চিকিৎসায় জিন থেরাপি
03:18
চোখের বাইরের অংশের রূপ অসাধারণ হলেও দৃষ্টিশক্তির আসল বিস্ময় চোখের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে৷ আইবল বা নেত্রগোলকের পেছনে রেটিনা রয়েছে৷ প্রায় একশো ধরনের কোটি কোটি কোষ দিয়ে সেটি তৈরি৷ বোটন্ড রস্কার টিম অন্ধ মানুষের রেটিনার এমন কোষ সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন, যেগুলি আলো পড়লে আবার প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বোটন্ড রস্কা বলেন, ‘‘রেটিনা এক জৈব কম্পিউটার, যা প্রায় একশো উপাদান দিয়ে তৈরি৷ কম্পিউটার মেরামতি করা কঠিন কাজ৷ আমাদের শুধু কোনো ফটোরিসেপ্টর স্তর নয়, গোটা কম্পিউটার মেরামত করতে হবে৷ তাই আমাদের এই কম্পিউটারের অংশগুলি সম্পর্কে বুঝতে হবে এবং রোগীদের জন্য উপকারী পথ খুঁজতে হবে৷’’
মূল রেটিনার বিকল্প হিসেবে তথাকথিত রেটিনা-অরগ্যানয়েড কাজে লাগানো হচ্ছে৷ আংশিক অথবা পুরোপুরি অন্ধ রোগীর কোষ দিয়ে বিজ্ঞানীরা সেটা গড়ে তুলেছেন৷ মাইক্রোচিপের উপর সেটি রাখলে গবেষকরা আলোর সামনে এই অরগ্যানয়েডের প্রত্যেকটি কোষের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে পারেন৷ ফলে নির্দিষ্ট কোনো রোগীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জিন থেরাপি কাজে লাগবে কিনা গবেষণাগারেই তাঁরা সেটি বুঝতে পারেন৷ বোটন্ড রস্কা বলেন, ‘‘এর ফলে আমরা রোগ সম্পর্কে আরও জ্ঞান পাচ্ছি৷ রোগীর নির্দিষ্ট মিউটেশনের ভিত্তিতে আমরা জিন থেরাপি পরীক্ষা করতে পারি৷ চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন এক জগত৷ কারণ আমরা নির্দিষ্ট কোনো রোগীর রেটিনা নিয়ে কাজ করতে পারি৷’’
এই রোগী দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোপুরি হারিয়েছেন৷ তাঁর দুরারোগ্য রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা রোগ হয়েছে৷ এর ফলে রেটিনার ভিশুয়াল রিসেপ্টর বিকল হয়ে পড়ে৷ নতুন জিন থেরাপি আংশিকভাবে হলেও সেই রেটিনা আবার সক্রিয় করে তুলতে পারে৷
ফ্লোরিয়ান ফাই/এসবি
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে যা করবেন
আশেপাশের পরিবেশ থেকে শতকরা ৮০ ভাগ বিষয়ই মানুষ জানতে পারে তার চোখের মাধ্যমে৷ দুর্ভাগ্য হলেও এ কথা সত্য যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখও নানা অসুখে আক্রান্ত হয়, যা এড়াতে সময় মতো চোখের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷
ছবি: Fotolia
মুক্তবাতাস
শুধু ফুসফুস সুস্থ রাখতেই যে মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন তা নয়, চোখের কর্নিয়া জন্যও চাই মুক্তবাতাস৷ কারণ চোখ নিজস্ব অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না৷ বিশেষ করে যারা দিনের বেশিরভাগ সময় বদ্ধ ঘরে কাজ করেন, তাদের জন্য মুক্ত বাতাসে হাঁটা বেশি জরুরি৷ এ কথা জানান জার্মানির লাইপসিগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়েন্স ডাওজিনস্কি৷
ছবি: Colourbox
বই পড়তে চাই যথেষ্ট আলো
পড়াশোনার সময় যেন ঘরে যথেষ্ট আলো থাকে৷ কারণ আলো কম হলে চোখের পেশিগুলোতে অনেক বেশি চাপ পড়ে৷ এর ফলে অনেক সময় মাথা ব্যথা বা চোখে লালভাব বা চোখকে লাল দেখায়৷
ছবি: picture alliance / JOKER
যথেষ্ট পানি পান
চোখের নিজস্ব পানি সংবেদনশীল চোখকে বাইরের ধুলোবালি থেকে পরিষ্কার রাখতে ও চোখের অসুখ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে৷ তাই চোখের পানি বজায় রাখতে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন৷ অর্থাৎ এর জন্য দিনে কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করতে হবে৷ কারণ শুষ্ক চোখেই দেখা দেয় নানা সমস্যা৷
ছবি: Imago/Westend61
অতিরিক্ত সূর্যের তাপ থেকে দূরে থাকুন
সূর্যের অতি বেগুনিরশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই বেশি রোদে যাওয়ার সময় অবশ্যই ‘আলট্রা ভায়োলেট রে’ থেকে সুরক্ষা দেয়, এমন সানগ্লাস ব্যবহার করবেন৷ এতে চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকিও কমবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
গাজর রাতের অন্ধত্ব কমায়
শরীরে বিটা ক্যারোটিনের অভাব হলে রাতে মানুষ কম দেখে৷ তাই নিয়মিত গাজর খাবেন৷ কারণ গাজরে রয়েছে যথেষ্ট বিটা ক্যারোটিন৷ তবে হ্যাঁ, গাজর সামান্য তেল দিয়ে মেখে নিলে শরীর তা আরো সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে৷ দিনে অবশ্য মাঝারি সাইজের একটি গাজরই কিন্তু যথেষ্ট!
ছবি: Colourbox/M. Velychko
সবুজ সবজি
সবুজ সবজিতে থাকা লুটেইন চোখের অসুখকে দূরে রাখতে সাহায্য করে৷ বিশেষকরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের যেসব সমস্যা দেখা দেয়, তা থেকে৷ তবে প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম সবুজ সবজিই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
সামুদ্রিক মাছ
মাছের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ সোজা কথা, অল্প বয়সে চোখের স্বাস্থ্যে দিকে ভালোভাবে নজর দিলে পরে তার ফল অবশ্যই পাওয়া যায়৷ এক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই বা তিনদিন মাছ খাওয়া যেতে পারে৷
ছবি: DW/D. Kaniewski
চোখের মেকআপ
অনেকেই চোখ দু’টোকে আরো আকর্ষণীয় দেখাতে মেকআপ ব্যবহার করেন৷ তবে তারা অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই রূপচর্চার সামগ্রী যেন আপনার চোখের উপযুক্ত হয়৷ অর্থাৎ চোখের মেকআপে যেন সংরক্ষণকারী পদার্থ মেশানো না থাকে৷ কারণ রাসায়নিক পদার্থ থেকে চোখে নানারকম অ্যালার্জি এবং অন্যরকম ক্ষতিও হতে পারে৷