মঙ্গলবার জার্মানিতে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ দিবস পালিত হয়েছে৷ এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, জার্মানিকে বিভক্ত করতে ‘অন্যান্য প্রাচীর’ গড়ে উঠেছে৷
স্ত্রীর সঙ্গে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বিজ্ঞাপন
১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হয়েছিল৷ তার আগে ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতন হয়েছিল৷ সেই ঘটনার উল্লেখ করে জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে যে দেয়াল চলে গিয়েছিল তা আর নেই৷ তবে ২৪ সেপ্টেম্বর একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, অন্যান্য দেয়াল গড়ে উঠেছে৷ এই দেয়াল সহজে চোখে পড়ে না, সেখানে নেই কোনো কাঁটাতারের বেড়া৷ কিন্তু এই প্রাচীর ‘আমাদের’ পথে এসে দাঁড়িয়েছে৷’’ উল্লেখ্য, ২৪ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইসলাম ও শরণার্থীবিরোধী দল এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দল৷
Steinmeier warns of new walls
30:42
This browser does not support the video element.
জার্মান প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়ে তরুণ জার্মান ভোটারদের নিয়ে কথা বলেন, যাঁরা জন্মের পর থেকে শুধু একীভূত জার্মানি দেখেছে, বিভক্ত নয়৷ ‘‘আজ আমরা যা উদযাপন করছি তা সাধারণ - কিন্তু কোনোভাবেই তা সহজে পাওয়া যায়নি,’’ বলেন তিনি৷ তরুণ জার্মান, যারা বিভক্ত জার্মানি দেখেনি, তাদেরকে জার্মান প্রেসিডেন্ট ‘যাঁরা বিভক্ত জার্মানি দেখেছেন’ তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন৷
নতুন সংসদে এএফডির উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে স্টাইনমায়ার বলেন, ‘‘নয়দিন আগে যে জার্মান বুন্ডেসটাগ নির্বাচিত হয়েছে, তা অন্যরকম হবে৷ এটি (নির্বাচন) সমাজে বিভক্তি ও হতাশাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে৷’’ এখন যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করছে, তাতে পরিবর্তন আসবে উল্লেখ করে জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেন, এর সমাধান আসতে হবে গণতন্ত্রপন্থিদের কাছ থেকে, যারা গণতন্ত্র অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে নয়৷
১৯৯০ সালের পর কিছু ‘ভুল’ কাজ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ ‘‘পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্ব জার্মানরা যে ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে বসবাস করেছে, তা পশ্চিমে (জার্মানি) বসবাসকারী আমাদের প্রজন্মের ব্যক্তিরা কখনও জানতে পারেনি,’’ বলেন তিনি৷ সে কারণে দুই জার্মানির পরিস্থিতি এখনও ভিন্ন৷ পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব জার্মানিতে এএফডির বেশ ভালো ফল করার মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে৷
সংসদ নির্বাচনের আরেক আলোচিত বিষয় ‘অভিবাসন’ নিয়েও কথা বলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ তিনি নতুন নীতিমালা তৈরি করে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তি ও আর্থিক কারণে অভিবাসী হতে চাওয়াদের মধ্যে পার্থক্য করার আহ্বান জানান৷
জার্মান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সময় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট নোর্বার্ট লামার্ট উপস্থিত ছিলেন৷
ক্রিস্টিনা বুরাক, রেবেকা স্টাউডেনমায়ার/জেডএইচ
২০১৩ সালের নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
বিশ্ব ভ্রমণ: জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প
বার্লিন দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে৷ এর আয়োজক ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স৷
ছবি: Julian Röder
পুনরেকত্রীকরণের শিল্প
এই দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস এখানে উঠেছে ফুটে৷ ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে৷ এখানে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির আলোকচিত্রী সিবিলে ব্যার্গেমান সোভিয়েত ব্লক ভাঙার ক্রমিক চিত্র তুলে ধরেছেন৷
ছবি: Nachlass Sibylle Bergemann/Ostkreuz
গ্রাউন্ড জিরো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি৷ নাৎসিবাহিনীর অত্যাচারের চিত্রের পর আর কিছু কি দেয়ার থাকতে পারে? এ যেন ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে কনটেম্পোরারি আর্ট বা সমকালীন শিল্পের ইতিহাস শুরু৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn 2013
অসঙ্গতিপূর্ণ শিল্পের গোপন রহস্য
গ্যারহার্ড আল্টেনবুর্গ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ভিন্নধর্মী শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর কাজে কখনোই সামাজিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি৷ অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আল্টেনবুর্গ সৃষ্টি করেছিলেন গোপন কিছু করার৷ পুনরেকত্রীভূত জার্মানিতে এখন তাঁর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত৷ এমনকি বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদেও তাঁর চিত্রকর্ম ঝোলানো আছে৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst, Bonn 2013
পশ্চিমে বিমূর্ত ছবির প্রতি সমর্থন
পশ্চিম জার্মান চিত্রশিল্পী ব্যার্নার্ড শুলৎসের ছবিতে কাব্য যেমন আছে, তেমনি আছে একটা বিমূর্ত ধারণা৷ আইএফএ জানিয়েছে, আল্টেনবুর্গের মধ্যেও একই ধরণের শৈল্পিক চিন্তাভাবনা কাজ করেছে৷ ১৯৫৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কনটেম্পোরারি প্রদর্শনীতে তাঁদের দু’জনের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পূর্ব জার্মানির ফটোগ্রাফিতে স্বাধীনতা
গত ৬০ বছরের ফটোগ্রাফিতে পুরো জার্মানির যে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে, তা হোল স্বাধীন আর্ট ফর্ম৷ তৎকালীন পূর্ব বার্লিনের ফটোগ্রাফার আর্নো ফিশার ১৯৫৭ সালে এই রাস্তার ছবিটি তুলেছিলেন৷ ফিশারের ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং মানুষের অস্তিত্ব বোঝানোর আগ্রহই তাঁর শিল্পকর্মে বেশি লক্ষ্যণীয়৷
ছবি: Bernd Borchardt/Erbengemeinschaft Arno Fischer
উত্তেজনামুলক নয়, পার্থিব
ফটোগ্রাফার সারগেসহাইমার অনেকটা আর্নো ফিশারের মতো, যা দেখেন তারই ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ সারগেসহাইমারের আসল নাম কার্ল-হাইনৎস হার্গেসহাইমার৷ তিনি যতটা না উত্তেজনামূলক বিষয়বস্তুর ছবি তুলতে ভালোবাসতেন, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন পার্থিব কোনো কিছুর ছবি তুলতে৷
ছবি: Chargesheimer
পূর্বের জ্যামিতিক শিল্প
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর আইএফএ জিডিআর শিল্পীদের শিল্পকর্মকে সমর্থন দেয়৷ হ্যার্মান গ্ল্যোকনারও তাঁদের মধ্যে একজন৷ এখানে দেখা যাচ্ছে দেয়ালের যে পাশে যে শিল্পীদের বসবাস, তাঁদের কাজের মধ্যে সম্পর্ক৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পশ্চিমের জ্যামিতিক শিল্প
দ্বিমাত্রিক রং, ছন্দময় ভঙ্গি: সাবেক পশ্চিম জার্মানির অংশ মিউনিখ শহরের গ্রাফিক শিল্পী গ্যুন্টার ফ্রুট্রুংকের কাজের ধরণটা একেবারেই অন্যরকম৷ তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি হলো জার্মানির বিখ্যাত স্বল্প মূল্যের বিপণি আল্ডি-র প্লাস্টিক ব্যাগ৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
গতানুগতিক শিল্পের বিরুদ্ধে
ইওসেফ বয়েসের এই চিত্রকর্মটির নাম ‘আই ডু নট নো আ উইকএন্ড’৷ ১৯৬০ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে তিনি দর্শকদের তাঁর ঘণ্টাব্যাপী ‘পারফর্মেন্স’ দিয়ে প্ররোচিত করেছিলেন৷ তাঁর মতো করে পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ নিয়ে এমন কাজ করার মতো সাহস কোনো পূর্ব জার্মান শিল্পী দেখাননি৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী
অনেক বছর আগে যখন নারীর সম অধিকারের বিষয়টি এত ব্যাপক ছিল না, তখন নারী শিল্পীদের সুযোগ দিয়েছিল আইএফএ৷ ৭০-এর দশকে নারী বিপ্লবীদের পাশাপাশি ভূমিকা রেখেছিলেন নারী শিল্পীরাও৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাথারিনা ফ্রিচ৷
ছবি: Copyright: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ড্রেসডেনে ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফি
পূর্ব বা পশ্চিম? স্টেশন সিরিজের কয়েকটি ছবির একটি এই ছবিটি৷ ছবিটি ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেটি বার্ন এবং হিয়া বেশারের তৈরি৷ তাঁরা দু’জন শিল্পকারখানার চুল্লির উপর ফটোগ্রাফির জন্য সুপরিচিত৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ফটো সাংবাদিকতার চেয়েও বেশি কিছু
প্রথম দেখায় এটি শুধু ২০০১ সালে ইটালিতে অনুষ্ঠিত জি-এইট সম্মেলনের বিক্ষোভের ছবি ছাড়া কিছুই নয়৷ কিন্তু ভালোভাবে দেখলে এটায় একটা নতুন ধরণ চোখে পড়বে, জানান আইএফএ-র কিউরেটর ভিনজেন৷ ফটো সাংবাদিক জুলিয়ান ব়্যোডার এই কিউরেটরের নতুন আবিষ্কার৷