1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরণোত্তর অঙ্গদান

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মরণোত্তর অঙ্গদানের সুফল জানতে তাকাতে হবে প্রাপকের জীবনযাত্রার দিকে৷ সুস্থ শরীরে খেলাধুলা করে হেসে-খেলে সে দিব্যি বেঁচে থাকলে তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে!

ছবি: Besim Mazhiqi

এলমার স্প্রিংক-এর শখ ছিল সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, জগিং করা৷ খেলাধুলাই এলমার-এর সবকিছু৷ কিন্তু আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে গেলো৷ জানা গেলো, হৃদযন্ত্রটি বেশ দুর্বল৷ বাঁচতে হলে চাই নতুন হৃদযন্ত্র৷ তারপর বিশেষ হাসপাতালে অপেক্ষার পালা৷ কে দান করবে হৃদযন্ত্র? এদিকে শরীরের অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে৷

সেই ভয়ংকর সময়ের দিকে ফিরে তাকালে এলমার বলেন, ‘‘এখন ফিরে তাকালে ভাবা যায় না, কীভাবে সব হলো৷ আমি সব সময় বলতাম, মরতে হলে হাসতে হাসতে মরবো৷ এ অবস্থায় অন্য কিছুই মানায় না৷ তখন সবাই আমাকে আশা দিচ্ছিল৷ বলছিল, একদিন সঠিক হৃদযন্ত্র পাওয়া যাবে৷ কবে, তা কেউ জানতো না৷ দু'মাস লাগতে পারে, ছয় মাসও লাগতে পারে৷ তবে একবার অপারেশন হলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ বা ৯৮ শতাংশ৷ শুনে মনে হলো, আমিও হয়ত পারবো৷ তারপর আমার শরীর সেই নতুন অঙ্গ মেনে নেবে কি না, সেটা দেখতে হবে৷''

জার্মানিতে অঙ্গদান করতে চাইলে সঙ্গে রাখতে হয় এই কার্ডছবি: Getty Images

প্রায় ১৮০ দিন শয্যাশায়ী থেকে অবশেষে এলমার নতুন হৃদযন্ত্র পেলেন৷ পেলেন এক নতুন জীবন৷ প্রায় ১০ মাস আগে নিজের বাসায় ফিরে গেছেন৷ ফিরেই কয়েক দিন পর শুরু হয়ে গেছে খেলাধুলা৷ স্ত্রী কারিন বলেন, ‘‘আসল কথা হলো, এলমার যাতে তার পুরনো জীবন ফিরে পায়৷ সে খেলাধুলা করতে খুব ভালোবাসে৷ সেটাই তার চরিত্র৷ আমার মনে হয়, সেটা আবার করতে পারলেই সে খুব আনন্দ পাবে৷''

সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা – সারা জীবন ধরে এলমার-কে ইমিউন সাপ্রেসিভ ড্রাগ খেতে হবে৷ শরীর যাতে নতুন অঙ্গ বাতিল না করে দেয়, তার জন্যই এই ট্যাবলেট৷ তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগের জীবনে এলমার কোনোদিনই ফেরত যেতে পারবেন না৷ এলমার বলেন, ‘‘যেমন অনেকক্ষণ বসে থাকলে বুকে, বুকের কাটা অংশে সমস্যা হয়৷ এটা একেবারেই ভালো নয়৷ শরীরের উপর চাপ এলে সমস্যা নেই৷ কিন্তু মন-মেজাজের উপর চাপ এলেই মুশকিল৷ আগের মতো আর সামলাতে পারি না৷ স্ট্রেস হলেই আজকাল সেটা বুঝতে পারি৷ ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটি হলেও তা সহজে মেনে নিতে পারি না৷''

মাসে তিন বার এলমার-কে হার্ট স্পেশালিস্টের কাছে ছুটতে হয়৷ তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, শরীর নতুন অঙ্গকে কতটা মেনে নিয়েছে, শরীরের স্ট্যামিনা বা শক্তি কতটা বাড়ছে৷ কার্ডিয়োলজিস্ট ক্রিস্টিয়ান শ্নাইডার বলেন, ‘‘আমার অনেক পেশেন্ট রয়েছে, যাদের বয়স এলমার-এর চেয়ে অনেক কম৷ এলমার যা পারছে, তারাও সেটা পারে না৷ সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত কোলোন ক্যাথিড্র্যালের উপরে ওঠার মতো ক্ষমতা এখন তার আছে৷ অথচ আগে সে দোতলায়ই উঠতে পারতো না৷''

হৃদযন্ত্রও অন্যের শরীরে কাজ করতে পারেছবি: picture-alliance/dpa

এলমার-এর ভাগ্য ভালো ছিল৷ কারণ জার্মানিতে মৃত্যুর পর অঙ্গদান করার লোক কমে চলেছে৷ ফলে অঙ্গদানও আর তেমন হচ্ছে না৷ ডা. শ্নাইডার বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, অনেক মানুষই নিজেদের মৃত্যু নিয়ে ভাবতে প্রস্তুত নয়৷ এমনকি রোগব্যাধি নিয়েও নয়৷ মৃত্যুর সময়টা কেমন হয়, আমার ক্ষেত্রে সেটা কেমন হবে – শেষের দিনগুলি সম্পর্কে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলি চাপা থাকে৷ তারা বলে, ‘‘মৃত্যু তো বয়স্ক লোকেদের ব্যাপার৷ আমার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই৷ মৃত্যুর পর আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কী হবে, তা নিয়ে তো ভাবতেই চাই না৷'' উল্লেখ্য, প্রয়োজনীয় অঙ্গের অভাবে শুধু গত বছরই জার্মানিতে ১,০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷

এলমার এই অবস্থা বদলাতে চান৷ বন্ধুদের সাথে তিনি মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে প্রচার চালাতে চান৷ খেলাধুলাই সেই কাজে সাহায্য করতে পারে৷ এলমার বলতে চান, ‘‘তোমরা দেখো, অন্যের থেকে পাওয়া অঙ্গ নিয়েও কী ভালোভাবে বাঁচা যায়৷'' আজ এলমার ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে পারেন৷ এলমার স্প্রিংক বলেন, ‘‘মনে হয়, যিনি আমাকে অঙ্গ দিয়েছেন, তিনি যেন আমাকে দেখতে পাচ্ছেন৷ আমি চাই, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, ভালো থাকুন৷ তাঁকে চিনি না বটে, কিন্তু বার বার আমার মন ছুঁয়ে যান তিনি৷ প্রতিটি দিনই তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি৷ খেলাধুলা করলেই সেটা আমার মনে হয়৷''

থামার পাত্র নন এলমার৷ ম্যারাথনের পর সাইকেল-রেস, ট্রায়াথলন ও পাহাড়ে চড়ার তোড়জোড় করছেন তিনি৷ তাঁর নতুন এই জীবন সবে এক বছর পূ্র্ণ হয়েছে৷

এসবি/ডিজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ