পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি? কল্পবিজ্ঞান কাহিনি ও চলচ্চিত্রে অন্য গ্রহের প্রাণী নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে৷ আমাদের সৌরজগত ও দূরের নক্ষত্র জগতের কিছু অংশে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহ কি মানুষের বসবাসের যোগ্য? আমাদের এই পৃথিবীতে অবিশ্বাস্য জীববৈচিত্র্য দেখা যায়, যা জীবন সম্পর্কে আমাদের ধ্যানধারণা গড়ে তুলেছে৷ উন্নতি, বিকাশ ও এগিয়ে চলার জন্য কী প্রয়োজন, সেই উপলব্ধিও আমাদের মনে জন্মায়৷
প্রাণের স্পন্দনের জন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যের প্রয়োজন৷ সূর্যের উত্তাপের অপরিবর্তিত মাত্রা লাখ লাখ বছর ধরে স্থিতিশীল এক পরিবেশ নিশ্চিত করেছে৷ তাছাড়া পৃথিবী নির্দিষ্ট এক দূরত্ব বজায় রেখে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে৷ সেই স্থিতিশীল উত্তাপের কারণে পৃথিবীর উপরিভাগে সব সময়ে তরল পানি পাওয়া যায়৷ আমাদের জ্ঞান অনুযায়ী পানিই প্রাণ সৃষ্টির পূর্বশর্ত৷
কোনো নক্ষত্রের কাছে নির্দিষ্ট একটি দূরত্ব পর্যন্ত এলাকায় কোনো গ্রহে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে৷ আমাদের পৃথিবী সেই সীমানার ভিতর দিকে থাকলে পানি গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হতো৷ অন্যদিকে সীমানার বাইরের দিকে গেলে সব পানি বরফ হয়ে উঠতো৷
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরের নক্ষত্রজগতে ৪,১০০-রও বেশি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন৷ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রেরও একটি গ্রহ রয়েছে৷ সেটিও এমন দূরত্বে নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করছে, যে কাগজেকলমে সেখানেও প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব৷ এমনকি গ্রহের যে অংশ নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, সেখানে তরল পানিও থাকতে পারে৷ ‘টি গার্ডেন বি' প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাময় গ্রহের তালিকার উপর দিকে রয়েছে৷ আয়তন ও উপরিভাগের তাপমাত্রার বিচারে সেটির সঙ্গে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে৷ ‘ট্রাপিস্ট ওয়ান'-এর মতো এমন সৌরজগতেরও খোঁজ পাওয়া গেছে, যেখানে পাঁচ-পাঁচটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে৷
মহাকাশ নিয়ে ইউরোপের পরিকল্পনা
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা আগামী দশকে মহাকাশে কী করবে সেই পরিকল্পনা ইতিমধ্যে করে ফেলেছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Gambarini
পৃথিবীকে ভালোভাবে দেখা
বিশ্বে এমন অনেক পরিবর্তন হয়, যার সম্পর্কে ভূমি থেকে তেমন ধারণা পাওয়া যায় না৷ কিন্তু মহাকাশ থেকে দেখলে ভালোভাবে পরিবর্তনটি বোঝা যায়৷ যেমন, সাগরে পিএইচ-এর পরিমাণ কমে যাওয়া, দাবানলের প্রসার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব ইত্যাদি৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, এসা আগামী দশকে মহাকাশে গিয়ে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
নতুন প্রজন্মের তারহীন যোগাযোগ
এসা আকাশে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাইছে৷ ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি এটি ব্যবহৃত হবে বলে দাবি করছে সংস্থাটি৷ তারা বলছে, এটি হবে নতুন প্রজন্মের তারহীন যোগাযোগ, যেখানে সবকিছু, সব জায়গায়, সবসময় যুক্ত থাকবে৷ এটি ভালো হবে, নাকি আশঙ্কার, সেই সিদ্ধান্ত আপনার৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/O. Maksymenko
মহাকাশ পরিষ্কার
১৯৫৭ সালে মহাকাশে ভ্রমণ শুরু হয়েছিল৷ সেই থেকে মহাকাশে অনেক স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে, যার একটি অংশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো ফিরিয়ে আনা হয়নি৷ ফলে বর্তমানে আমাদের পৃথিবীর চারপাশে ৩৪ হাজারের বেশি পদার্থ ঘোরাফেরা করছে, যেগুলোর ব্যাস ১০ সেন্টিমিটারের বেশি৷ এসা একটি সক্রিয় মিশনের মাধ্যমে কিছু পদার্থ সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: ESA
চাঁদের কাছে স্পেস স্টেশন
আগামী দশকে গেটওয়ে নামে একটি স্পেস স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে এসা৷ সেটি চাঁদের চারপাশে ঘুরবে৷ ফলে আরও ভালোভাবে চাঁদ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা সম্ভব হবে৷ এছাড়া মহাকাশের আরো গভীরে যাওয়ার জন্য গেটওয়ে থেকে যাত্রা শুরু করতে পারবেন নভচারীরা৷ এদিকে, ২০২২ সালে বৃহস্পতি গ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে জুস নামের একটি মহাকাশযান৷
ছবি: ESA
গ্রহাণুপুঞ্জের পথ পরিবর্তন
অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণুপুঞ্জের পথ পরিবর্তন করা সম্ভব কিনা তা জানতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা একটি মিশন পরিচালনা করবে৷ এক্ষেত্রে ডিডুমস অ্যাস্টেরয়েড ও তার চাঁদ ডিডিমুনকে বেছে নেয়া হয়েছে৷ নাসা প্রথমে ডিডিমুনের দিকে সেকেন্ডে ছয় কিলোমিটার বেগে ডিএআরটি নামের একটি প্রোব ছুড়ে মারবে৷ এরপর এসার এইচইআরএ মিশন এই সংঘর্ষের প্রভাব বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA
লঞ্চ ভেহিকল ও স্পেসপ্লেন
২০২০ সালের শেষ নাগাদ লঞ্চ ভেহিকল ‘আরিয়ান ৬’ কাজ শুরু করবে৷ আর ‘স্পেস রাইডার’ নামের একটি চালকহীন স্পেসপ্লেন ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করার কথা৷
ছবি: ESA
গন্তব্য চাঁদ
আগামী দশকে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় নভচারীদের চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা হচ্ছে৷ এছাড়া এসার সব নভচারী দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশে যাবেন৷ নাসার পাশাপাশি এসার নভচারীরা মঙ্গলেও যাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Gambarini
7 ছবি1 | 7
আমাদের সৌরজগতেও এমন সম্ভাবনাময় জগত রয়েছে৷ যেমন বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বরফে ঢাকা চাঁদ৷ সূর্য থেকে সেগুলির দূরত্ব প্রাণের সম্ভাবনার জন্য উপযুক্ত না হলেও সেগুলির মাটির নীচে মহাসাগর রয়েছে৷ সেখানে বরফের স্তরের নীচে প্রাণের স্পন্দন সম্ভব৷